ডেস্ক রিপোর্ট::  যুক্তরাষ্ট্রের দুই বৃহৎ ব্যাংক সিলিকন ভ্যালি ও সিগনেচারের আকস্মিক ধসের পর খানিকটা চাঙা হয়েছে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজার। বিশ্লেষকরা বলছেন, ব্যাংকের পতন ও তার জেরে ডলারের মানের নিম্নগতিই বাজারের ঊর্ধ্বমুখীতার কারণ।

অনেকে আবার বলেছেন—কেবল ডলারের নিম্নগতিই নয়, অপরিশোধিত তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা চীনের বর্ধিত হারে তেল ক্রয় প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে আন্তর্জাতিক বাজারে।

বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, সোমবার আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের প্রধান ব্র্যান্ড ব্রেন্ট ক্রুড তেলের ব্যারেল (১৫৯ লিটার) বিক্রি হয়েছে ৮৩ দশমিক ০৩ ডলারে। আগের দিন রোববারের তুলনায় প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুডের দাম এ দিন বেড়েছে দশমিক ৩০ ডলার।

অপরিশোধিত তেলের অপর ব্র্যান্ড ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের (ডব্লিউটিআই) দামও বেড়েছে প্রায় একই হারে। সোমবার ব্যারেল ডব্লিউটিআই তেলের ব্যারেল বিক্রি হয়েছে ৭৬ দশমিক ৯১ ডলারে। আগের দিনের তুলনায় এই তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি বেড়েছে দশমিক ২৯ ডলার।

মার্কিন বাজার বিশ্লেষকদের মতে, কয়েক দিন আগে সিলিকন ভ্যালি (এসভিবি) ও সিগনেচার— পরপর দু’টি বৃহৎ ব্যাংকের ধসের জেরে ডলারের খানিকটা অবনমন ঘটার ফলেই বেড়েছে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম।

গুজবের জেরে মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অধিকাংশ গ্রাহক তাদের সঞ্চয়ের অর্থ তুলে নেওয়ায় শনিবার ধসে পড়ে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক। তার মাত্র তিন দিনের মধ্যে একই পরিণতি ঘটে অপর মার্কিন ব্যাংক সিগনেচারের ক্ষেত্রেও। তারল্য সংকট চলতে থাকায় রোববার নিউইয়র্কভিত্তিক সিগনেচার ব্যাংক বন্ধ ঘোষণা করে নিয়ন্ত্রণ নেয় দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারের সংস্থা ফেডারেল ডিপোজিট ইনস্যুরেন্স কর্পোরেশন (এফডিআইসি)। এসভিপি ও সিগনেচার— উভয়ই যুক্তরাষ্ট্রের বৃহৎ ব্যাংকের পর্যায়ভুক্ত।

ডলারের মান অনুসরণকারী মার্কিন সূচক ইউএস ডলার ইনডেক্সের তথ্য অনুযায়ী, পর পর দু’টি ব্যাংকের পতনের পর বিভিন্ন শক্তিশালী মুদ্রা, যেমন—ব্রিটেনের পাউন্ড, কানাডিয়ান ডলার, জাপানের ইয়েন, সুইডেনের ক্রোনা ও সুইজারল্যান্ডের ফ্রাঙ্কের তুলনায় ডলারের অবনমন ঘটেছে দশমিক ৫৮ শতাংশ।

এই ব্যাপারটি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ গত বছর জুন মাসের মাঝামাঝি অন্যান্য শক্তিশালী মুদ্রার তুলনায় লাগামহীন ভাবে বাড়ছিল ডলারের দাম। ফলে ডলার বাঁচাতে বিশ্বের অনেক দেশ জ্বালানি তেল ক্রয় কমিয়ে দিতে শুরু করে এবং তেলের বাজারে মন্দাভাব দেখা দেয়।

সৌদির রাষ্ট্রায়ত্ব তেল উত্তোলন ও রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান আরামকোর শীর্ষ নির্বাহী আমিন নাসের অবশ্য জানিয়েছেন, চীনে শিল্পোৎপাদন পুরোদমে শুরু হওয়ার ফলাফলই হলো তেলের বাজারের এই চাঙাভাব।

‘চীনে দিন দিন জেট ফুয়েলের (বিমানের জ্বালানি) চাহিদা বাড়ছে। যদি দেশটির শিল্পোৎপাদনে কোনো ছেদ না পড়ে, তাহলে ফের ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করবে বাজার,’ বলেন আমিন নাসের।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here