মিজানুর রহমান মানিক, লক্ষ্মীপুর
“ছেলে বাঁচি থাইকলে কত টাকা-পয়সার মালিক অইতাম। জমি-জমার অভাব অইত না। আর অন এক টুকরা জমিন নাই। কবরের জমিও নাই। মরার আগে স্বামী ও আদরের সন্তানের হত্যাকারী রাজাকারগো বিচার দেখে যেতে চাই।” এ আকুতি লক্ষ্মীপুরের শহীদ জননী বয়োবৃদ্ধা তাফিয়া খাতুনের। সদর উপজেলার পূর্ব নন্দনপুর গ্রামের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আলী আজমের বাড়িতে বসেই পরিবারটির সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের।
বয়সের ভারে ন্যুয়ে পড়া শহীদ জননী আফিয়া খাতুন কানে কিছুটা কম শুনলেও কথা অনেকটা ষ্পষ্ট। স্বামী শহীদ আলী আহমদ ও বড় ছেলে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আলী আজমের স্মৃতি বহন করে চলেছেন এই জননী। অভাব-অনটনের মাঝেও শোক বেদনার পাশাপাশি ঘাতকদের বিচার না হওয়ার কষ্ট বুকে তার। স্বাধীনতার ৪০ বছর অতিক্রান্ত হলেও তার স্বামী ও সন্তান হত্যাকারীসহ দেশের ওই রাজাকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার না হওয়ায় হতাশ এ জননী। মরার আগে অন্ততঃ বিচার দেখে গেলে শান্তি পেতাম। সরকারি ভাতার বিষয়ে তিনি আক্ষেপ করে বলেন- ‘সামান্য ভাতার টাকায় কী হয়। আরও তিন ছেলে ও তিন মেয়ে নিয়ে সাগরে ভাসছি। ছেলে বেঁচে থাকলে আজ লাখ লাখ টাকার মালিক হতাম। দেশের জন্য ছেলের জীবন গেল, স্বামী হারালাম। লাশও পাইনি তাদের।’
শহীদ জননী তাফিয়া খাতুন আরও জানান, তার প্রথম ছেলে আলী আজম তখন ২০/২১ বছরের। মাত্র ম্যাট্টিক পাশ করেছে। নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি এলাকায় মুক্তিযুদ্ধে গিয়ে গুলিতে আহত হয়ে বাড়ি এসেছিল। এ খবরটি রাজাকাররা পেয়ে বাড়ি থেকে আহত ছেলে ও ছেলের নিরপরাধ বাবাকে ধরে নিয়ে যায়। লক্ষ্মীপুরের রাজাকার ক্যাম্পের সাথে ব্রীজের ওপর নিয়ে তাদের দু’জনকে গুলি করে লাশ একসাথে খালে ফেলে দেয়। স্রোতের টানে লাশের আর সন্ধান পাওয়া যায়নি। কথা বলার একপর্যায়ে জননী তাফিয়া খাতুন স্বজন হারানোর বেদনায় বিলাপ করে কেঁদে ওঠেন।
এসময় উপসি’ত তাফিয়া খাতুনের মেজ ছেলে মোঃ শাহজাহান দাবি করে বলেন, আমরা আর কিছুই চাই না। অন্ততঃ এ সরকারের আমলে যেন যুদ্ধপরাধী রাজাকারদের বিচারটি হয়।