মহানন্দ অধিকারী মিন্টু, পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি ::

শীতের রিক্ততায় রং ও প্রাণের স্পন্দন এসেছে সরিষা ফুল। দিগন্ত বিস্তৃত হলুদ সরিষাফুল সেজেছে শীতের প্রকৃতি। চারিদিকে শুধু হলুদের সমারোহ আর মৌ মৌ গন্ধ। শীতে প্রকৃতির বিবর্ণ রঙকে রঙিন করে তুলতে দিগন্ত জুড়ে ফুটেছে সরিষাফুল। খুলনার পাইকগাছায় মাঠে প্রান্তরে সবখানেই এখন হলুদ প্রকৃতির এমন দৃশ্য বিরাজমান। হলুদ প্রকৃতির মুগ্ধতা ছড়িয়ে পড়েছে প্রকৃতি প্রেমী মানুষের হৃদয়ে। সরিষা ফুলের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রকৃতি প্রেমী মানুষ প্রতিদিন ভীড় জমাচ্ছেন সরিষা ক্ষেতে।

অনেকেই সাথে নিচ্ছেন প্রিয়জন কিংবা পরিবার পরিজন। ছুটির দিনে এমন প্রকৃতিকে কাছ থেকে উপভোগ করতে পরিবার পরিজনকে সাথে নিয়ে হলুদ সরিষা ক্ষেতে যাচ্ছেন প্রশাসনের অনেক উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারাও। সরিষা ক্ষেতের পাশে দাঁড়িয়ে নানা ভঙ্গিমায় ছবি তুলছেন এবং এসব ছবি প্রত্যেকেই তার ব্যক্তিগত ফেসবুকে নানা উপমা দিয়ে পোস্ট করছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের বেশ অনেকটা জায়গা দখল করে নিয়েছে সরষে ফুল। উল্লেখ্য, সরিষা মূলত ভোজ্য তেলের চাহিদা পূরণ করে থাকলেও এটি একটি লাভজনক বহুমুখী ফসল। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে চলতি মৌসুমে ২শ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। লক্ষমাত্রার চেয়েও ৬০ হেক্টর বেশি জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। যার মধ্যে বারি সরিষা ১৪, ১৫, ১৭ ও ১৮ এবং বিনা সরিষা ৪ ও ৯।

বর্তমানে দানা অবস্থায় রয়েছে, জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে আহরণ শুরু হতে পারে এবং ফেব্রুয়ারীর মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে শতভাগ আহরণ সম্পন্ন হবে এবং হেক্টর প্রতি ১.১২ মেট্রিকটন উৎপাদন হবে বলে ধারণা করছেন কৃষি বিভাগ। উপজেলার কাশিমনগর গ্রামের সরিষা চাষী ও ইউপি সদস্য রবিউল ইসলাম জানান, এ বছর আমি ১৪ বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করেছি। আশা করছি ভাল উৎপাদন হবে।

কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আফরোজা আক্তার রুমা জানান, দেশের ভোজ্য তেলের চাহিদা পূরণ করতে প্রতিবছর আমদানী খাতে প্রচুর টাকা ব্যয় হয়। যে পরিমাণ টাকা দিয়ে ভোজ্য তেল আমদানী করতে হয় এই টাকা দিয়ে প্রতিবছর একটি করে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা সম্ভব। তিনি বলেন, সরিষা একটি লাভজনক ফসল। সরিষার সাথে মধু চাষ করলে স্বাভাবিকের চেয়ে ১৫ থেকে ২০ ভাগ উৎপান বেশি হয়।

উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ জাহাঙ্গীর আলম জানান, সরিষা একটি বহুমাত্রিক ফসল। এর গাছ জ¦ালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। তেল এবং খৈইল অনেক মূল্যবান। সরিষা চাষে উৎপাদন খরচ কম। অনেক সময় বিনা চাষেও চাষ করা যায়। সাথী ফসল হিসেবে উৎপাদন করা যায়। দেশে ৯০ ভাগ ভোজ্য তেল আমদানী নির্ভর করতে হয়। এ জন্য সরকার আগামী ৩ বছরের মধ্যে ৪০ ভাগ আমদানী কমাতে তেল জাতীয় ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষে নানা উদ্যোগ নিয়েছে। এ সব উদ্যোগ মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন করছে কৃষি বিভাগ। বর্তমানে সাধারণ কৃষকরাও তেল জাতীয় ফসল উৎপাদনে আগ্রহী হয়ে উঠেছে বলে কৃষি বিভাগের এ কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মমতাজ বেগম জানান, শীত প্রকৃতির সৌন্দর্যের আরেক নাম সরিষাফুল। মৌ মৌ ঘ্রাণ আর সরিষা ফুলের মন জুড়ানো দৃশ্য শীত প্রকৃতিকে করে তোলে অনন্য। পরিবার পরিজন নিয়ে হলুদ সরিষা ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করার মাঝে অফুরন্ত ভালোলাগা অনুভূত হয়।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here