এসএস মিঠু, জয়পুরহাট
গত বছরের বারো কোটি টাকার লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে আজ (শুক্রবার)থেকে শুরু হচ্ছে দেশের বৃহত্তম চিনিকল- জয়পুরহাট সুগার মিলস্ লিমিটেডের চলতি মৌসুমের ৪৯তম আখ মাড়াই।এ উপক্ষে শুক্রবার বিকেলে আসর নামাজ শেষে চিনিকলের ফ্যাক্টরী প্রাঙ্গণে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আলোচনা সভা ও মিলাদ মাহফিল শেষে জয়পুরহাটের প্রবীণ আখচাষী আহসান উদ্দিন মন্ডল ও চিনিকলের প্রবীণ কর্মচারী মোজাম্মেল হক সর্ব প্রথম আখের ডঙ্গায় ( ক্যান ক্যারিয়ারে) আখ নিক্ষেপের মাধ্যমে যৌথ ভাবে আখ মাড়াই এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন।
প্রয়োজনীয় আখের অভাবে এবারও এ চিনিকলে চিনি উৎপাদনের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন অনিশ্চিত,প্রাপ্ত আখে বড়জোর মিল চলতে পারে ৫০থেকে ৫৫ দিন,তাই গত কয়েক বছরের মত এবারও জয়পুরহাট সুগার মিলস্ লিমিটেডকে বড় অংকের লোকসানর গুনতে হবে জেনেও আখ মাড়াইয়ে যেতে হচ্ছে মিলটিকে।
জয়পুরহাট সুগার মিলস্ লিমিটেডের ব্যবস’াপনা পরিচালকের (এমডি) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে,চলতি ২০১১- ২০১২ইং আখ মাড়াই মৌসুমে এ চিনিকলে ৮০হাজার মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে ৬হাজার মেট্রিক টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে।এবার আখ থেকে চিনি আহরণের হার ধরা হয়েছে ৭দশমিক ৫০ শতাংশ।এবার মোট আখ চাষ হয়েছে মাত্র ১০হাজার হেক্টর জমিতে।ফলে গতবারের মতই এবারও নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী মাড়াইয়ের জন্য প্রয়োজনীয় আখের অভাব হবে।আর এ আখ সংকটের কারনে প্রাপ্ত আখে এই মিল চলবে দুই মাসেরও কম। আর তাতে এবারও চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ব্যহত হয়ে আবারও বিশাল অংকের লোকসান করতে যাচ্ছে মিলটি- এটা নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্ট মিল কর্তৃপক্ষ।
মাড়াইয়ের জন্য প্রয়োজনীয় পরিমান আখ না পাওয়া অর্থাৎ চাষীরা আখচাষ কমিয়ে দেয়াকে এ চিনিকলের বছর বছর লোকসানের প্রধার কারন উল্লেখ করে জয়পুরহাট সুগার মিল্স লিমিটেডের ব্যবস’াপনা পরিচালক মোঃ শহিদ উল্লাহ জানান, সরকার এবার আখের দাম বাড়িয়ে দেয়ায় আগের চেয়ে এ অঞ্চলে আখচাষ অবশ্যই বাড়বে। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, ‘এ মিলে মাড়াইয়ের জন্য ২লাখ মেট্রিক টন প্রয়োজন।কিন’ ধীরে ধীরে আখের চাষ কমে যাওয়ায় মাড়াইয়ের জন্য সে পরিমান আখ পাওয়া যাচ্ছে না।যতটা আখ চাষ হয় তার মধ্যে এ চিনিকল নিয়ন্ত্রনাধীন নওগাঁ জেলার মহাদেবপুর,মান্দা এলকাার আখ পুরোটাই চলে যায় গুড় তৈরিকারকদের কাছে।কারণ তরাা বেশি দামে আখ কিনে থাকে।কিন’ আখের দাম বৃদ্ধির কারনে হয়তো বা সে ক্ষেত্রে অধিকাংশ চাষীরাই এখন চিনিকলের আখ সরবরাহে উৎসাহী হবে।যদি আখচাষীরা বেশি পরিমানে আখ চাষ করতো এবং তার সবটাই চিনিকলে সরবরাহ করতো, তবে ওই আখ মাড়াই করে এ চিনিকলের লোকসান অনেক কমিয়ে আনা সম্ভব হতো।’
এ ব্যাপারে জয়পুরহাট চিনিকল আখচাষী কল্যাণ সমিতির সাধারন সম্পাদক খাজা নাজিমউদ্দিন বলেন,‘আখ একটি র্দীঘ মেয়াদী অর্থকরি ফসল। আখ অপেক্ষা অন্যান্য ফসলের মূল্য বেশি হওয়ায় আখচাষীরা ক্রমশ: আখ চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ায় জয়পুরহাট চিনিকল জোনে আখের চাষ কমেছে।সমপ্রতি সরকার আখের মূল্য মনপ্রতি ১০টাকা বৃদ্ধি করে ৯৮টাকা ধার্য্য করায় চাষীরা কিছুটা উৎসাহী হলেও আখের মূল্য আরো বাড়াতে হবে।কারণ বছরে কেবল মাত্র আখ চাষ করা যায় যে জমিতে, ওই জমিতেই একই সমেয় অন্য তিনটা ফসল ফলে।আর আখ অপেক্ষা অন্য ফসলের মূল্যও অপেক্ষাকৃত বেশি।তাই দাম আরও বাড়িয়ে আখের নায্যমূল্য নিশ্চিত করতে না পারলে কখনওই চাষীরা আগের মত ব্যাপক হারে এ অঞ্চলে আখের চাষ করবে না। ’এ বক্তব্যকে সমর্থন করে একাধিক প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র দাবি চাষীদের দাবি,আখের মূল্য আরও বাড়ানোর সাথে সাথে আবহাওয়া উপযোগী বেশি ফলনশীল উন্নত জাতের আখের বীজ উদ্ভাবন ও বিনামূল্যে সরবরাহ, আখচাষী প্রশিক্ষণ,বিনাসুদে ঋণ প্রদান সহ চাষীদের আখচাষে সহায়ক বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। দেশের বৃৎত্তর স্বার্থে চিনি শিল্পকে বাঁচাতে দেশের বৃহত্তম এ চিনিকলের কাঁচামাল উৎপাদনকারি আখচাষীদের দাবি পূরনে বর্তমান সরকার আন্তরিক হবেন- এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্ট চাষী সহ আখচাষীদের বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।