৪৫৮টি কেন্দ্রের মধ্যে ৩৫৮টি ঝুঁকিপূর্ণ রাত পোহালেই লক্ষ্মীপুরের পাঁচ উপজেলায় ভোটজহিরুল ইসলাম শিবলু, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি :: পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে লক্ষ্মীপুরের পাঁচ উপজেলায় রবিবার ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। পাঁচ উপজেলায় মোট প্রার্থী রয়েছেন ৬৩জন। চেয়ারম্যান পদে ১৮জন, পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২৯জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১৬জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

এর মধ্যে সব গুলো উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে লড়াই হবে দ্বিমুখী আর পুরুষ ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে হড্ডা-হাড্ডি লড়াই হবে। পাঁচটি উপজেলার মধ্যে সব গুলো পদে ভোট হবে চারটি উপজেলায়। শুধু রামগঞ্জে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে সুরাইয়া আক্তার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। লক্ষ্মীপুরের পাঁচ উপজেলায় মোট ভোটার রয়েছে ১২লাখ ৩৪হাজার ৬৯৬জন। মোট ভোট কেন্দ্র ৪৫৮টি। এর মধ্যে ৩৫৮টি কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। নির্বাচন উপলক্ষ্যে শনিবার সকাল থেকে কঠোর নিরাপত্তায় প্রতিটি কেন্দ্রে নির্বাচনী সরঞ্জামাদি প্রেরণ করা হয়েছে।

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলায় নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন চারজন। তারা হলেন, সদর উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের সভাপতি এ কে এম সালাহউদ্দিন টিপু (দোয়াত-কলম), উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আবুল কাশেম চৌধুরী (নৌকা), জেলা আওয়ামীলীগের প্রচার সম্পাদক মহিউদ্দিন বকুল (কাপ-পিরিচ) ও বিএনপি নেতা ওয়াহিদুর রহমান (আনারস)। পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন দশজন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন পাঁচ জন। এখানে দোয়াত-কল ও নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডা-হাড্ডি লড়াই হবে বলে আভাস মিলছে।

রায়পুর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন দুজন। তারা হলেন, উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি অধ্যক্ষ মামুনুর রশিদ (নৌকা) ও বর্তমান চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন হাওলাদার (মোটর সাইকেল)। পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন আটজন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন চারজন। এখানে নৌকার সাথে লড়াই জমবে মোটর সাইকেলের।

রামগঞ্জ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন দুজন। তারা হলেন, উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি মো. মনির হোসেন চৌধুরী (নৌকা), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) মো. সিরাজ মিয়া (আম) প্রতীক। পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন দুজন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে নৌকা ও আমের মধ্যে।

রামগতি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন তিনজন। তারা হলেন, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াহেদ (নৌকা), শরাফ উদ্দিন আজাদ সোহেল (কাপ পিরিচ), মোহামম্মদ হারুনুর রশিদ মোল্লা (আনারস)। পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন চারজন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন তিনজন। এখানেও নৌকার সাথে লড়াই হবে কাপ পিরিচের।

কমলনগর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন সাতজন। তারা হলেন, উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এ কে এম নুরুল আমিন মাস্টার (নৌকা), উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মেজবাহ উদ্দিন আহমদ বাপ্পি (দোয়াত-কলম), আবদুর রাজ্জাক চৌধুরী (ঘোড়া), নুরুল আমিন (মোটরসাইকেল) আবদুর রহমান (হেলিকপ্টার), মো. আহসান উল্লাহ (আনারস), আনোয়ারুল হক (কাপ-পিরিচ)। পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন পাঁচজন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন চারজন। এখানে নৌকা ও দোয়াত-কলমের লড়াইয়ের দিকে তাকিয়ে থাকবে সবাই।
এদিকে প্রচারণার শেষ দিন পর্যন্ত প্রার্থীরা ছুটে গিয়েছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। জয়লাভের আশায় ও ভোটারদের মন জয় করতে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নিজ নিজ এলাকা চষে বেড়িয়েছেন তারা। এখন চলছে শেষ মুহুর্তের চুলচেড়া হিসেব নিকেশ।

এদিকে দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা একে অপরের বিরুদ্ধে তাদের নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা, আচরণবিধি লঙ্ঘন ও পোষ্টার ছেঁড়াসহ নানা অভিযোগ করে আসছেন। সুষ্ঠ ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রশাসন ও সাংবাদিকদের সহযোগিতা চেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। সব গুলো উপজেলার প্রার্থীরা তাদের কর্মকান্ড তুলে ধরে নিজ নিজ জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। তবে ভোটাররা এবার দেখে শুনে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করার কথা বলছেন। ভোট কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণ পরিবেশও চান তারা।

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাদেকুল ইসলাম বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সকল ধরণের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ভোটাররা যেন শঙ্কামুক্ত পরিবেশে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে সে বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করা হয়েছে। কঠোর নিরাপত্তায় প্রতিটি কেন্দ্রে নির্বাচনী সরঞ্জাম পৌঁছানো হয়েছে।

লক্ষ্মীপুরের পুলিশ সুপার আ স ম মাহাতাব উদ্দিন বলেন, লক্ষ্মীপুরের পাঁচটি উপজেলায় শান্তিপূর্ণ ভোট গ্রহণের জন্য পুলিশ বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে। ইতিমধ্যে জেলায় ১১প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। তারা ভোটের আগে ও পরে নিরাপত্তায় কাজ করবে। জেলার ৪৫৮টি কেন্দ্রের মধ্যে ৩৫৮টি কেন্দ্রেকে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রে পুলিশ, র‌্যাব ও আনসার বাহিনীর ২০জন সদস্য দায়িত্ব পালন করবে।

এ ছাড়া ২৮জন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটের নেতৃত্বে আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে কাজ করবে পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি সদস্যরা। নির্বাচনী পরিবেশ অশান্তিপূর্ণ করার চেষ্টা করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবেনা।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here