শাব্বির এলাহী, কমলগঞ্জ মৌলভীবাজার ::

দেশের বিলুপ্তপ্রায় উল্লুকের শেষ আশ্রয়স্থল হলো মিশ্র চিরহরিৎ অরণ্য লাউয়াছড়া ন্যাশনাল পার্ক। আন্তর্জাতিক একটি সংস্থা এ প্রাণীটিকে অত্যন্ত বিপন্ন হিসেবে চিহ্নিত করেছে। খুব দ্রুত এদের সংরক্ষণের উদ্যোগ না নিলে খুব তাড়াতাড়ি এরা বিলুপ্ত হয়ে যাবে। ২০০৩ সালের মার্চে লাউয়াছড়া ন্যাশনাল পার্কে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক এবং শিক্ষার্থীরা উল্লুক সংরক্ষণে উদ্বুদ্ধকরণ ও প্রচারণামূলক সমাবেশ করেন। এর মূল প্রতিপাদ্য ছিল : উল্লুক সংরক্ষণে এগিয়ে আসুন।

লাউয়াছড়া বনে কর্মরত বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আইপ্যাক ও বনবিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালের মে মাসে ইংল্যান্ডে অধ্যয়নরত ফিনল্যান্ডের ছাত্রী পেট্টা লাউয়াছড়ার উল্লুকের ওপর গবেষণা করেন। গবেষণায় দেখা গেছে, লাউয়াছড়ায় ১৪টি উল্লুক পরিবার রয়েছে। এদের প্রতি পরিবারের সদস্য সংখ্যা ২থেকে ৫। সেই হিসাব অনুযায়ী এখানে মোট উল্লুকের সংখ্যা ৫১।চার দশক আগেও বাংলাদেশের বনে বসবাসকারী উল্লুকের সংখ্যা ছিল প্রায় তিন হাজার। কিন্তু সেখান থেকে এখন সেটি মাত্র কয়েকশ প্রাণীতে এসে ঠেকেছে।বাংলাদেশে উল্লুক বিষয়ক গবেষণা অত্যন্ত সীমিত।

গবেষকগণ মনে করেন, এ বিষয়ে গবেষণা ও কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হলে এবং লাউয়াছড়া ন্যাশনাল পার্কে বর্তমানে বসবাসরত উল্লুক যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা হলে বিলুপ্তপ্রায় এই প্রাণীটি হয়তো টিকে যাবে। তাদের মতে, বাংলাদেশের অন্যান্য বনাঞ্চলের চেয়ে উল্লুক বসবাসের জন্য এখনো লাউয়াছড়া ন্যাশনাল পার্ক অনেক বেশি উপযোগী। উল্লুক দলবদ্ধ হয়ে বাস করে। প্রতিটি পরিবার বা দল নির্দিষ্ট একটি এলাকার মধ্যে অবস্থান করে।

এদের খাদ্য তালিকায় ৫১ শতাংশ পাকা ফল, ৩৮ শতাংশ ডুমুর, ৫ শতাংশ ফুল এবং ৬ শতাংশ পাতাকুঁড়ি রয়েছে। দেশের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সাদা  উল্লুক সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া জরুরি। আন্তর্জাতিক পরিবেশ সংরক্ষণ সংস্থা আইইউসিএনের বিলুপ্তির ঝুঁকিতে থাকা প্রাণীদের লাল তালিকায়ও রয়েছে এই প্রাণীটি।

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে, বাংলাদেশের বনগুলোতে থাকা উল্লুক এখন বিপন্ন প্রজাতি হিসেবে অনেকটা বিলুপ্তির ঝুঁকিতে পড়েছে। দেশে গত চার দশকে ওয়েস্টার্ন হোলক গিবন বা পশ্চিমা উল্লুকের সংখ্যা ৮০ শতাংশ কমে গেছে।

এই বিষয়ে সাম্প্রতিক একটি গবেষণার প্রধান, ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক হাবিবুন নাহার বলছেন, ‘দেশের ২২টি বনাঞ্চলে নিবিড় গবেষণা করে আমরা ওয়েস্টার্ন হোলক গিবন বা পশ্চিমা উল্লুক সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পেয়েছি। তাতে দেখা গেছে, সরকারিভাবে সুরক্ষিত বনাঞ্চলগুলোয় এই প্রাণীটি সবচেয়ে ভালো অবস্থায় রয়েছে। আবার আগে কয়েকটি বনাঞ্চলে প্রাণীটি আগে দেখা গেলেও সুরক্ষার অভাবে সেখান থেকে হারিয়ে গেছে।’

মানুষের সঙ্গে এই প্রাণীগুলোর জীবনযাপন ধরনের অনেক মিল রয়েছে। এরাও পরিবার আকারে থাকতে পছন্দ করে। একবার কারো সঙ্গে জুটি তৈরি করলে আজীবন তার সঙ্গেই থেকে যায়।কবিরল প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীর মধ্যে রয়েছে উল্লুক।

বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ প্রজাতির প্রাণী বেশিদিন আর টিকতে পারবে না। এর প্রধান কারণ হচ্ছে নির্বিচারে বন উজার এবং বনাঞ্চলে ফলজগাছের দুষ্প্রাপ্যতা। তাছাড়া উপজাতিয়রা উল্লুক হত্যা করে খায়। এটিও একটি কারণ। বর্তমানে বাংলাদেশে এ প্রাণীর সংখ্যা দুইশ- এর কম।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here