রায় ঘোষণা চলছে :

ঢাকা: বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় হত্যা, লুট, নির্যাতনসহ বিভিন্ন অপরাধের মামলায় এ পর্যন্ত ২৫১ জনকে ৩ থেকে ১০ বছর মেয়াদে সাজা দিয়েছেন বিচারক।

এর আগে মঙ্গলবার দুপুর পৌনে ১টার দিকে রাজধানীর বকশীবাজার আলিয়া মাদরাসা মাঠে অস্থায়ী আদালতে ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ ড. আখতারুজ্জামান রায় ঘোষণা শুরু করেন।

দণ্ডপ্রাপ্তদের সাজা রায় ঘোষণার দিন থেকে কার্যকর হবে বলে জানিয়েছেন বিচারক ড. আখতারুজ্জামান।

এদিন সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মামলার ৮১৩ আসামিকে বকশীবাজার আলিয়া মাদরাসা মাঠে অস্থায়ী আদালতে হাজির করা হয়। আলিয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত বিশেষ আদালত ঘিরে নেয়া হয়েছে কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা।

পুলিশ, র‌্যাব ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা চারদিক দিয়ে আদালত এলাকা ঘিরে রেখেছেন। বকশিবাজার ও উর্দু রোড দিয়ে প্রবেশপথ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

প্রায় ৪ বছর ৮ মাস পর ইতিহাসের জঘন্যতম এ হত্যাকাণ্ডের রায় ঘোষণা করা হচ্ছে।

গত ২০ অক্টোবর পুরান ঢাকার বকশীবাজার আলিয়া মাদরাসার কেন্দ্রীয় কারাগার সংলগ্ন মাঠে ঢাকার জজ আদালতের অস্থায়ী এজলাসে আসামি পক্ষের চূড়ান্ত যুক্তিতর্ক শেষে বিচারক ড. আখতারুজ্জামান মামলার রায়ের তারিখ ধার্য করেন ৩০ অক্টোবর। কিন্তু রায় প্রস্তুত না হওয়ায় তারিখ পরিবর্তন করে ৫ নভেম্বর নির্ধারণ করা হয়।

এ বিদ্রোহের ঘটনার বিচার সীমান্তরক্ষা বাহিনীর নিজস্ব আইনে সম্পন্ন হচ্ছে। আর হত্যা, লুঠসহ অন্যান্য অভিযোগের বিচার হচ্ছে প্রচলিত আইনে।

রাজধানীর পিলখানায় বিডিআর সদরদপ্তরে ২০০৯ সালের ২৫ থেকে ২৬ ফেব্রুয়ারি বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৩ জন নিহত হন। অন্যদিকে বিচার চলাকালীন ডিএডি রহিমসহ চার আসামির মৃত্যু হয়।

এ বিদ্রোহের পর বাংলাদেশ রাইফেলসের নাম বদল করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) রাখা হয়। পরিবর্তন করা হয় পোশাকও।

হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় লালবাগ থানায় হত্যা এবং বিস্ফোরক আইনে প্রথমে দু’টি মামলা হয়। পরবর্তীতে মামলাগুলো নিউমার্কেট থানায় স্থানান্তরিত হয়। বিচার কার্যক্রম শুরু হয় ২০১১ সালের ৫ জানুয়ারি। সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয় ২৪ আগস্ট।

আসামির তালিকায় রয়েছেন বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টুও। আলোচিত এ মামলায় পলাতক আছেন ২০ জন আসামি।

আসামির সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় বিচারকার্যের সুবিধার্থে কেন্দ্রীয় কারাগার সংলগ্ন আলিয়া মাদরাসা মাঠে ঢাকার জজ আদালতের বিশেষ এজলাস বসানো হয়। এ মামলায় সাক্ষী নেয়া হয় ৬৫৪ জনের। এরমধ্যে মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, সাবেক ও বর্তমান সেনা, নৌ, বিমান বাহিনীর কর্মকর্তা, পুলিশের সাবেক ও বর্তমান আইজি, বেসামরিক ব্যক্তিও রয়েছে।

এ ঘটনায় ২০০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি লালবাগ থানার তত্কালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নবোজ্যোতি খীসা একটি হত্যা মামলা করেন। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) বিশেষ সুপার আবদুল কাহার আকন্দ মামলাটি তদন্ত করেন। তাকে সহযোগিতা করেন ২০০ কর্মকর্তা। ৫০০ দিন তদন্তের পর ২০১০ সালের ১২ জুলাই এ আদালতে হত্যা এবং অস্ত্র-বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দুটি অভিযোগপত্র জমা দেয় সিআইডি। এতে ৮২৪ জনকে আসামি করা হয়। পরে অধিকতর তদন্তে আরও ২৬ জনকে অভিযুক্ত করে বর্ধিত অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। সব মিলে আসামির সংখ্যা দাঁড়ায় ৮৫০।

এই মামলায় নথির সংখ্যা ৮৭ হাজার পৃষ্ঠা। আসামিদের মধ্যে বিডিআর জওয়ান আছেন ৭৮২, বেসামরিক সদস্য ২৩ জন। এর মধ্যে ২০ জন এখনো পলাতক। বিচার চলার সময় চারজন মারা গেছেন, জামিনে আছেন ১৩ জন। জামিনে থাকা ১৩ জনের মধ্যে ১০ জন আদালতে হাজির হয়েছেন। বাকি তিনজন জোহরা খাতুন, আব্দুস সালাম ও লোনা আক্তার হাজির হতে পারেননি।

২০১১ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি মামলার বিচার শুরু হয়। চার বছর আট মাসে মামলাটি ২৩২ কার্যদিবস অতিক্রম করে। আজ রায় ঘোষণার মধ্যে শেষ হবে এ মামলার সব কার্যক্রম।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here