বরিশাল : অবৈধ ভাবে ইনকোর্স ও ভাইভা’র জন্য নগদ টাকা আদায়সহ নানা অনিয়মের শিকার হচ্ছেন পটুয়াখালী সরকারি কলেজে পড়ুয়া দক্ষিণাঞ্চলের অসহায় শিক্ষার্থীরা। অর্থাভাবে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ার সুযোগ বঞ্চিত উপকূলীয় অঞ্চলের মেধাবী শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে  ভর্তি হচ্ছে পটুয়াখালী সরকারি কলেজে। কিন্তু দিন দিন নানা অনিয়মের মাধ্যমে জোর পূর্বক শিক্ষার্থীদের থেকে অর্থ আদায়ে নতুন কৌশল অবলম্ভন করছেন ওই কলেজ কর্তৃপড়্গ। এতে পটুয়াখালী সরকারি কলেজের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীরা।

ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছে দক্ষিণাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী পটুয়াখালী সরকারি কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম।

এ পরিস্থিতিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আশু হসস্তক্ষেপ কামনা করছেন কলেজের শিক্ষর্থীসহ সংশ্লিষ্টরা কলেজ সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সম্প্রতি সময়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলোতে বিভিন্ন বিষয় ৪বছর মেয়াদী অনার্স লেভেলে ‘ইনকোর্স’ নামে প্রতি বছর দু’বার কলেজের অভ্যন্তরে পরীক্ষা নেয়ার একটি নিয়ম করেছে। ইনকোর্স পরীক্ষায় প্রত্যেক পেপারে ২০ নম্বর থাকবে। অর্থাৎ যে বর্ষে ৬শ নম্বরের পরীক্ষা থাকবে, সেখানে ১২০ নম্বরের পরীক্ষা হবে ‘ইনকোর্সে’। যা কলেজের সংশ্লিষ্ট বিভাগ নিবে। ক্লাসে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বাড়াতেই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ সিদ্ধান্ত নেয় বলে সূত্র জানিয়েছে।

এ জন্য শিক্ষার্থীদের থেকে বাড়তি কোন টাকা আদায় না করতেও সংশিস্নষ্ট কলেজ কর্তৃপড়্গকে নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু পটুয়াখালী সরকারি কলেজ কর্তৃপক্ষ এক্ষেত্রে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর থেকে প্রতিবছর ৩শ থেকে ৪শ টাকা ‘ইনকোর্স ফি’ আদায় করছে। এর মাধ্যমে নিরিহ ও অসহায় ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে বছরে কমপক্ষে ১৫লাখ টাকা অবৈধ ভাবে আত্মসাৎ করছেন কলেজের সংশ্লিষ্ট বিভাগের শিক্ষক ও কর্তৃপক্ষ।

অপরদিকে অনার্স লেভেল’র দ্বিতীয় ও শেষ পর্বে মৌখিক পরীড়্গা থাকে। তাছাড়া মাস্টার্স এবং এইচএসসি শিক্ষার্থীদেরকেও মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। এক্ষেত্রে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর নিকট থেকে ৩শ থেকে শুরম্ন করে ১হাজার টাকা পর্যনত্ম অবৈধভাবে নগদ আদায় করছে পটুয়াখালী সরকারি কলেজ কর্তৃপক্ষ।

এরমাধ্যমে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম নীতি ভঙ্গ করে বছরে অন্তত ২৫লাখ টাকা শিক্ষার্থীদের থেকে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে। যা শিক্ষক, পরীক্ষক ও কথিত ছাত্রনেতাদের মাঝে ভাগ বাটোয়ারা হয় বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। সেইসঙ্গে কলেজের অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও নির্ধারিত অংশ পেয়ে থাকেন বলে কলেজ সূত্র জানায়।

অথচ মৌখিক পরীক্ষা গ্রহনের জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষক ও পরীক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িতদের প্রত্যেকের জন্য প্রয়োজনীয় ‘টিএডিএ’ প্রদান করে থাকে। তারপরও শিক্ষার্থীদের থেকে অবৈধ ভাবে নগদ টাকা দিতে বাধ্য করা হচ্ছে। কেউ প্রতিবাদ জানালে পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেয়া হবে, এমন আশঙ্কায় ছাত্র-ছাত্রীরা প্রতিবাদও জানাতে পাড়ছেন না।

ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ সূত্র জানায়, ‘ইনকোর্স ফি’ বাবদ অনার্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী প্রত্যেকের থেকে ৪শ টাকা করে আদায় করা হয়েছে। একই বিভাগের অনার্স শেষ বর্ষের ৯৪জন ছাত্র-ছাত্রীর ভাইভা বাবদ প্রত্যেকের থেকে নগদ ৫৫০টাকা করে আদায় করা হয়েছে। যদিও কলেজের সব ধরণের লেনদেন ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে হওয়ার বিধান রয়েছে।

কিন্তু এসব লেনদেন হাতে হাতে হয়ে থাকে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। শুধু ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ নয়। পটুয়াখালী সরকারি কলেজের ১৬টি বিভাগের একই চিত্র। এমনকি প্রশংসাপত্র ও সনদপত্র নিতে আসা শিড়্গার্থীদের থেকেও নগদ অর্থ আদায় করার অভিযোগ রয়েছে সংশিশ্লিষ্ট কর্তকর্তা ও কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।

এসব বিষয় কলেজ অধ্যড়্গ প্রাণেশ কানিত্ম সিকদার জানান, ইনকোর্স ফি প্রতিবারের জন্য ১শ ৫০টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। বছরে প্রত্যেক শিড়্গার্থীর থেখে মোট ৩শ টাকা নেয়া হবে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলো অর্থ আদায় সংক্রান্ত কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারে কিনা জানতে চাইলে অধ্যক্ষ বলেন, ‘কোন নিষেদ নেই।

ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের চেয়ারম্যান মো: হাবিবুর রহমান বলেন, ‘পত্যেক পেপারের জন্য ২৫টাকা ইনকোর্স ফি আদায় নির্ধারণ করা হয়েছে। সে অনুপাতে আদায় করা হচ্ছে। ভাইভা’র ফি আদায় জানতে চাইলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, এটা কলেজের অভ্যন্তরিণ বিষয়। সাংবাদিকদের বলতে হবে কেন? এসব বিষয় সাংবাদিকদের জেনে কি হবে? আমি বুঝতেছিনা।

পরে তিনি সাংবাদিকদের কলেজে চা খাওয়ানোর দাওয়াত করেন। কলেজ সূত্র আরো জানায়, কলেজের অভ্যন্তরিণ পরীক্ষার জন্য মন্ত্রণালয় যে ফি নির্ধারণ করে দিয়েছে এর চেয়ে দ্বিগুন তিনগুন পর্যন্তআদায় করছে কর্তৃপক্ষ। এইচএসসি  পরীক্ষার্থীদের বাছাই পরীক্ষার জন্য ১৫০টাকা মন্ত্রণালয় নির্ধারণ করলেও পটুয়াখালী সরকারি কলেজ কর্তৃপক্ষ এক্ষেত্রে ৩শ টাকা আদায় করে থাকে।

কেউ প্রতিবাদ করলে টিউটরিয়াল ও ভাইভা’য় তাকে কম নম্বর বা ফেল করানোর হুমকি দেন শিক্ষকরা। সেইসঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রনেতা নামধারী কতিপয় সন্ত্রাসীরা শিক্ষকদের পক্ষ নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করে থাকে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

এ নিয়ে একাধিকবার পত্র-পত্রিকায় রিপোর্ট প্রকাশ হলেও টনক নড়েনি সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্তৃপেক্ষর। ফলে অধ্যক্ষ প্রাণেশ কান্তি সিকদার ও তার সহযোগিরা এখন অনেকটা বেপরোয়া হয়ে গেছেন। শুধু এখানেই শেষ নয়। শিক্ষা সফরের নামে প্রতিবছর শিক্ষার্থীদের বাধ্য করা হয় নির্ধারিত চাঁদা দিতে।

চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে ছাত্রনেতা নামধারী সন্ত্রাসীদের হাতে অনেক সময়ে নাজেহাল ও লঞ্ছিত হতে হয় নিরিহ শিক্ষার্থীদের। এসব অবৈধ লেনদেন বন্ধে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষামন্ত্রণালয়ের কার্যকর উদ্যোগ দেখতে চান ক্ষতিগ্রস্তরা।

মামুনুর রশীদ নোমানী/

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here