২৫ জানুয়ারী-২০১২ খ্রিষ্টাব্দ । বাংলা সাহিত্যে অমিতাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ১৮৮তম জন্মবার্ষিকী । এ জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে কবির জন্মভূূমি কেশবপুরের সাগরদাঁড়ীতে ২১ জানুয়ারী থেকে বসেছে সপ্তাহ ব্যাপী মধুমেলা। আর এ মেলা চলবে ২৭ জানুয়ারী পর্যন্ত।
যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার কপোতাক্ষ নদ সংলগ্ন সাগরদাঁড়ী গ্রামের দত্ত পরিবারে মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত ১৮২৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ জানুয়ারি (বাংলা ১২ মাঘ) জন্ম গ্রহণ করেন। বাবা রাজনারায়ন দত্ত, মা জাহ্নবী দেবী । অসাধারণ মেধার অধিকারী মধুসূদন দত্ত ব্যক্তি জীবনে ছিলেন খাম খেয়ালি ও বিলাস প্রিয়। যশ খ্যাতির মহে আচ্ছন্ন হয়ে মধুসূধন দত্ত হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে ১৮৪৩ সালে ৯ ফেব্রুয়ারি খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করেন। শিক্ষা জীবনে মধুসূদন গ্রীক, ফার্সি, জার্মান, ল্যাটিন, সংস্কৃত ভাষা সহ বহুভাষা রপ্ত করেন। বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচনা করেন বাংলা সাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদ মহাকাব্য ‘মেঘনাদবধ ’। এ ছাড়া রচনা করেন কাব্য ‘তিলোত্তমা সম্বব, ‘ব্রজাঙ্গনা’ ‘বীরঙ্গনা’ চতুদর্শপদী কবিতাবলী, নীতিমূলক কবিতা, নাটক ‘শর্মিষ্ঠা’ ‘পদ্মাবর্তী’ ‘কৃষ্ণ কুমারী’ ‘মায়া কানন’, প্রহসন ‘বুড়োশালিকের ঘাড়ে রোঁ’ ‘একেই কি বলে সভ্যতা’, উপকথা-রসাল স্বর্ণ লতিকা, অশ্বও কুরঙ্গ, কুক্কট ও মনি, মেঘ ও চাতক, সিংহ ও মশকী, ব্যাঙ্গ রচনা- রোগ শয্যায়, দুর্যোধনের মৃত্যু, ইংরেজী রচনাবলী-ঞঐঊ ঈঅচঞওঠঊ খধফওঊ, ঞঐঊ ঠওঝওঙঘ ঙঋ ঞঐঊ চঅঝঞ প্রভতি মধুসূদনের অমর সাহিত্য কর্ম। মাইকেল মধুসূদন দত্ত মৃত্যুর আগ মুহূর্তে ‘সমাধি লিপি’ নামে আট লাইনের একটি কবিতাটি লিখে কবি বলেছিলেন ‘আমার মৃত্যুর পর আমার সমাধির উপরে লিখে দিও সমাধি লিপি কবিতাটি’ । কবিতাটি হলো
“দাঁড়াও পথিক-বর জন্ম যদি তব
বঙ্গে! তিষ্ঠ ক্ষণকাল ! এ সমাধি স্থলে
(জননীর কোলে শিশু লভয়ে যে মতি
বিরাম) মহীর পদে মহাদ্রিাবৃত
দত্ত কুলোদ্ভব কবি শ্রী মধুসূদন।
যশোর সাগরদাঁড়ী কপোতাক্ষ-তীরে
জন্মভূমি জন্মদাতা দত্ত মহামতি
রাজ নারায়ন নামে জননী জাহ্নবী”।
মাইকেল মধুসূদন দত্ত অসুস্থ হয়ে ১৮৭৩ সালে ২৯ জুন কলাকাতাস্থ আলীপুর ইউরোপীয় জেনারেল হাসপাতালে বেলা ২ ঘটিকায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ৩০ জুন সেন্ট জেমস চার্চ এবং ধর্মযাজকের উদ্যোগে খৃষ্টীয় রীতি অনুযায়ী কলকাতা লোয়ার সার্কুলার রোডের সমাধি স্থলে বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে পূর্ণ মর্যাদায় কবির মরদেহ সমাধি করা হয়।
মধুসূদনের জন্ম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে তাঁর জন্মভূমি কেশবপুরের সাগরদাঁড়িতে প্রতি বারের ন্যায় সংষকৃতি মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতা ও জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে এবারও বসেছে সপ্তাহ ব্যাপী মধুমেলা। গত ২১ জানুয়ারী শনিবার বিকেল সাড়ে ৪টায় সংষকৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট প্রমোদ মানকিন ফিতে কেটে, কবুতর ও বেলুন উড়িয়ে মধুমেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। যশোর জেলা প্রশাসক মো. মোসত্মাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন খান টিপু সুলতান এমপি, তথ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব হেদায়েতুল আল মামুন, কেশবপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এইচ এম আমির হোসেন প্রমুখ । এ দিকে মধু মঞ্চের ঢোকার মুখেই মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ছবির উপরে তালুকদার গ্রুপের বর্ণাঢ্য প্রচারণা, মধু মঞ্চে মহাকবির ছবি’র তুলনায় বিভিন্ন কোম্পানির প্রচারণা সম্বলিত ফেষ্টুনের গুরুত্ব পাওয়াসহ বিচিত্রা অনষ্ঠান, যাদু, ভ্যারাইটি শো’র প্যান্ডেল কিশোরী থেকে শুরু করে মধ্য বয়সী মহিলারা অর্ধ উলঙ্গ নৃত্য প্রদর্শন করায় মুক্ত মঞ্চে কবির সাহিত্য কর্মের উপর বিষয় ভিত্তিক আলোচনায় অংশগ্রহনকারি অনেক আলোচক চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাছাড়া প্রশাসনের ছত্রছায়ায় মেলায় অন-টেন জুয়া, অশীল নৃত্য, মাদকের রমরমা ব্যবসাসহ নানা অসামাজিক কার্য্যকলাপ চলায় মেলায় সৌন্দার্য বহুলাংশে মেলান হচ্ছে বলে সতেচন মহল মনে করেন ।
তবে প্রতিদিন সন্ধ্যায় মেলার মধুমঞ্চে অনুষ্ঠিত জ্ঞানগর্ব আলোচনা ও সংস্কৃৃতিক অনুষ্ঠান, আর্কশনীয় কৃষি ও প্রযুক্তি মেলা, মৃত্যুকুপ, নাগরদোলা, বাঁশ, বেত, কাঠসহ বিভিন্ন জিনিসের গ্রামীন পন্যের সমারোহ ঘটায় মধুমেলায় প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের ঢল নামছে । ফলে মধু মেলাকে কেন্দ্র করে সাগরদাঁড়িসহ পার্শ্ববর্তী গ্রামসমূহে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।
ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/জাহিদ আবেদীন বাবু/কেশবপুর