ঢাকা: ২৩ জুন সোমবার, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৬৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ১৯৪৯ সালের এই দিনে প্রতিষ্ঠিত দলটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধসহ প্রতিটি গণতান্ত্রিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে এদেশের গণমানুষের সংগঠনে পরিণত হয়। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এ দলটিকে দেশের অন্যতম প্রাচীন সংগঠন হিসাবে আখ্যায়িত করে বলেন, ভাষা, স্বাধিকার, গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা অর্জনে মহোত্তম গৌরবে অভিষিক্ত আওয়ামী লীগের সাত দশকের অভিযাত্রায় শান্তি, সমৃদ্ধি ও দিন বদলের লক্ষ্যে অবিচল এ দলটি বাঙালি জাতির মুক্তির দিশারী। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের অর্জন পাকিস্তান আমলের গণতান্ত্রিক মানুষের অর্জন, এ দলের অর্জন বাংলাদেশের অর্জন। তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগ কখনো মানুষকে ভ্রান্ত আশ্বাস দেয় না। জাতির জন্য যখন যা প্রয়োজন মনে করেছে, সেটি বাস্তবায়ন করেছে।
এ দলকে মূল্যায়ন করে ইতিহাসবিদ, লেখক ও লোক সাহিত্যিক শামসুজ্জামান খান বলেন, আওয়ামী লীগ কোন ক্ষুদ্র উচ্চাভিলাসী গোষ্ঠীর কোন অশুভ শক্তির সঙ্গে স্বার্থগত আঁতাত বা রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটেপুটে খাওয়ার উদ্দেশ্যে অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের নিয়ে গড়ে ওঠা তথাকথিত রাজনৈতিক দল নয়। তিনি বলেন, কোন ক্ষমতালোভী সামরিক নেতা বা একনায়কের বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাকে ব্যবহার করে অবৈধ পন্থা ও কূট চক্রান্তের মাধ্যমে সামরিক ছাউনিতে জন্ম নেয়া রাজনৈতিক দলের নামের আড়ালে একটি গণবিরোধী চক্রও আওয়ামীলীগ নয়।
শামসুজ্জামান খান বলেন, আওয়ামী লীগ পাকিস্তান নামের অবৈজ্ঞানিক এবং ভৌগোলিক ও নৃতাত্ত্বিকভাবে এক উদ্ভট রাষ্ট্রের পূর্ব বাংলার বাঙালি জনগোষ্ঠী ও অন্যান্য ক্ষুদ্র জাতিসত্তাকে অবজ্ঞায়, অবহেলায় ও ঔপনিবেশিক কায়দায় শোষণ-পীড়ন-দমন ও দাবিয়ে রাখার বিরুদ্ধে লাগাতার প্রতিবাদ, প্রতিরোধ এবং গণসংগ্রামের মধ্যদিয়ে গড়ে ওঠা বিপুল জনপ্রিয় একটি রাজনৈতিক দল। এ দলের নেতা-কর্মীদের ত্যাগ-তিতিক্ষা ও অঙ্গীকারদীপ্ত সংগ্রামী ভূমিকা ইতিহাসবিদিত বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ইতিহাস, ঐতিহ্য ও গৌরবসমৃদ্ধ আওয়ামী লীগের ৬৫তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী জাকজমক ও বর্ণিলভাবে পালন করবে দলটি। আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উৎযাপন উপলক্ষে গঠিত ব্যবস্থাপনা ও সমন্বয় উপকমিটির আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, প্রতিষ্ঠা বাষির্কী পালন উপলক্ষে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ৫২ সাল থেকে আওয়ামী লীগের ঐতিহাসিক অর্জন বিশেষ করে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীনতা অর্জনসহ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১০ বছর ৬ মাসের যে অভূত অর্জন সাধিত হয়েছে তা সারাদেশে বিলবোর্ড, পোষ্টার, এবং প্রচার মাধ্যমে তুলে ধরা হবে।
মোশাররফ হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১০ বছর ৬ মাস শাসন আমলেই বাংলাদেশের উন্নয়ন সবচেয়ে বেশি হয়েছে। এই উন্নয়ন আমরা দেশবাসীর কাছে তুলে ধরবো। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি সর্ম্পকে তিনি বলেন, নির্ধরিত কর্মসূচি ছাড়াও প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে হাতিরঝীলে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জমান নূরের নেতৃত্বে একটানা চার দিন কনসার্ট অনুষ্ঠিত হবে। আগামী ২৮ তারিখ আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে শেষ হবে প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর কর্মসূচি।
প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন ব্যবস্থাপনা ও সমন্বয় উপকমিটির সদস্য সচিব এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বাসসকে জানান প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা মহানগরীসহ সারা দেশের সব জেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিলবোর্ড, ব্যানার, ফস্টুন লাগানো হবে। এসব ব্যানার, ফেস্টুনে দলটির ৬৫ বছরের ইতিহাস, ঐতিহ্য, গৌরবময় কর্মকান্ড তুলে ধরা হবে।

কর্মসূচি
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সূর্য উঠার সাথে সাথে দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন, পায়রা উন্মুক্ত ও বেলুন উড়ানোএবং বিকাল তিনটায় বর্নাঢ্য শোভাযাত্রা।এটি ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিখা চিরন্তনের পাদদেশ থেকে বের হয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি বিজড়িত ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কস্থ বঙ্গবন্ধু ভবন গিয়ে শেষ হবে।
এছাড়াও প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আগামী ২৮ জুন বিকাল ৩টায় বঙ্গবন্ধু আর্ন্তজাতিক সন্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন দলটির সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পুরনো ঢাকার ঐতিহ্যবাহী রোজ গার্ডেনে আওয়ামী মুসলিম লীগ নামে এই দলের আত্মপ্রকাশ ঘটলেও পরে শুধু আওয়ামী লীগ নাম নিয়ে অসাম্প্রদায়িক সংগঠন হিসেবে বিকাশ লাভ করে। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এ দেশে পাকিস্তানি সামরিক শাসন, জুলুম, অত্যাচার-নির্যাতন ও শোষণের বিরুদ্ধে সকল আন্দোলন-সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে এ দলটি।
’৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ’৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, আইয়ুবের সামরিক শাসন-বিরোধী আন্দোলন, ’৬৪-এর দাঙ্গার পর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা, ’৬৬-এর ছয় দফা আন্দোলন ও ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের পথ বেয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের ২৪ বছরের আপোষহীন সংগ্রাম-লড়াই এবং ১৯৭১ সালের নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধ তথা সশস্ত্র জনযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ওই বছরের ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের মধ্যদিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় বাঙালির হাজার বছরের লালিত স্বপ্নের ফসল স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।
দীর্ঘ একুশ বছর লড়াই সংগ্রামের মাধ্যমে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জয়ী হয়ে ২৩ জুন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরে আসে। ২০০১ এবং ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারির পর আর এক দফা বিপর্যয় কাটিয়ে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনে তিন-চতুর্থাংশ আসনে বিজয়ী হয়ে আবারো রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পায় এই দলটি। পরবর্তীতে ২০১৪ সালের ৫ জানুযারীর সাধারন নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ৩য়বারের মত সরকার গঠন করে সাফল্যের সাথে বর্তমানে ক্ষমতায় রয়েছে দলটি।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here