জামালপুর : জামালপুরের ‘ব্রহ্মপুত্র চরাঞ্চলের মাটি সবিজ উৎপাদনের ঘাটি’।

এই প্রবাদ বাক্যটি গত বিশ বছরের বেশি সময় ধরে লোকমুখে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

আসন্ন শীতকে মৌসুমকে সামনে রেখে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ অববাহিকায় চাষিরা এখন তাদের সবজি ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।

জামালপুর সদর উপজেলার লক্ষ্মীরচর, তুলশীরচর, শরিফপুর, নরুন্দি, রানাগাছা ও ইটাইল ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র নদের প্রায় এক শতাধিক গ্রামের তপ্ত বালু মাটিতে গত দুই দশক ধরে শীতের সবজি আবাদ হয়ে আসছে। বেগুন, টমেটো, শিম, করলা, লাউ, মরিচ, চিচিঙ্গা, ঢেঁরশ, পটল, ডাটা, মূলা, লাল শাক, পাট শাক, বরবটি, পুঁইশাক, ডাটা শাক ইত্যাদি।

প্রতি বছর চরের কৃষকরা আগষ্ট-সেপ্টেম্বর মাস এলেই ব্যস্ত হয়ে পড়েন টমেটোর চারা বপনে। বিশেষ করে ওই সময়ে বাড়ীর আঙ্গিনায় পলিথিনের মাচা তৈরীর মাধ্যমে টমেটোর বীজ বপন এবং চারা তৈরীতে ব্যস্ত থাকেন। এরপর অক্টোবরের শুরুতেই সেই টমেটোর চারা চরের তপ্ত বালু মাটিতে শক্ত খুঁটি বসিয়ে রোপনের ধুম পড়ে যায়।

বুধবার (৩০ অক্টোবর) দুপুরে সরেজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে দেখা গেছে, চরের কৃষকরা বর্তমানে লাগানো টমেটো চারা ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত রয়েছেন। কথা হয় লক্ষ্মীরচর গ্রামের আব্দুস সোবহানের ছেলে সামছুল হকের সাথে।

তিনি বলেন, আমি গত প্রায় ১৭-১৮ বছর ধরে শীতের সবজি আবাদ করছি। এবার আমি এক বিঘা জমিতে টমেটো ও এক বিঘা জমিতে বেগুনের আবাদ করেছি। চারা রোপন,পরিচর্যা থেকে শুরু করে ক্ষেতের টমেটো  উঠানো পর্যন্ত একেকজন চাষির মোট খরচ হয় প্রতি বিঘায় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা।

আর ফলন ভালো হলে ওই খরচ উঠানোর পরেও প্রায় ৪০থেকে ৪৫ হাজার টাকা লাভ হয়। তাই অতিরিক্ত লাভ আর সংসারে দুই পয়সা আয় রোজগারের জন্যই চরের কৃষকরা টমেটো আবাদে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। ব্যাংক লোন হোক বা নিজের সংসার থেকে কিংবা ঋণ ধার যাই হোক সমস্ত অর্থই ঢেলে দেন সবজি আবাদে।

অর্থনীতিবিদরা জানিয়েছেন, জামালপুর সদরে ব্রহ্মপুত্র নদের ধুসর বালু মাটিতে প্রতি বছর চার শ’ কোটি টাকার উপরে টমেটো আবাদ হয়ে থাকে।

চাষিরা জানিয়েছেন, সাধারণত প্রতি বছর পৌষ মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে পুরুদমে ক্ষেতের টমেটো বেগুনসহ নানা সবজি বাজারে বিক্রি শুরু হয়। তখন রাজধানী ঢাকা,চট্টগ্রাম,কুমিলা, ময়মনসিংহ,নেত্রকোনা,সিলেটসহ দেশের নানা প্রান্ত থেকে পাইকাররা নান্দিনা বাজারসহ চরের ভিতর ট্রাক নিয়ে ঢুকে পড়েন।

প্রায় তিন মাস প্রতিদিন শতাধিক ট্রাকসহ অসংখ্য পিকআপ ভ্যান, ভটভটিসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে সবজি রপ্তানি হয়। সবজির কারণে নান্দিনায় ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হয়ে থাকে।

চরের কৃষক গোলাম মোস্তফা, দারোগ আলীসহ অনেকেই অত্যন্ত দু:খের সাথে জানান, নান্দিনায় নদের উপর ব্রিজ না থাকায় চরবাসী সবজিসহ তাদের উৎপাদিত সকল পণ্যই নৌকা দিয়ে ওপারে নিতে হয়। এতে তাদের ভোগান্তিসহ কৃষকদের নানা বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়।

জেলা কৃষি সমপ্রসারণ বিভাগের উপ পরিচালক আবুল কাসেম জানিয়েছেন, জামালপুর সদরের বিভিন্ন চরে এবার যে পরিমান টমেটো,বেগুনসহ অন্যান্য সবজির আবাদ হয়েছে তাতে আবহাওয়া ভালো থাকলে বাম্পার ফলন ও দাম দুইটোই ভালো পাওয়া যাবে।

তিনি আরও বলেন, সদরের বেগুনের ফলন কিছুটা দেরিতে আসলেও জেলার মেলান্দহ, ইসলামপুর, বকশীগঞ্জ উপজেলায় আবাদকৃত উন্নত ও আগাম জাতের বেগুন বর্তমানে হাট বাজারে পাওয়া যাচ্ছে।

ছাইদুর রহমান/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here