১৩ ডিসেম্বর দিনাজপুরের বিরল উপজেলার বহলা ট্রাজেডি দিবস। ৭১’ সালের আজকের এ দিনে পাক হানাদার বাহিনী বহলা গ্রামের ৪৩ জন নিরীহ পুরুষকে হত্যা করে। মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনীর প্রতিরোধের মুখে পাক-বাহিনীর সদস্যরা বিরল থেকে পালিয়ে দিনাজপুর শহরে যাওয়ার পথিমধ্যে মাগরীবের পূর্বক্ষণে বহলা গ্রামে অবস্থান নেয়। কিছুক্ষণ পরে পাকবাহিনী বহলা গ্রামে বাড়ি বাড়ি অভিযান চালিয়ে গ্রামের ৭ বছরের শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত সব বয়সের পুরুষ মানুষদের বাড়ি থেকে ধরে এনে গ্রামের দক্ষিণে ফাঁকা মাঠে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করায়। এ সময় পার্র্শ্ববতী গ্রামের মসজিদ থেকে মাগরিবের আজানের ধ্বনি ভেসে আসলে পাক-বাহিনীর কাছে মাগরিবের নামাজ পড়ার সময় চাইলে সেখানেই নামাজ পড়ার অনুমতি দেয় তারা। অজু করে সবাই নামাজে দাঁড়ায়…কিন্তু নামাজ শেষ করতে পারেনি তারা, হানাদারদের হালকা মেশিন গানের গর্জনে ঢলে পড়ে ৪৩ জন। মেশিনগানের গর্জনে আতকে উঠে পার্শ্ববর্তী কয়েকটি গ্রামের নারী-পুরুষ। পুরুষশূন্য হয়ে যায় বহলা গ্রাম।
এদের হত্যা করার পরে পাকবাহিনী সেখানে অবস্থান করায় নিহততের স্বজনরা রাতে কোনভাবে লাশের কাছে আসতে পারেনি। পার্শ্ববর্তী গ্রামে লুকিয়ে থেকে সারা রাত ধরে ডুকরে ডুকরে কাঁদে শহীদের মা, বোন, স্ত্রী, সন্তানরা। ভোর বেলা পাকবাহিনী বহলা গ্রাম ত্যাগ করে দিনাজপুর শহর মুখে চলে যায়। সেই স্থানে জমাট রক্ত আর লাশের স্তুপে ভ্যাপসা গন্ধ ধরে লাশ পঁচতে শুরু করে। অনেক শহীদের শিয়াল-কুকুরে খুঁবলে দেয়। দেশ স্বাধীনের পরের দিন অর্থাৎ ১৭ ডিসেম্বর স্থানীয় লোকজন এসে ৪৩ জন শহীদের লাশকে একত্রিত করে গণকবর দেয়। পাক বাহিনীর হাতে নির্মমভাবে হত্যার কথা মনে পড়লে এখনও শরীরের লোম শিউরে উঠে নিহত পরিবারের সদস্যদের। শুধু নিহত পরিবারের সদস্যরাই নয়, সে দিনের ভয়াল ট্রাজেডির কথা এখন পর্যনত্ম ভুলতে পারে না বিরলের বহলা তথা দিনাজপুরের মানুষ। গতকাল কথা হয়, যশরাল গ্রামের ওয়াহেদা বেওয়া (৫০) এর সাথে তিনি জানান, আমার বড় ভাই সহ আমার পরিবারে ৭ জন পুরুষকে ওরা নির্মমভাবে মেরেছে। মাগরিবের নামাজ শেষ করার সময় দেয়নি। বিরল মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার রহমান আলী জানান, ডিসেম্বরের ১ম সপ্তাহে মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনীর সাড়াঁশি আক্রমণের কাছে পিছু হটে দিনাজপুর শহরে পালিয়ে যায় খান সেনারা। ১৩ ডিসেম্বর বহলায় হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে বিরল ছেড়ে যায় পাকসেনারা। তাই ১৪ ডিসেম্বর বিরলমুক্ত দিবস।
বিরলবাসীর দীর্ঘ দিনের দাবির প্রেক্ষিতে গণকবরটি সংস্কার করে স্মৃতিসৌধ নির্মাণের কাজ উদ্বোধন করেন, বিরল-বোচাগঞ্জ আসনের সংসদ সদস্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রিয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। এদিকে বহলা ট্রাজেডি দিবস এবং বিরল মুক্ত দিবসে ১৪ ডিসেম্বর সকাল ৮ টায় বহলা স্মৃতিসৌধে পুষ্প্য সত্মবক অর্পন, শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনায় দোয়া খায়ের, আলোচনা সভা এবং বিরল মুক্ত দিবস উপলক্ষে বিকেল ৩ টায় বিরল উপজেলা পরিষদ হতে আনন্দ র‌্যালি, বিকেল ৪ টায় উপজেলা পরিষদ চত্বরে স্মৃতিচারণ ও আলোচনা, বিকেল সাড়ে ৫ টায় পরিষদ চত্বরে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।

ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/সংকেত চৌধুরী/দিনাজপুর

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here