ঢাকা: টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ উপলক্ষে বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অর্থমন্ত্রীর ‘চাঁদা’ আদায়ের প্রতিবাদ জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। একইসঙ্গে এভাবে সংগৃহিত অর্থের উৎস, পরিমাণ এবং ব্যয়ের চুলচেরা হিসাব প্রকাশেরও দাবি জানিয়েছে দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংগঠনটি।

সোমবার টিআইবির পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে এ প্রতিবাদ জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আসন্ন আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এবং লাখো কণ্ঠে জাতীয় সংগীত অনুষ্ঠানের জন্য অর্থমন্ত্রী ১০০ কোটি টাকা চাঁদা উত্তোলনের তীব্র নিন্দা জানায় টিআইবি। সংবিধানের ২০(২) অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এ কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দেশি ও বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ‘চাঁদা’ তোলার ব্যাপারে গণমাধ্যমের কাছে অর্থমন্ত্রীর ঘোষণা রাজনীতি ও রাষ্ট্র পরিচালনায় নৈতিক অবক্ষয়ের উদ্বেগজনক দৃষ্টান্ত। অর্থমন্ত্রীর এই জাতীয় বক্তব্যে সচেতন দেশবাসী মাত্রই বিচলিত বোধ না করে পারবেন না। এটি আরো উদ্বেগজনক যে অর্থমন্ত্রীর স্বীকারোক্তি অনুযায়ী তিনি ‘মাঝে মাঝেই চাঁদাটাদা’ তুলে থাকেন। একজন সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত অর্থমন্ত্রী যিনি তার ট্যাক্সের বিবরণী জনসমক্ষে উন্মুক্ত করেছিলেন, তার এহেন বক্তব্যে টিআইবি যারপরনাই বিস্মিত।

তিনি আরো বলেন, নৈতিকতা বিবর্জিত এই অবস্থান ও বক্তব্যে পেশাদার চাঁদাবাজরাই শুধু উৎসাহিত হবেন না বরং এই জাতীয় চাঁদা প্রদানে বাধ্য ব্যবসায়ী মহল ক্ষমতার সাথে যোগসাজসে অধিকতর দুর্নীতিপরায়ন হয়ে উঠবে এবং চূড়ান্ত বিবেচনায় এর বোঝা পড়বে জনগণের ওপর।
সরকারের একজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীর এরূপ দুর্নীতি-সহায়ক অবস্থান একদিকে সরকারের দুর্নীতিবিরোধী অবস্থানের সাথে সাংঘর্ষিক এবং অন্যদিকে সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক।

তিনি অবিলম্বে আদায়কৃত চাঁদার পরিমাণ এবং এর ব্যয়ের তথ্য প্রকাশে অর্থমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান।

উল্লেখ্য, রোববার সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি তো মাঝে মধ্যেই চাঁদাটাদা তুলি। গত বিশ্বকাপেও এক বৈঠকে ৬০ কোটি টাকা তুলেছিলাম। এবার ব্যয় বেশি, তাই বিভিন্ন খাতের লোকদের সঙ্গে বৈঠক করলাম।

তিনি বলেন, এইচএসবিসি, বসুন্ধরা, স্কয়ার এক কোটি করে দেবে বলেছে। আর বিদ্যুৎ উৎপাদন করে অনেকেই তো ভালো কামিয়েছেন, তাদের কাছ থেকেও কিছু চাঁদা নেয়া যেতেই পারে। তবে আগের বার যারা বেশি টাকা দিয়েছেন তাদেরকে এবার তেমন চাপ দেয়া হচ্ছে না।

এছাড়া জানা গেছে, ব্যবসায়ী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে ব্যংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান দিচ্ছে ৫০ কোটি টাকা। দেশের প্রথম সারির ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে পাওয়া যাবে ২০ কোটি টাকা। জ্বালানি খাতের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নেয়া হবে ১৫ কোটি টাকা। বাকি টাকা আসবে টেলিকম অপরারেটরদের কাছ থেকে। এক্ষেত্রে অনুদানের টাকায় কোনো ট্যাক্স না নেয়ার জন্য একটি এসআরও জারি করা হবে বলে মন্ত্রণালয় সূত্র থেকে জানা গেছে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here