CHAPAI SAKIBAমো: আশরাফুল ইসলাম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি :: চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলায় অজানা রোগে আক্রান্ত দুই বছরের এক মেয়ে শিশুর সন্ধান পাওয়া গেছে। তার নাম শাকিবা। জন্মের পর থেকেই এই অজানা রোগে আক্রান্ত শিশুটি। সে তার নিজের ডান হাতের ভার যেন আর কিছুতেই টানতে পারছেন না। বয়স বাড়ার সাথে সাথে বাড়ছে তার শরীরের একাংশের ভার।

এদিকে শাকিবাকে সুস্থ্যয করে তুলতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে বোর্ড গঠন করেছে স্থানীয় স্বাস্থ্যয বিভাগ। আর সরকারি খরচে বিনামুল্যে তার চিকিৎসা করা হবে বলেও ঘোষণা দিয়েছেন জেলার সিভিল সার্জন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের বিভিষণ গ্রামের গরীব কৃষক আব্দুস সাত্তারের একমাত্র মেয়ে শাকিবা। ২০১৫ সালের ২৭ আগস্ট পৃথিবীর আলো দেখার পর থেকেই হাতসহ তার ডান কাঁধের নিচের অংশ অস্বাভাবিক ভাবে ফুলতে থাকে। এরপর থেকেই তার চিকিৎসা শুরু করেন দরিদ্র বাবা-মা। গত দুই বছরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী ও ঢাকায় নিয়ে গিয়ে শাকিবার চিকিৎসা করানো হয়। কিন্তু কোন চিকিৎসায় শিশুটিকে সুস্থ্য করে তুলতে পারেনি। বর্তমানে তার ডান কাঁধের নিচ থেকে হাত ও পেট পর্যন্ত অস্বাভাবিক মাংসপিন্ড তৈরি হয়ে ফুলে গেছে।

শাকিবার বাবা আব্দুস সাত্তার কৃষি কাজ করেন। ভিটেমাটি ছাড়া তেমন কোনো জমিজমাও নেই। শাকিবার চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা খরচ করে পরিবারটি এখন নিঃস্ব। শাকিবার নানা সানাউল্লাহ জানান, বাচ্চাটার অবস’া দিন দিন খারাপের দিকে গেলেও কোনো চিকিৎসা করাতে পরছেন না তারা।

এ বিষয়ে শাকিবার মা সাবিনা বেগম জানান, চিকিৎসার জন্য শাকিবাকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার পর ডাক্তার কিছু ঔষধ দিয়েছিলো বটে কিন্তু তাতে রোগ সারেনি মোটেও। বরং দিন দিন তার ফুলার মাত্রা আরো বাড়ছে। দীর্ঘ দুই বছরে যে যেখানে বলেছে সেখানে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা দেবার যথেষ্ট চেষ্টা করেছেন এই দরিদ্র পিতা মাতা।

সন্তানকে সুস্থ্য করার তাগিদে ভিটেমাটি ছাড়া শেষ করেছেন নিজেদের বেঁচে থাকার একখন্ড জমিও। আর তাই দারিদ্রতার কারণে এখন আর চিকিৎসা করতে পারছেনা তারা। তিনি কান্না জড়িত কন্ঠে আরো বলেন, আমি তো মা। মেয়ের কষ্ট আমি ঠিকই বুঝি। অবুঝ শিশু কিছু বলতে না পারলেও সারা বাড়িময় তার আর্তনাদ আমাকে ঠিকই কষ্ট দেয়। আর তাই তিনি তার একমাত্র সন্তানকে সুস্থ্য করে তুলতে সরকার ও সমাজের বিত্তবানদের সহায়তা কামনা করেন।

এদিকে শিশুটির চিকিৎসার জন্য এগিয়ে এসেছে স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ। বুধবার বিকেলে অ্যাম্বুলেন্সে করে ওই শিশুকে তার বাড়ি থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতালে নেয়া হয়েছে বলে জানান সিভিল সার্জন।

নাচোল উপজেলা স্বাস’্য কমপ্লেক্সের সার্জারী বিশেষজ্ঞ ডা. জাহাঙ্গীর আলম জানান, শিশুটি LYMPHATIC (লিল্ফ্যাটিক), FILARIASIS (ফাইলেরিয়াসিস) অথবা HAEMANGIOMA (হেমাংজিওমা) রোগে আক্রান্ত বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে পরীক্ষা নিরীক্ষার পরই বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে। এছাড়া দেশেই এই রোগের চিকিৎসা করা সম্ভব বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।

বিষয়টি নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. কাজী শামীম জানান, চিকিৎসার জন্য শিশুটিকে বুধবার তার বাড়ি থেকে সদর হাসপাতালে আনা হয়েছে। এই ব্যাপারে অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে একটি বোর্ড গঠন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন সরকারি খরচেই তার চিকিৎসা করা হবে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here