মোঃ আলাউদ্দিন ::

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘কেউ কথা রাখেনি’- কবিতা অনেকের কাছে ভালো লাগলেও রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের কাছে তা এখন বিরস লাগবে এ কথা দিব্যি করে বলা যায়। ৬৮টি বসন্ত যায় যায়, অবশেষে পাখি খাঁচাবন্দী করতে যাচ্ছেন মুজিবুল হক। ‘ফুল ফুটুক আর না ফুটুক আজ বসন-’ কবিতার এ লাইনই বরং রেলমন্ত্রীর কাছে সত্যি হয়ে ধরা দিচ্ছে। কারণ তিনি বিয়ের পিঁড়িতে বসছেন।

রেলমন্ত্রীর হবু স্ত্রীর নাম তিনি না বল্লেও তার বাড়ি কুমিল্লা জেলায় এটা নিশ্চিত করেছেন মন্ত্রী নিজেই। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে ৫-৬ ডিসেম্বর। সংসদ ভবনের এলিডি হলে অনুষ্ঠিত হবে বিয়ের যাবতীয় অনুষ্ঠান।

এ ছাড়াও কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের নিজ আসনে চলবে ৭দিনব্যাপী অনুষ্ঠান। মন্ত্রীর কনে দেখার কাজ ইতিমধ্যে চূড়ান্ত হয়েছে। কনে মন্ত্রীর পছন্দের। এখন তার নতুন জীবন শুরুর প্রস্তুতি পর্ব চলছে।

রেলমন্ত্রীর বিয়ে নিয়ে কুমিল্লা শহরে হুলুস্থুল কাণ্ড চলছে। কে সেই সৌভাগ্যবতী? এ প্রশ্ন সবার। বিয়ের পর রেলগাড়িতে ফার্স্ট ক্লাস কোচে চড়ে মন্ত্রী সস্ত্রীক হানিমুনে যাবেন কি না এ নিয়ে টিকা টিপ্পনি কাটছেন অনেকে।

তাতে মন্ত্রীর বয়েই গ্যাছে। মন্ত্রী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিয়ে করবেন, সেটাই শেষ কথা। পুরো মন্ত্রিসভায় এখন খুশির হিল্লোল বইছে। রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক ৬৮ বছর বয়সের জীবনের এত দিন ছিলেন চিরকুমার। এ জন্য তাকে মন্ত্রিপাড়ায় বাসাও বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। অন্যদিকে চিরকুমার রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক বিয়ে করছেন এই খবর এখন টক অব দ্য কান্ট্রি। অনেকে ফোন করে জানতে চেয়েছেন কাকে বিয়ে করছেন, স্ত্রীর নাম কী, বাড়ি কোথায়, হবু স্ত্রীর আগে বিয়ে হয়েছিল কী না ইত্যাদি ইত্যাদি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মঙ্গলবার রেল মন্ত্রণালয়ে নিজ কক্ষে কিছুটা লাজুক ভঙ্গিতে মন্ত্রী মুজিবুল হক বলেন, ইনশাল্লাহ, বিয়ে করতে যাচ্ছি। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে বিয়ের অনুষ্ঠান হবে ঢাকা ও কুমিল্লায়। হবু বউয়ের পরিচয় জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, পাত্রী মাস্টার্স ডিগ্রি পাস, এখন তিনি আইন পাসও করেছে। বিয়ের পর যদি আইন পেশায় যেতে চায় তাহলে সেটি তার ইচ্ছা।

পাত্রীর নাম ও বয়সের বিষয়ে জানাতে অপরাগতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, গ্রামের সহজ সরল সাধাসিধে মেয়ে, ধীরে ধীরে সব জানতে পারবেন। মাস্টার্স পাস করে আইনেও পড়েছেন, তো বয়স বুঝতেই পারছেন। পাত্রী পরহেজগার, বোরকা ছাড়া চলে না। ভালো পরিবারের মেয়ে। তার বাড়ি কুমিল্লায়। এর বেশি বলা যাবে না।

নাম জানতে চাইলে মুজিবুল হক বলেন, নাম এখনই বলা যাবে না, যদি ফিরে যায়! কুমিল্লা জেলার যে কোন উপজেলায় তার বাড়ি। তবে নিন্দুকরা বলতে শুরু করছেন, মন্ত্রীর বউ হবেন, আবার আইন পেশায় ডিগ্রি নিয়েছেন, ফের বোরকা পড়ছেন, জামায়াত করেন নাতো। আর করলেই বা কি আসে যায়।

জঙ্গিদের সঙ্গে কোনো সম্পৃক্ততা না থাকলেই চলে। বিয়ে মন্ত্রীর অথচ দেশের মানুষ তার এ বিয়ে নিয়ে কতই না আকাশ কুসুম কল্পনা করতে শুরু করেছে! কোন ঘটক বা কারো সহযোগিতায় বিয়ে হচ্ছে কি না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, কোন ঘটক না, পাত্রীর সাথে আমার তিন বছর ধরে পরিচয়, পরিচয়ের সূত্র ধরেই বিয়ে করতে যাচ্ছি।

এদিকে রেলমন্ত্রীর হবু স্ত্রীর বাড়ি চান্দিনাস্থ বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে। চান্দিনা উপজেলার গল্লাই ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের মীরাখোলা গ্রামে সু্রান- মুসলিম পরিবারের এক মেয়ের সাথে তার পরিণয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।

স্থানীয় একাধিক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। কনের চাচাতো ভাই ও ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. আবদুল মবিন মুন্সীসহ একাধিক জানায়, কনের নাম হনুফা আক্তার রিক্তা। তাঁর বয়স ৩২। মীরাখোলা গ্রামের সু্রান- মুন্সী বাড়ির মরহুম আবদুল হামিদ উল্লাহ্‌ মুন্সী’র ২ ছেলে ও ৫ মেয়ের মধ্যে রিক্তা সবার ছোট। রিক্তা এলাকা থেকে ২০০০ সালে এসএসসি ও ২০০২ সালে এইচএসসি পাশ করেন। পরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করেন। একই সাথে তিনি এলএলবি পড়াশোনাও শেষ করে বর্তমানে ঢাকা শিক্ষাবোর্ডে চাকরি করেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

তার বড় ভাই নাছির উদ্দিন মুন্সী দুবাই প্রবাসী। ছোট ভাই আলাউদ্দিন মুন্সী সম্প্রতি মালদ্বীপ থেকে দেশে এসেছেন। বড় বোন শাহানারা আক্তার গৃহিনী। বিয়ে হয়েছে চান্দিনার গল্লাই মুন্সী বাড়িতে। তার স্বামী পুলিশে চাকরি করেন। মেঝো বোন হাজেরা আক্তার গৃহিনী, বিয়ে হয়েছে একই গ্রাম মীরাখোলা। তার স্বামী সভ্রান্ত গৃহস্থ। সেজো বোন শিরিন আক্তার। বিয়ে হয়েছে বুড়িচং উপজেলার কাবিলা গ্রামের এক প্রবাসীর সাথে।

চতুর্থ বোন মুক্তা আক্তারের বিয়ে হয় পার্শ্ববর্তী নবাবপুর গ্রামের এক প্রবাসীর সাথে। কনের ভাই আলাউদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এবিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

স্থানীয় অপর একটি সূত্র জানায়, প্রায় ৩ বছর পূর্বে হনুফা আক্তার রিক্তা মীরাখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সাইফুল ইসলামের সাথে চাকরির বিষয়ে সুপারিশের জন্য রেলমন্ত্রী (তৎকালীন হুইপ) মুজিবুল হক মুজিব এম.পি’র কাছে যান। তখন থেকেই রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক এম.পি’র সাথে রিক্তার পরিচয় হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে,  জীবনের প্রায় পুরোটা সময় রাজনীতিতে ব্যস্ত থাকা রেলমন্ত্রী বিয়ে করছেন এটি নিশ্চিত করেছেন একাধিক মন্ত্রী। গত সোমবার মন্ত্রিসভা বৈঠকে তার বিয়ের বিষয় নিয়ে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হয়েছে।

ওই বৈঠকে উপস্থিত একজন মন্ত্রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বৈঠকে তেমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা না হলেও রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের মন্ত্রিপাড়ায় বাসা বরাদ্দের বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। এতে একাধিক মন্ত্রী অংশ নেন। একজন মন্ত্রী জানান, রেলমন্ত্রীকে মন্ত্রিপাড়ায় বাসা বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে সংসার জীবন শুরু করার কারণে। শিগগিরই তিনি ওই বাসা বুঝে পাবেন।

একজন সিনিয়র মন্ত্রী জানান, মন্ত্রীদের পক্ষ থেকে রেলমন্ত্রীকে বলা হয়েছে, বিয়ে উপলক্ষে এক বা দুইদিনের অনুষ্ঠান করলে হবে না, কমপক্ষে চারদিনের অনুষ্ঠান করতে হবে। এতে মন্ত্রিসভায় বেশ হাস্যোরস দেখা দেয়। মন্ত্রিসভার অন্য একজন সদস্য জানান, রেলমন্ত্রীর বিয়ের প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এতদিন ট্রেনের ইঞ্জিন ছিল। এবার ইঞ্জিনের সঙ্গে বগিও যুক্ত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর কথায় বৈঠকে উপস্থিত প্রায় সবাই হাসিতে ফেটে পড়েন।

চৌদ্দগ্রাম উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের বসুয়ারা গ্রামে ১৯৪৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন রেলপথমন্ত্রী মুজিবুল হক মুজিব। তিনি দু’বার জাতীয় সংসদের হুইপের দায়িত্ব পালন করেছেন। আগে দু’বার মন্ত্রী ছিলেন। বর্তমানে সরকারের রেলপথমন্ত্রী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন। চৌদ্দগ্রাম উপজেলা থেকে ৩বার জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। বর্তমানে তার বয়স ৬৭ বছর।

রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক মুজিবের বিয়ের খবর শুনে জেলা পরিষদের প্রশাসক আলহাজ্ব ওমর ফারুক তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, মন্ত্রী মহোদয় একটি সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এজন্য তাকে সাধুবাদ জানাই। রেলমন্ত্রীর বিয়ের খবর শুনে আমরা আনন্দিত। গত মহাজোট সরকারের আমলে রেলমন্ত্রী একবার, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালীন সরকারের রেলমন্ত্রী ও ধর্মমন্ত্রী একবার, বর্তমান সরকারের রেলমন্ত্রী হিসেবে রয়েছেন।

 

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here