দৃষ্টিনন্দন ১১.১১.১১ তারিখটির মতোই স্মরণীয় হয়ে থাকবে ১৭তম সার্ক শীর্ষ সম্মেলন। স্মরণীয় থাকবে কেবল দ্বীপ রাষ্ট্র মালদ্বীপের নয়নাভিরাম দ্বীপপুঞ্জে সম্মেলন আয়োজনের জন্য নয়, বরং এবারের সেতুবন্ধন রচনার স্লোগান কাজে পরিণত করার অঙ্গীকারের জন্য।

এ অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য আরো সহজ করতে সাফটার পূর্ণ বাস্তবায়ন, খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তা এবং সব ধরণের সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় আরো সহযোগীতার অঙ্গিকার এবং ২০ দফা আদ্দু ঘোষণার মধ্য দিয়ে শুক্রবার শেষ হলো ১৭তম সার্ক শীর্ষ সম্মেলন।

সম্মেলনে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, সার্ক ফুড ব্যাংককে কার্যকর করা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলার সহযোগীতার সুনির্দিষ্ট দিক নির্দেশনা তুলে ধরা হয়েছে।

পাশাপাশি সই হয়েছে শষ্য ব্যাংক গঠন এবং সমন্বিত দুর্যোগ মোকাবেলাসহ চারটি চুক্তি।

সমাপনী অধিবেশনে দক্ষিণ এশিয়ার নেতারা আসেন ইকুয়েটরিয়াল কনভেনশন সেন্টারে। সার্কের নেতারা বলছেন, এবারের সম্মেলনের মধ্যে দিয়ে সার্কের একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সার্কের সাত জন শীর্ষ নেতা সমাপনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই বিদায় নেন সকালেই।

দুই দিনের শীর্ষ সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশনে ঘোষণা করা হয়, সার্কের ১৮তম শীর্ষ সম্মেলন ২০১৩ সালের প্রথমার্ধে কাঠমান্ডুতে অনুষ্ঠিত হবে।

সার্কের নতুন প্রেসিডেন্ট মালদ্বীপের প্রসিডেন্ট মোহাম্মদ নাসিদ সমাপনীতে তুলে ধরেন সার্কের ঘোষণাপত্র।

২০ দফা ঘোষণাপত্রে আঞ্চলিক মুক্তবাণিজ্য চুক্তির (সাফটা) অধীনে ব্যবসা বাণিজ্য আরো সহজ করতে শুল্ক ও অশুল্ক বাধা দ্রুত দূর করা, পণ্যের স্পর্শকাতর তালিকা কমিয়ে আনা, দীর্ঘ মেয়াদী আঞ্চলিক বিনিয়োগ বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়া, সার্ক ফুড ব্যাংকে আরো শক্তিশালী করা, সব ধরণের সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় কার্যকর উদ্যোগ নেয়া, জ্বালানি সহযোগীতায় আন্তঃসরকার ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট সই করা এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় থিম্পু ঘোষণা বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে।

ঘোষণাপত্রে সাইথ এশিয়ান ফোরামকে আরো গতিশীল এবং একটি দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য ভিশন স্টেটমেন্ট তৈরি করতে বলা হয়েছে, যার মাধ্যমে এ অঞ্চলে ভবিষ্যতে একটি সাউথ এশিয়ান অর্থনৈতিক ইউনিয়ন গড়ে তোলা সম্ভব হয়।

ঘোষণায় নেতারা কানেকটিভিটির জন্য একটি আঞ্চলিক রেলওয়ে এগ্রিমেন্ট সই করারও তাগিদ দেন।

একই সাথে জলদস্যুতা বন্ধেরও উদ্যোগ নেয়ার কথা বলা হয় ওই ঘোষণায়।

এছাড়া সার্ক অঞ্চলে পর্যটনের সুযোগ তৈরির জন্য একটি টুরিজম ফেয়ার করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সর্বশেষ, একটি সার্ক মিডিয়া ডে করার বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেন নেতারা।

এদিকে, সমাপনী অধিবেশনে চারটি চুক্তি সই হয়েছে। এগুলো হলো- সার্ক বীজ ভান্ডার গঠন, প্রাকৃতিক দুর্যোগে দ্রুত সহায়তা ও পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে দুটি চুক্তি। সার্কভুক্ত দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা চুক্তিতে সই করেছেন।

সম্মেলনে পর্যবেক্ষক দেশগুলোকে কথা বলার সুযোগ দেয়া হয়, তবে ভবিষ্যতে তাদের ডায়ালগ পার্টনার করা এবং তাদের ভূমিকা কি হবে তা নিয়েও আলোচনা করা হয় ঘোষণাতে।

প্রসঙ্গত, গেল ছাব্বিশ বছরে কোনো সফল বা নজর কাড়া উদ্যোগ নিতে পারেনি সার্ক। সাধারণভাবে এটি রয়ে গেছে একটি পরামর্শক বা আনুষ্ঠানিকতা নির্ভর সংস্থা হিসাবে।

তবে এবারের দেয়া ঘোষণাপত্রে বেশকিছু জরুরি বিষয়ের কথা বলা হয়েছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য, অর্থনৈতিক এবং আঞ্চলিক সহযোগীতা বৃদ্ধি এবং খাদ্যও জ্বালানি নিরাপত্তায় সহযোগীতার বিষয়গুলো।

তবে এসব ঘোষণা আগের চেয়ে কতোটা ব্যতিক্রম, কতোটা অর্থপূর্ণ হয়ে উঠছে, বা সার্ক কেবল শীর্ষ নেতাদের মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে কিনা, তা দেখার এবং জানার অপেক্ষায় থাকবে দক্ষিণ এশিয়ার কয়েক কোটি সাধারণ মানুষ।

ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/এমএ মামুন

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here