ঢাকা : যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা এখনো মনে করে, প্রধান দুই দল ‘সদিচ্ছা’ নিয়ে এগোলে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক সঙ্কট থেকে উত্তরণের পথ খুঁজে পাওয়া সম্ভব।

আর এ জন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধী দল বিএনপির মধ্যে সংলাপ অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে জরুরি হয়ে পড়েছে বলে মনে করছে দেশ দুটি।

৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার সময় শেষ হয়ে যাওয়ার পর মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা দূতাবাসের পক্ষ থেকে আলাদা বিবৃতিতে বাংলাদেশে চলমান সহিংসতার জন্য প্রধান দুই দলকে দায়ী করেন।

যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের বিবৃতিতে বলা হয়, বর্তমান সরকারের মেয়াদপূর্তির সময় ঘনিয়ে আসায় প্রধান দুই দলের মধ্যে ‘গঠনমূলক সংলাপ’ অনুষ্ঠানের জন্য ‘নির্ভরযোগ্য’ কাউকে মধ্যস্ততার দায়িত্ব দেয়া আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে জরুরি হয়ে পড়েছে, যাতে বাংলাদেশের মানুষের কাছে ‘গ্রহণযোগ্য, অবাধ ও সুষ্ঠু’ নির্বাচনের আয়োজন করা সম্ভব হয়।

আমাদের বিশ্বাস, সদিচ্ছা নিয়ে চেষ্টা করলে প্রধান দুই দল এখনো অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের একটি উপায় খুঁজে বের করতে পারে।

ঢাকায় কানাডার রাষ্ট্রদূত হিদার ক্রুডেন তার বিবৃতিতে বলেন, রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে’ প্রধান দলগুলোর মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে আগামী নির্বাচন স্বচ্ছ, অংশগ্রহণমূলক, বিশ্বাসযোগ্য ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের বিষয়ে সমাধানে পৌঁছানোর সুযোগ এখনো রয়েছে বলে তার সরকার মনে করে।

সোমবার মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ ১৫টি দলের ১১শ’র কিছু বেশি প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিলেও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসা বিএনপি নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছে না।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ  সোমবার রাতে সাংবাদিকদের ইংগিত দেন , মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার সময় ফুরিয়ে গেলেও রাজনৈতিক সমঝোতা হলে তফসিল পরিবর্তন করা হতে পারে।

তফসিল ঘোষণার পর গত ২৬ নভেম্বর থেকে বিরোধী দলের দুই দফা টানা অবরোধে সারা দেশে ব্যাপক সহিংসতা চলছে; নিহত হয়েছে অন্তত ৩০ জন।

সহিংসতা বন্ধে সরকারও কঠোর অবস্থান নিয়েছে, গ্রেপ্তার করা হয়েছে বিরোধী দলের কয়েকজন শীর্ষ নেতাকে।

এই সহিংসতার তীব্র সমালোচনা করে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের বিবৃতিতে বলা হয়, সহিংসতা কখনো  গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অংশ হতে পারবে না। এটা  অগ্রহণযোগ্য এবং অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।

“গত কয়েক দিনে উদ্দেশ্যমূলকভাবে সাধারণ মানুষকে লক্ষ্য করে বোমা হামলা চালানো হয়েছে, গাড়ির ভেতরে পুড়িয়ে মারা হয়েছে।”

সব দলেরই ‘অবাধে ও শান্তিপূর্ণভাবে’ নিজেদের মত প্রকাশের সুযোগ থাকতে হবে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, এই সুযোগ তৈরি করতে হবে সরকারকেই। আর বিরোধীদলের দায়িত্ব- শান্তিপূর্ণভাবে এই সুযোগ ব্যবহার করা।

কানাডীয় রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশে অব্যাহত সহিংসতা এবং নিরপরাধ মানুষের হতাহতের ঘটনায় তার সরকার হতাশ।

মানবাধিকার ও বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রতি কানাডা ও বাংলাদেশের যে অভিন্ন শ্রদ্ধা, যে কোনো রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠীর সহিংসতাই তার পরিপন্থী। রাজনীতিবিদদের গ্রেপ্তার বা হরতালের মতো কর্মসূচি গঠনমূলক সংলাপের জন্য সহায়ক নয়

রাজনৈতিক অস্থিরতা চলতে থাকলে অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির আশঙ্কার কথা মনে করিয়ে দিয়ে হিদার ক্রুডেন বলেন, আমরা সব দলকেই সহিংসতা বন্ধ করে শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য কাজ করতে আহ্বান জানাচ্ছি।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here