বাসের ফিটনেস

স্টাফ রিপোর্টার :: প্রায় ৩৩ শতাংশ বাসের ফিটনেস সঠিক নেই বলে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)।

বৃহস্পতিবার বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে এ প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৫৬ শতাংশ বাসের গতি নিয়ন্ত্রক সিল ঠিক নেই। ইঞ্জিন নম্বরের অবস্থা ঠিক নেই ৫৯ শতাংশের। সিএনজি মোটরযানের ক্ষেত্রে ৪৪ শতাংশ সিলিন্ডার মেয়াদ উত্তীর্ণ।

৩৯টি বাসের ওপর জরিপ করে এবং বাসগুলোর চেসিস, ফিটনেস সার্টিফিকেট, গতি নিয়ন্ত্রক যন্ত্র, চাকার অবস্থা ও ধোঁয়া নিঃসরণসহ মোট ২৮টি বিষয়ের অবস্থা বিবেচনা করে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।

জরিপের চার দফা সীমাবদ্ধতা তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়, যানবাহনের অনেক বিষয় রয়েছে যা পর্যবেক্ষণের জন্য যন্ত্রপাতির প্রয়োজন। কিন্তু জরিপ দলের কাছে এ ধরনের যন্ত্রপাতি না থাকায় চোখের দেখায় অনুমান নির্ভর সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।

জরিপ পরিচালনার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থা, মালিক-শ্রমিক সংগঠন ও পুলিশের সমন্বয়ে কমিটি করা হয় এবং কমিটি কর্তৃক পূর্বনির্ধারিত সময় ও স্থান অনুযায়ী জরিপ করা হয়। যার ফলে ধারণা করা হয়, জরিপের বিষয়টি কোনো না কোনোভাবে প্রকাশ হওয়ায় অনেক যানবাহন (সম্ভবত খারাপ) সংশ্লিষ্ট স্থান ও সময় এড়িয়ে চলেছে।

প্রতিবেদনের সুপারিশে বলা হয়, সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি প্রতিরোধে সড়কে শৃঙ্খলা আনতে ত্রুটিপূর্ণ যানবাহনের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। সমস্যার ব্যাপকতা ও তার মাত্রা বোঝার জন্য যানবাহনের বিশেষ করে গণপরিবহনের ওপর বিজ্ঞানভিত্তিক জরিপ পরিচালনা করা খুবই জরুরি। এ ক্ষেত্রে কোনো বিশেষায়িত গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তা করা যেতে পারে।

এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট গত বছরের ৩১ জুলাই সারা দেশের গণপরিবহনের ফিটনেস যাচাই করার জন্য ১৫ সদস্যের একটি জাতীয় অনুসন্ধান কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয়। কমিটিকে গণপরিবহনের ফিটনেসের জরিপ করে তিন মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশও দেয়া হয়।

ওই নির্দেশ অনুসারে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (এস্টেট) রওশন আরা বেগমকে আহ্বায়ক করে ১৫ সদস্যের কমিটি গঠন করে বিআরটিএ। পরে কমিটি ৩৯টি বাস, ২২টি ট্রাক ও ২২টি সিএনজি চালিত অটোরিকসার ওপর জরিপ চালিয়ে এ প্রতিবেদন প্রস্তুত করে।

বৃহস্পতিবার বিআরটিএর পক্ষে প্রতিবেদনটি হাইকোর্টে দাখিল করেন আইনজীবী রফিকুল ইসলাম। রিট আবেদনকারীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী তানভীর আহমেদ।

এর আগে গত বছরের ২৬ জুলাই সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট তানভীর আহমেদ বাদী হয়ে এ রিট দায়ের করেন।

ফিটনেসবিহীন যান চলাচলের কারণে যেখানে-সেখানে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে ও মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে এবং তা বন্ধের দাবিতে যানবাহনের ফিটনেস যাচাইয়ের জন্য রিট আবেদনটি করা হয়। পরে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়ার পাশপাশি হাইকোর্ট রুল জারি করে।

রুলে গণপরিবহণের তদারকি এবং ফিটনেসের নিশ্চয়তা দিতে বিবাদীদের ব্যর্থতা কেন অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চাওয়া হয়। এছাড়া ফিটনেসবিহীন যানবাহন রাস্তায় চলাচল বন্ধের নির্দেশ কেন দেয়া হবে না তাও রুলে জানতে চাওয়া হয়।

সড়ক পরিবহন ও সেতু সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, বিআরটিএর চেয়ারম্যান ও পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ ছয় বিবাদীকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।

প্রতিবেদন দাখিলের পর তানভীর আহমেদ বলেন, আদালত বলেছেন যে এটা অনেক বড় বিষয়। রুল শুনানির জন্য প্রস্তুতি নেন। রুল শুনানির সময় প্রতিবেদনের ওপর বিস্তারিত শুনানি করা যাবে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here