আকস্মিক সফরে পাকিস্তানে গেলেন নরেন্দ্র মোদীডেস্ক নিউজ :: আকস্মিক এক সফরে পাকিস্তানে গেলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ২০০৪ সালের পর পাকিস্তানে এটাই প্রথম কোনো ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সফর। শুক্রবার দুই দিনের রাশিয়া সফর শেষে আফগানিস্তানের কাবুল হয়ে দিল্লি ফেরার পথে দুই ঘণ্টার জন্য লাহোরে যান তিনি। ওইদিন ছিল পাকিস্তানের প্রধনামন্ত্রী নওয়াজ শরিফের জন্মদিন। নওয়াজ শরিফের জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানাতে হঠাত্ লাহোর সফরে গিয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছেন মোদী।
লাহোর বিমানবন্দরে তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান নওয়াজ শরিফ। বিমানবন্দরে দুই প্রধানমন্ত্রী কোলাকুলি করেন। এরপর নওয়াজ শরিফ মোদীকে নিয়ে যান তার নিকটবর্তী বাসভবনে। সেখানে দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে দুই ঘণ্টার একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তবে তাদের বৈঠকে কোন কোন ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে সে ব্যাপারে বিস্তারিত কোনো পক্ষই প্রকাশ করেনি। পরমাণু শক্তিধর দুই প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তান সম্প্রতি তাদের সম্পর্ক উষ্ণ করার যে চেষ্টা চালাচ্ছে, এই সফরকে বলা যেতে পারে সেই প্রচেষ্টার সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ। নরেন্দ্র মোদীর এই ‘জন্মদিন কূটনীতি বা বার্থ ডে ডিপ্লোমেসিকে’ স্বাগত জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। পাকিস্তানের বিরোধী দলগুলোও মোদীর এই সফরকে স্বাগত জানিয়েছে। কিন্তু কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মুম্বাইতে সন্ত্রাসী হামলার পর দুই দেশের মধ্যে সন্দেহ আর অবিশ্বাস যে রকম চরমে পৌঁছেছিল, সেখানে পারস্পরিক আস্থা ফিরিয়ে আনা সহজ হবে না। খবর :টাইমস অব ইন্ডিয়া ও বিবিসির।

আফগানিস্তানের কাবুল থেকে ফেরার সময় লাহোরে নামার এই কর্মসূচির কথা মোদী প্রথম ঘোষণা করেন মাইক্রোব্লগিং সাইট টুইটারে। বিভিন্ন সূত্র বলছে, ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী যে হঠাত্ পাকিস্তানে যাবেন, এ বিষয়টি তার ঘনিষ্ঠজনদেরও নাকি অজানা ছিল। ভারতের কর্মকর্তারা বলছেন, ফোনে নওয়াজ শরিফের সঙ্গে কথা বলার পর শেষ মুহূর্তে এসে লাহোরে নামার সিদ্ধান্ত নেন মোদী। আর পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র সচিব আইজাজ চৌধুরী মোদীর সফরকে শুভেচ্ছা সফর বলে উল্লেখ করেছেন।

তিনি বলেছেন, দুই পক্ষই একে অপরের সমস্যা আপত্তির বিষয়টি বুঝতে এবং ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে সংলাপ চালুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত বছর ক্ষমতায় আসার পর মোদী এর আগেও পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা-সাক্ষাত্ করেছেন। সর্বশেষ গত প্যারিসে অনুষ্ঠিত জলবায়ু সম্মেলনের সাইডলাইনে অল্প সময়ের জন্য বৈঠকে বসেছিলেন দুই প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু পাকিস্তানের মাটিতে এটাই তার প্রথম সফর। উল্লেখ্য, ১৫ জানুয়ারি ইসলামাবাদে দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

পাকিস্তান সফরের বিষয়ে কয়েকটি টুইট করেন নরেন্দ্র মোদী। এক টুইট বার্তায় তিনি বলেন, ‘নওয়াজ পরিবারের বাসভবনে একটি উষ্ণ সন্ধ্যা অতিবাহিত করলাম। নওয়াজ শরিফের জন্মদিন ও তার নাতনির বিয়ে দ্বিগুণ উত্সবের পরিবেশ তৈরি করেছিল।’ আরেক টুইটে মোদী বলেন, অটল বিহারী বাজপেয়ির প্রতি নওয়াজ শরিফের ভালোবাসা আমাকে খুবই স্পর্শ করেছে। অপর এক টুইটে তিনি বলেন, লাহোর বিমানবন্দরে নওয়াজ শরিফের অভ্যর্থনা ও আন্তরিকতাপূর্ণ বিদায় আমাকে ব্যক্তিগতভাবে স্পর্শ করেছে।

মোদীর এই সফরকে নতুন ধরনের কূটনীতির উদ্ভাবন বলে জানিয়েছেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং। তিনি বলেন, আমরা মনে করি প্রথম পদক্ষেপ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিয়েছেন। অবশ্যই আমাদের প্রতিবেশীর সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকা উচিত। তবে নরেন্দ্র মোদীর আকস্মিক পাকিস্তান সফর নিয়ে কংগ্রেসসহ বিরোধীরা সমালোচনায় সরব হয়েছে। অন্যদিকে, পাকিস্তানের বিরোধী দলগুলো মোদীর সফরকে স্বাগত জানিয়েছে। বিরোধী দলগুলোর বক্তব্য, মোদীর সফর দুই দেশের সম্পর্কের নতুন সূচনা এবং দুই প্রতিবেশীর সম্পর্কের উন্নতির ক্ষেত্রে সহায়ক হবে। পাকিস্তানের পার্লামেন্টে বিরোধী দলনেতা সৈয়দ খুরশিদ শাহ বলেন, তাঁর দল পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) এই সফরকে স্বাগত জানাচ্ছে। পিপিপি-র চেয়ারপার্সন বিলাওয়াল ভুট্টোও টুইটারে মোদীর সফরের প্রশংসা করেছেন। পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইন্সাফ পার্টির নেতা ইমরান খানও বলেছেন, মোদীর এই সফর দুই দেশের সম্পর্কের উন্নতি ঘটাবে।

অন্যদিকে নরেন্দ্র মোদীর সফরকে স্বাগত জানিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছে, এর মাধ্যমে দুই দেশের সম্পর্কের উন্নয়ন হবে যাতে সমগ্র অঞ্চলই লাভবান হবে। মার্কিন গণমাধ্যমেও মোদীর সফরের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা দেখা গেছে। সিএনএন এর প্রতিবেদনে এই সফরকে তাত্পর্যপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

নওয়াজ শরিফের মাকে কদমবুসি  মোদীর : আকস্মিক সফরে পাকিস্তান গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের মাকে কদমবুসি করলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। লাহোরে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন রাইউইন্ডে তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করার সময় মোদী এই সম্মান প্রদর্শন করেন বলে জানিয়েছে ভারতের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা পিটিআই।

পিটিআই জানিয়েছে, শুক্রবার বিকেলে আকস্মিক সফরে লাহোরে পৌঁছান মোদী। সেখানে তাঁকে স্বাগত জানান প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ ও তাঁর ছোট ভাই এবং পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। এ সময় মোদীকে লালগালিচা সংবর্ধনা দেয়া হয়। পরে হেলিকপ্টারে করে নওয়াজের বাড়ি রাইউইন্ডে যান দুই নেতা। নওয়াজের পরিবার এ সময় মোদীকে উষ্ণ আতিথেয়তা দেয়। মোদীকে খেতে দেয়া হয় তাঁর প্রিয় খাবার ‘শাক’ এবং নানা রকম পদের নিরামিষ খাবার। সঙ্গে কাশ্মীরি চা। মোদীর সরফরসঙ্গী ছিলেন ১১ সদস্যের ভারতীয় একটি প্রতিনিধিদল।

দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের সময় নওয়াজের মা মোদীর সঙ্গে দেখা করতে আসেন। এ সময় মোদী তাঁর পা ছুঁয়ে সালাম করে সম্মান জানান।

বৈরিতা কমবে কিনা সন্দিহান বিশ্লেষকরা : ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর অঘোষিত এবং অপ্রত্যাশিত পাকিস্তান সফর সবাইকে চমকে দিলেও তাতে দুই দেশের বৈরিতা কমবে কিনা এ নিয়ে এখনো সন্দিহান কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা। পাকিস্তানের ‘দ্য ডন’ পত্রিকার সম্পাদক আশাহার রেহমান বলেন, এই ধরনের বৈঠক ১১ বছর পর হয়েছে। আমরা আশা করছি এই সফর থেকে হয়তো বরফ গলতে শুরু করবে। তিনি বিবিসিকে বলেন ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যে ধরনের সমস্যা রয়েছে সেটি শুধু দুই প্রধানমন্ত্রী বৈঠক করে সমাধান করতে পারবেন না। কারণ উভয় প্রধানমন্ত্রীর উপর তাদের নিজের দেশের ভেতরে নানাভাবে চাপ রয়েছে।

দুটি দেশের মধ্যে অবিশ্বাসের একটি বড় কারণ আফগানিস্তান। লাহোরে যাবার আগে কাবুলে দেয়া এক ভাষণে নরেন্দ্র মোদী আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য পাকিস্তানকেই দোষারোপ করেছেন। মোদী কাবুলে ভারতীয় সহায়তায় তৈরি এক নতুন পার্লামেন্ট ভবন উদ্বোধন করে এসেছেন। আফগানিস্তানে আরো বহু অবকাঠামো প্রকল্পে বিপুল সহায়তা দিচ্ছে ভারত। তবে পাকিস্তান এ বিষয়টি মোটেই সুনজরে দেখছে না। এই বৈঠকের মধ্য দিয়ে দুই বৈরী প্রতিবেশী অন্তত আলোচনার পথে ফিরে আসবে বলে মনে করেন ডন সম্পাদক আশাহার রেহমান।

আনন্দবাজার পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর মোদীর সঙ্গে নওয়াজের এই নিয়ে ছয়বার বৈঠক হল। প্রশ্ন হচ্ছে, এত ঘন ঘন নওয়াজের সঙ্গে বৈঠক করে সত্যি সত্যি কি কোনো লাভ আছে?

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here