ঢাকা: বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে দেশব্যাপী সড়ক, রেল ও নৌ-পথ অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে। বিরোধীদলের দাবি উপেক্ষা করে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে ও এই তফসিল প্রত্যাখ্যান করে তা স্থগিতের দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার এ কর্মসূচি পালন করছে তারা।

জানা গেছে, ১৮ দলের নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণে সারাদেশে সর্বাত্মকভাবে অবরোধ কর্মসূচি পালিত হলেও রাজধানীতে এ চিত্র উল্টো। জোটনেতা খালেদা জিয়ার কঠোর নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও অবরোধের শুরু থেকে জোটের দু’একজন নেতা ছাড়া বেশিরভাগ নেতাকর্মীকেই রাজপথে দেখা যায়নি।

জানা গেছে, সকালে বিএনপির যুগ্মমহাসচিব আমান উল্লাহ আমানের নেতৃত্বে গাবতলীতে রাজপথ অবরোধের চেষ্টা করে নেতা-কর্মীরা। কিছু যানবাহনে ভাঙচুরও করেন তারা। তবে পুলিশী অ্যাকশনে তারা বেশিক্ষণ অবরোধে থাকতে পারেননি। এছাড়া রাজধানীর কিছু স্থানে জামায়াতে ও বিএনপির নেতাকর্মীরা বিচ্ছিন্নভাবে রাজপথ অবরোধ ও মিছিল করার চেষ্টা করেছেন।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, অবরোধ সফল করতে সিনিয়র নেতা ও বিগত জাতীয় নির্বাচনে যারা বিএনপি দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন তারাসহ ১৮ দলীয় জোটের নেতাদের রাজপথে থাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন দলের হাইকমান্ড। কিন্তু অবরোধ সফলে ঢাকা মহানগরীর কোথাও বিএনপি ও জোটের নেতাকর্মীদের দেখা যায়নি। বিক্ষিপ্ত কিছু ককটেলবাজি ছাড়া ও অন্যসব সময়ের হরতালের ঝটিকা পিকেটিং ছাড়া কার্যত মহানগরীতে অবরোধের সপক্ষে দেখা যায়নি বিএনপি বা ১৮ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের। সকাল থেকে বিএনপির নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের মূল ফটকে তালা দেয়া রয়েছে। বাইরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য অবস্থান করছেন। এর মধ্যে সকাল সাড়ে ১১টার দিকে বিএনপি নেতাকর্মীরা মিছিল করতে চাইলে পুলিশ মিছিল লক্ষ্য করে ১০ রাউন্ড গুলি ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

বেলা সাড়ে ১২টার দিকে অবরোধের সমর্থনে সেগুনবাগিচা এলাকায় একটি মিছিল বের করে লেবার পার্টি। পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরানের নেতৃত্বে মিছিলটি কিছুদূর এগোলে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এসময় লেবার পার্টির দুই নেতা আহত হন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনপি বা এর অন্য সংগঠনের নেতাকর্মীরা নয়, মূলত জোটের অন্যতম শরিক জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরাই অবরোধের সপক্ষে মহানগরের কিছু কিছু এলাকায় মাঠে নেমেছেন। যদিও তাদের কর্মকাণ্ড ছিল অবরোধ নয়, মূলত হরতাল আদলে।

অবরোধ সফল করতে রাজধানীতে দলের নেতাকর্মীরা মাঠে না নামলেও জনগণ ‘স্বতঃস্ফূর্তভাবে’ অবরোধ পালন করছেন বলে দাবি করেছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রহুল কবির রিজভী আহমেদ। তিনি বলেন, সারাদেশে জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অবরোধ পালন করছে। সরকার নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন অব্যাহত রেখেছে। গত রাত থেকে এখন পর্যন্ত দুই জন মারা গেছে। এছাড়া বরাবরের মতোই দলীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশ প্রশাসনের অবস্থান রয়েছে।

মঙ্গলবার সকাল থেকে বিভিন্ন সময়ে জামায়াত-শিবির কর্মীরা পান্থপথ, ঢাকা কলেজ, সায়েদাবাদ ও কাজলায় র‌্যাব এবং বিজিবির গাড়িতে ককটেল ছোড়ে, বিডিআর ১নং গেটে সকাল থেকে ১০টি গাড়ি ভাঙচুর করে, মগবাজার ওয়্যারলেস গেটে ঝটিকা মিছিল করে, উত্তরা রেললাইনে টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করলে পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার ঘটনা ঘটে, বাসাবোয় জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের নেতৃত্বে মিছিল বের করা হয়।

বিএনপি সূত্র জানিয়েছিল, টানা ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি সফল করতে রাজধানীতে সিনিয়র ৮ নেতাকে দায়িত্ব দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। নেতাদের আন্দোলনের মাঠ না ছাড়তেও কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।

বিশেষ করে ঢাকায় অবরোধ কর্মসূচি পালনে নেতাদের অবশ্যই মাঠে নামার নির্দেশনা রয়েছে তার। ঢাকায় অবরোধ কর্মসূচি সফলে সিনিয়র ৮ নেতাকে নতুন করে দায়িত্ব বণ্টন করে দিয়েছেন তিনি। তাদের ঢাকা মহানগরের উল্লেখযোগ্য ৮ স্থানে অবরোধ কর্মসূচি সফলে দায়িত্ব বণ্টন করে দেন তিনি।

দলীয় সূত্র জানায়, অবরোধ কর্মসূচি সফল করতে কাফরুল, ক্যান্টনমেন্ট ও গুলশান এলাকার দায়িত্ব পেয়েছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ , মতিঝিল, খিলগাঁও ও সবুজবাগ এলাকার দায়িত্বে থাকবেন মির্জা আব্বাস। মোহাম্মদপুর, আদাবর, দারুস সালাম এলাকায় দায়িত্ব পালন করবেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তেজগাঁও ও বনানীর দায়িত্ব পেয়েছেন নজরুল ইসলাম খান। ভাইস চেয়ারম্যান ও ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকার দায়িত্ব সূত্রাপুর, কোতোয়ালি, বংশাল, গেন্ডারিয়া ও ওয়ারী এলাকায় অবরোধ সফল করা।

যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান বাবুবাজার ব্রিজ, লালবাগ, নবাবগঞ্জ, হাজারীবাগ ও গাবতলী, বরকত উল্লাহ বুলু- উত্তরা, উত্তর খান ও দক্ষিণ খান এবং সালাহউদ্দিন আহমদকে ডেমরা, শ্যামপুর, যাত্রাবাড়ী ও কদমতলীর এলাকায় অবরোধ সফল করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

এছাড়া ওই সব এলাকার ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল এবং গত নির্বাচনে যারা বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেয়েছিলেন তাদের নিয়ে আন্দোলন সমন্বয় করার নির্দেশ দিয়েছেন খালেদা জিয়া। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সহযোগিতা করতে দলের পক্ষ থেকে নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here