নোমান ইবনে সাবিত/বিপি, নিউ ইয়র্ক ::
অর্ধ শতাব্দীর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সর্বোচ্চ সূদ হার ঘোষণা করেছে। ভোগ্যপন্যের বৃদ্ধি লাগামহীন হয়ে পড়ায় লাগাম টেনে ধরার চেষ্টায় সূদ হার বৃদ্ধি ছাড়া উপায় ছিল না বলে জানান হয়েছে। ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক বলেছে যে মার্চ মাসের পর এটি তৃতীয় দফা সূদ হার বৃদ্ধির ঘটনা ঘটলো। গত মাসে মুদ্রাস্ফীতিও আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে বলে ভোক্তাদের জীবনে নাভিশ্বাস ওঠেছে।
অর্থনীতিবিদরা দ্রব্যমূল্য আরও বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন এবং তারা বলেছেন যে অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। ব্যাংকগুলোর ঋণের ওপর ফেডারেল সূদ হার বছর শেষে ৩.৪ শতাংশ পর্যন্ত পৌছতে পারে। ফলে মর্টগেজ, ক্রেডিট কার্ড এবং অন্যান্য ঋণের ওপর সূদ হার বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে জনগণের ওপর আর্থিক চাপ সীমা ছাড়িয়ে যাবে। শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, বিশ্বের সর্বত্র কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো মুদ্রাস্ফীতির লাগাম টেনে ধরার জন্য একই পন্থা অবলম্বন করতে শুরু করেছে, যা সমগ্র বিশ্বের অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনবে। এ খবর জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম বাংলা প্রেস।
কৌশল নির্ধারণী পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ইরয়াই পার্থিনন এর প্রধান অর্থনীতিবিদ গ্রেগরি ড্যাকোর মতে অধিকাংশ অগ্রসর অর্থনীতির দেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো এবং কিছু বিকাশমান দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের অর্থনৈতিক নীতিমালাকে কঠোর করছে। আমরা গত কয়েক দশক যাবত যে আন্তর্জাতিক পরিবেশ দেখতে অভ্যস্ত তার পরিবর্তন ঘটে চলেছে এবং বিশ্বজুড়ে ভোক্তাদের ওপর চাপ বাড়ছে।
যুক্তরাজ্যে ভোগ্যপন্যের মূল্য গত এপ্রিল মাসে ৯ শতাংশ বেড়ে গেছে এবং গত দেড় মাসে মূল্য সূচক আরও বেড়েছে। ব্যাংক অফ ইংল্যান্ড গত ডিসেম্বর মাসের পর থেকে এ পর্যন্ত সূদ হার পঞ্চম দফা বৃদ্ধি করেছে। ব্রাজিল, কানাডা ও অষ্ট্রেলিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোও হার বাড়িয়েছে। ইউরোপিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংক আভাস দিয়ে সামারে তারা সূদ হার বৃদ্ধি করবে।
২০২০ সালে করোনা মহামারীর সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখার জন্য ফেডারেল রিজার্ভ বছরে দু’বার ০.২৫ শতাংশ হারে সূদ হার বৃদ্ধি করেছিল। ওই সময় ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান জেরোমি পাওয়েল বলেছিলেন যে তারা দ্রুত দ্রব্য বৃদ্ধির আশংকা দেখেন না। কিন্তু গত শুক্রবারের মধ্যে মুদ্রাস্ফীতির ৮.৬ শতাংশে উন্নীত হওয়ায় ফেডারেল সরকার সংকটে পড়েছে যে এ ৩০ বছরের ব্যবধানে মুদ্রাস্ফীতি হার এত দ্রুত এত পরিমাণে বৃদ্ধি পাওয়ায় পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে কী করা যেতে পারে। পাওয়েল বলেন, মুদ্রাস্ফীতি কমিয়ে আনা অত্যাবশ্যকীয়। তিনি স্বীকার করেন যে মুদ্রাস্ফীতি অসহনীয় পর্যায়ে পৌছে গেছে।
অনেক পর্যবেক্ষক বলছেন যে মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে পেরে ওঠার মতো ব্যবস্থা ফেডারেল রিজার্ভের নেই, তারা অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি বুঝতে অক্ষম। কারণ পাওয়েল গত বছর দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সমস্যাকে সাময়িক ও সরবরাহ ব্যবস্থার সমস্যার সাথে জড়িত বলে উল্লেখ করেছিলেন। তখন থেকে মুদ্রাস্ফীতি তীব্র হয়েছে ইউক্রেনের যুদ্ধ ও চীনে কোভিড ১৯ এর নতুন ধাক্কায় আবারও শাটডাউনের কারণে।
সাম্প্রতিক সময়ে পরিচালিত অধিকাংশ সমীক্ষায় দেখা গেছে যে জনগণ দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি আরও শোচনীয় হওয়ার আশঙ্কা থেকে মুক্ত হতে পারেনি এবং তারা মনে করছে যে ফেডারেল রিজার্ভ দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল পর্যায়ে আনার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করলেও তাদের পক্ষে পরিস্থিতির অবনতি রোধ করা সম্ভব হবে না।
Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here