খোরশেদ আলম বাবুল।

শরীয়তপুর: শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার চরভাগা ইউনিয়নে নতুন বাজার ও নড়িয়া উপজেলার ঘড়িষার সংলগ্ন নদীতে চলছে অবৈধ ড্রেজারের প্রতিযোগিতা। একটা ড্রেজারের পাশেই স্থাপন করা হয়েছে অন্য আর একটি ড্রেজার। এভাবে সুরেশ্বর এলাকা থেকে কার্তিকপুর নদীর সেতু পর্যন্ত স্থাপন করা হয়েছে প্রায় অর্ধশত অবৈধ ড্রেজার।

প্রতিযোগিতার মাধ্যমে অপ্রকল্পিত ভাবে নদী থেকে তোলা হচ্ছে বালু। এতে নদীর পাড় ভেঙ্গে বাজার, মসজিদ, ফসলী জমি ও বসত বাড়ি বিলিন হচ্ছে নদীতে। সংশিস্নষ্ট ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা তার এলাকা ড্রেজার মুক্ত বলে দাবী করেন।

স্থানীয় সূত্র জানায়, স্থানীয় প্রভাবশালী মাহমুদ আলী মলিস্নক, শফি মাল, কালিম উদ্দিন চৌকিদার, রফিক বেপারী, দেলোয়ার দেওয়ান, আনসার মাল সহ অনেকে প্রভাব খাটিয়ে বছরের পর বছর নদীতে ড্রেজার স্থাপন করে বালু তুলছে। এতে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে ফসলী জমি, বাজার, বসত বাড়িসহ মসজিদও নদীতে ভেঙ্গে পড়ছে। এ বিষয়টি দেখার মতো কেউ নাই। প্রভাবশালী ড্রেজার ব্যবসায়ীরাও অসহায় মানুষের উপর জোর খাটাচ্ছে। কোন কোন ড্রেজার ব্যবসায়ী স্থানীয় সহজ-সরল মানুষদের ভুল বুঝিয়ে বলে, সরকারী নদীর মাটিতে সরকারী জায়গা ভড়াট হয়। তবে সংশিস্নষ্ট ইউপি ভূমি কর্মকর্তা ড্রেজার মালিকদের সাথে তাল মিলিয়ে চলছে।

চরভাগা মধ্য ঢালী কান্দি গ্রামের রাজ্জাক খালাসী বলেন, ড্রেজার দিয়ে বালু নিয়ে আমার জমির পাশে সরকারী খাল ভড়াট করা হচ্ছে। এতে আমার প্রায় দেড় একর ফসলী জমি পানি ও বালুতে তলিয়ে যাচ্ছে। আমি ড্রেজার মালিককে বলে কোন লাভ হয় নাই। সে বালু উত্তোলন করেই যাচ্ছে। এতে আমার প্রায় ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। আমার মতো হাজারো কৃষকের জমি ও ফসল নষ্ট করছে এ সকল ড্রেজার ব্যবসায়ীরা।

চরভাগা নতুন বাজারের ব্যবসায়ীরা জানায়, বাজারের একটা অংশ নদীতে ভেঙ্গে পড়েছে। ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের ফলেই নদীর গতি পথ পরিবর্তন হয়ে এ সমস্যা হয়েছে। এ বছর অর্ধশতাধিক ড্রেজার দিয়ে নদী থেকে যে ভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে তাতে মনে হয় আগামী বর্ষা মৌসুমে এ বাজার আর থাকবে না।

চরভাগা এলাকার মসজিদের ইমাম আব্দুর রাজ্জাক শিকদার বলেন, প্রতি বছরেই এ নদী থেকে বালু উত্তোলন করা হয়। এ বছর ড্রেজার অনেক বেশী বসানো হয়েছে। নদীর পাড়ের ফসলী জমি, বাড়ি-ঘর, হাট-বাজার ও মসজিদ ঝুকিতে রয়েছে। আগামী বর্ষায় নদীতে স্রোত বাড়বে তখন এর ফল পাওয়া যাবে। হয়তো অনেকের জমি, বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নদীতে বিলিন হবে।

এ বিষয়ে চরভাগা ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত সখিপুর ‘ক’ তহশিলের ভূমি কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, নদীর বেশীর ভাগই নড়িয়া উপজেলার ঘড়িষার তহশিলের মধ্যে। আমার এলাকায় যতগুলো ড্রেজার ছিল তা ধ্বংস করেছি। আপনি নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসকের সাথে আলাপ করেন তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবে। আমি আমার তহশিলের আওতাধীন এলাকা ঘুরে দেখবো। যদি কোন ড্রেজার থাকে তা ধ্বংস করবো।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here