অপার সম্ভাবনাময় কেওড়াকাটা পর্যটন কেন্দ্রমহানন্দ অধিকারী মিন্টু, পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি :: পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ও ঐশ্বর্যমন্ডিত বনগুলোর মধ্যে আমাদের সুন্দরবন অন্যতম। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপূর্ব লীলাভূমি এ বন। যার চার দিক নিবিড় ঘন, চিরসবুজ এবং নিস্তব্ধ। সর্বত্রই সবুজের রাজত্ব। গাছপালা অপরূপ সাজে সজ্জিত।

ভারত ও বাংলাদেশের সীমানার মধ্যে বিস্তৃত এ শাসমূলীয় বন (ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট) বাংলাদেশ অংশে ৬২ ভাগ। প্রাকৃতিক এই বনভূমি এদেশের খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, বরগুনা ও পটুয়াখালী মোট ৫টি জেলার সীমান্ত ঘেঁষে অবস্থিত। সুন্দরবনকে ঘিরে বাকী চার জেলায় কমবেশি পর্যটন শিল্প গড়ে উঠলেও খুলনা জেলায় খুব একটা চোখে পড়েনা।

খুলনা থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত সুন্দবনের কোলঘেঁষা কয়রা উপজেলার কিছু উদ্যোমী তরুণ অত্র এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে কেওড়াকাটা পর্যটন অভয়ারণ্য গড়ার সামাজিক আন্দোলন করে আসছে।

প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় আইলার ক্ষত কাটিয়ে উঠে এলাকাবাসী এখন স্বপ্ন দেখে একটি পর্যটন কেন্দ্রের। একসময়কার পাইকগাছা-কয়রার রাস্তাঘাটের বেহালদশা থেকে মুক্ত হয়ে এখন যাতায়াত ব্যবস্থা অনেকটা উন্নত। ২০১৫ সালে কয়রার বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা কয়রা উপজেলা প্রশাসন ও বনবিভাগের সহায়তায় পর্যটন কেন্দ্রের দাবিতে সুন্দরবন ভ্রমণ করে এলাকায় ব্যাপক জনমত সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়।

বর্তমানে কয়রা সদর থেকে ৭ কি. মি. পূর্বে ৬নং কয়রা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন স্থানটি পর্যটনের জন্য খুবই সম্ভাবনাময় হিসেবে দেখছে এলাকাবাসী। খুলনা থেকে ১১০ কি.মি. দক্ষিণের এই স্থানটিতে যাওয়ার জন্য খুলনার সোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড থেকে সরাসরি বাসযোগে (বাসভাড়া ১৫০টাকা জনপ্রতি, সময় লাগবে ৫ ঘন্টা) পাইকগাছা হয়ে কয়রা সদরে পৌছে মডেল হাইস্কুল মোড় থেকে ইজিবাইক/মোটর সাইকেলযোগে (ইজিবাইক-২০ টাকা, মোটরসাইকেল-৩০ টাকা জনপ্রতি) মাত্র ১৫ মিনিটে কেওড়াকাটা পর্যটন কেন্দ্রে পৌছানো যাবে।

অপার সম্ভাবনাময় কেওড়াকাটা পর্যটন কেন্দ্রঅন্যদিকে খুলনা নতুন বাজার লঞ্চঘাট থেকে প্রতিদিন সকাল ১১.৪৫ মিনিটে ছেড়ে আসা লঞ্চযোগে (সময় লাগবে ৮ ঘন্টা, ভাড়া জনপ্রতি ১২০ টাকা) পর্যটন কেন্দ্রে পৌছানো সম্ভব। নামতে হবে ৫নং ও ৬নং কয়রা লঞ্চঘাটে (লঞ্চঘাটের পাশেই পর্যটন স্পট)। কয়রা সদরে স্বল্প খরচে থাকার জন্য রয়েছে কয়েকটি আবাসিক হোটেল।

স্বল্প খরচে ইঞ্জিনচালিত নৌকা যোগে সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকা ঘুরে দেখা যাবে। রয়েছে বিশাল এলাকাজুড়ে মনজুড়ানো গোলপাতা ট্রি প্ল্যান্ট প্রজেক্ট। দলবেঁধে পিকনিক করারও সু-ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া অবলোকন করা যাবে অত্র এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী আদিবাসী মুন্ডা সম্প্রদায়ের বৈচিত্রময় জীবনাচার।

সামাজিক এই আন্দোলনের উদ্যোক্তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, সংগঠক আশিকুজ্জামান বলেন, “বাংলাদেশের অসংখ্য পর্যটন স্পটের মতো আমরাও যুক্ত হতে চাই অর্থনৈতিক গুরুত্বে। এলাকাবাসী বিশেষ করে তরুণ সমাজকে এই পর্যটন আন্দোলনে সম্পৃক্ত করে তাদের সামাজিক উন্নয়ন কর্মকান্ডে উৎসাহিত করে সমাজে ইতিবাচক ভূমিকায় উদ্বুদ্ধ করা সম্ভব। মাদক ও অন্যান্য অসামাজিক কার্যকলাপের কবল থেকে তারণ্যকে মুক্ত রাখার জন্য এই প্রয়াসের গুরুত্ব অপরিসীম।”

স্থানীয় প্রশাসন ও পর্যটন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুনজর পড়লে এই স্থানটি হয়ে উঠবে দেশের অন্যতম দর্শনীয় স্থান। সরকার রাজস্ব আয়ের পাশাপাশি এই অঞ্চলের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে আরও যত্নশীল হবে বলে আশাবাদী সুন্দরবন পাড়ের জনসাধারণ।

জীববৈচিত্রের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন ও সুন্দরবন ভ্রমণ নীতিমালার যথাযথ অনুসরণ করে আপনিও ঘুরে আসতে পারেন ‘কেওড়াকাটা পর্যটন কেন্দ্র’।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here