কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ১০ মেয়র প্রার্থীর মধ্যে কম শিক্ষিত জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী এয়ার আহমেদ সেলিম। তিনি ৮ম শ্রেণী পাশ। বেশি শিক্ষিত স্বতন্ত্র প্রার্থী মেজর অব. মামুনুর রশিদ। তিনি এমবিএ পাশ। আফজল খান ও মনিরুল হক সাক্কু সবচেয়ে বেশি সম্পদের মালিক। প্রার্থীদের স্ত্রীদের মধ্যে মনিরুল হক সাক্কুর স্ত্রী সবচেয়ে বিত্তশালী। তার পরই আফজল খানের স্ত্রী। কম সম্পদের মালিক হাসানুল আলম। ১০ মেয়র প্রার্থীর মধ্যে আলোচিত ৫ প্রার্থীর নামেই বিভিন্ন সময়ে একাধিক মামলা হয়। এর মধ্যে দুর্নীতি, অস্ত্র, হত্যা ও নিরাপত্তা আইনে মামলা রয়েছে। অতীতে একাধিক মামলায় অভিযুক্ত হন তারা। শিক্ষাগত যোগ্যতার দিক থেকে ৩ জন গ্রাজুয়েট। সম্ভাব্য ১০ প্রার্থী হচ্ছেন- কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ও আওয়ামীলীগ সমর্থিত প্রার্থী অ্যাডভোকেট আফজল খান, দলের বিদ্রোহী প্রার্থী ও ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি নূর-উর রহমান মাহমুদ তানিম, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও দলের বিদ্রোহী প্রার্থী অ্যাডভোকেট মোঃ আনিসুর রহমান মিঠু, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও দলের বিদ্রোহী প্রার্থী মোঃ মনিরুল হক সাক্কু, জাতীয় পার্টি কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান এয়ার আহমেদ সেলিম, স্বতন্ত্র মোঃ হাসানুল আলম, মেজর (অব.) মোঃ মামুনুর রশিদ, চঞ্চল কুমার ঘোষ, শিরিন আক্তার ও মোঃ সালমান সাঈদ। এদের মধ্যে ৬ প্রার্থীর পছন্দের প্রতীক দোয়াত কলম। অপর ৩ প্রার্থীর মধ্যে আনারস, তালা ও বই প্রতীক চেয়েছেন। মনোনয়নপত্রের সঙ্গে দাখিল করা প্রার্থীদের সম্পদ, মামলা, শিক্ষাগত যোগ্যতাসহ অন্যান্য তথ্যাবলী নিম্নে তুলে ধরা হল-
এড. আফজল খান : আফজল খানের শিক্ষাগত যোগ্যতা বিএ-এলএলবি। জন্ম নগরীর দক্ষিণ ঠাকুরপাড়ায় ১৯৪৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি। তার কোন দায়-দেনা নেই। অধ্যক্ষ আফজল খানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে ৪ মামলাসহ ৫টি মামলা হয়। এর মধ্যে দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের একটি মামলাসহ দুটি মামলা থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। বর্তমানে দুর্নীতি দমন আইনে ৩টি মামলা স্পেশাল জজ আদালতে (জেলা ও দায়রা জজ আদলত) বিচারাধীন রয়েছে। তার বিরুদ্ধে বর্তমানে কোনও ফৌজদারি মামলা নেই বলে হলফনামায় উল্লেখ করেন। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে তার নিজ নামে রয়েছে নগদ ৫০ হাজার টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ ৩৫ লাখ ৫৮ হাজার ৯২৬ টাকা, জিপ গাড়ি একটি, ২০ ভরি স্বর্ণ, টিভি, ফ্রিজ, পাখা, খাট, সোফাসেট ইত্যাদি এবং ১.৫৫ একর মৎস্য খামার, ১.৬০ একর পুকুর ও ১৫.১৭ একর ভূমি রয়েছে। তার স্ত্রী নার্গিস সুলতানার নামে রয়েছে নগদ ২০ হাজার টাকা, জমাকৃত অর্থ ৮ লাখ ২২ হাজার ৭৮৩ টাকা, মাইক্রোবাস একটি, ২০ ভরি স্বর্ণ ও কিছু আসবাবপত্র।
মোঃ মনিরুল হক সাক্কু : সাক্কুর শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি। পেশায় তিনি একজন ব্যবসায়ী। নগরীর বজ পুর এলাকার নানুয়া দীঘিরপাড়স্থ মরহুম সাজেদুল হক মোক্তারের পুত্র সাক্কুর জন্ম ১৯৬২ সালের ১১ ডিসেম্বর। মনিরুল হক সাক্কুর বিরুদ্ধে আয়কর ও দুর্নীতি দমন আইনে ৩টি মামলাসহ ৯টি মামলা দায়ের হয়। এসব মামলার মধ্যে দুর্নীতি দমন আইনে দুটি মামলার কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। ২টির চূড়ানত্ম প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে, দুটিতে খালাস ও দুটিতে অব্যাহতি দেওয়া হয় বলে হলফনামায় লিখেছেন। তার নিজ নামে অস্থাবর সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে নগদ ১ কোটি ১১ লাখ ৭৫ হাজার ৮৭৫ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থ ৭ হাজার ৭৬৫ টাকা। বন্ড, ঋণপত্র ইত্যাদি ২ লাখ টাকা, পোস্টাল, সেভিংস সার্টিফিকেটসহ অন্যান্য ৩০ লাখ ৭৫ হাজার ৯৩৭ টাকা, প্রাইভেটকার ২টি, ১০ তোলা স্বর্ণ, ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী, আসবাবপত্র ৪৭ হাজার টাকা। এছাড়া তার নিজ নামে স্থাবর সম্পদ রয়েছে অকৃষি জমি পৃথক .০৯২৩, .০১৬, .৪১৯৯ একর এবং তিন কাঠার একটি ও ৫ কাঠার তিনটি প্লট ও দোকান পজেশন রয়েছে ৭ লাখ টাকার। তার নিজ নামে দায়-দেনার মধ্যে রয়েছে কার লোন ৫ লাখ ৮৩ হাজার ৯১৪ টাকা এবং তার স্ত্রীর নামে ব্যক্তিগত ঋণ রয়েছে ৪২ লাখ ২০ হাজার টাকা। আয়কর সম্পর্কিত তথ্যের বিবরণীতে বার্ষিক খরচ উল্লেখ করা হয়েছে ২৫ লাখ ৪১ হাজার ২৬৭ টাকা। তার স্ত্রীর নামে রয়েছে ৩টি বাণিজ্যিক দোকান, ১৮২৬ বর্গফুটের বাড়ি যার মূল্য ৭ লাখ ১৬ হাজার ৮শ’ টাকা, ভূমি .০৫ একর, .১৩০২ একর ও ৩ কাঠা প্লট এবং অস্থাবর সম্পদ রয়েছে নগদ ২ লাখ ৯৯ হাজার ৭৯৮ টাকা, ব্যাংকে ১৭ লাখ ৭৪ হাজার ২৮২ টাকা, ১০ তোলা স্বর্ণ ও বিনিয়োগ খাতে রয়েছে ১৯ লাখ ১৫ হাজার ১২১ টাকা।
এয়ার আহমেদ সেলিম : সেলিমের শিক্ষাগত যোগ্যতা ৮ম শ্রেণী। নগরীর ইসলামপুর এলাকার বাসিন্দা সেলিমের জন্ম ১৯৫১ সালের ৩ জুলাই। বিরুদ্ধে বর্তমানে কোনও মামলা নেই। ১৯৮৫ সালে তার বিরুদ্ধে একমাত্র মামলা হয়েছিল বিস্ফোরক আইনে। পরবর্তী সময় এ মামালা থেকে তিনি খালাস পান। তার বার্ষিক আয় কৃষি খাতে ১০ হাজার, ব্যবসায় ৩৫ লাখ ৯৩ হাজার ৪০৪ টাকা। তার নিজ নামে অস্থাবর সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে নগদ ২ লাখ টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থ ৩ লাখ টাকা, প্রাইভেটকার ১টি, ব্যবসায় মূলধন ৩৪ লাখ টাকা এবং ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী, আসবাবপত্র। এছাড়া তার নিজ নামে স্থাবর সম্পদ রয়েছে কৃষি জমি ৮০ শতক, অকৃষি জমি ১০ শতক, তিনতলা আবাসিক দালান একটি। ব্যাংকে তার দায়-দেনার পরিমাণ ৬০ লাখ টাকা। তার স্ত্রীর নামে অস্থাবর সম্পদ রয়েছে নগদ ৭০ হাজার টাকা, ৩০ ভরি স্বর্ণ ও স্থাবর একতলা বিশিষ্ট একটি দালান নির্মাণাধীন রয়েছে।
নূর-উর রহমান মাহমুদ তানিম : তার শিক্ষাগত যোগ্যতা বিএসএস। নগরীর মুন্সেফবাড়ি এলাকার বাসিন্দা তানিমের জন্ম ১৯৬৯ সালের ১ ফেব্রুয়ারি। ঠিকাদারি ব্যবসায় নিয়োজিত তানিমের বিরুদ্ধে ২০০১ সালে জননিরাপত্তা বিশেষ আইনে মামলা হলেও হাইকোর্টের নির্দেশে তা স্থগিত আছে। তার বিরুদ্ধে জননিরাপত্তা মামলাসহ ১৫টি মামলা হয়। এর মধ্যে একটি মামলা স্থগিত, ৩টি থেকে অব্যাহতি প্রদান, ৯টিতে বেকসুর খালাস ও দুটিতে চূড়ানত্ম প্রতিবেদন দেওয়া হয়। বর্তমানে তার বিরুদ্ধে কোনও ফৌজদারি মামলা নেই বলে হলফনামায় উল্লেখ করেন। দুটির চূড়ান্ত রিপোর্ট আদালতে গৃহীত হয়েছে। তার ব্যবসায় বাৎসরিক আয় ২৮ লাখ টাকা। তার নিজ নামে নগদ টাকা ও স্থাবর সম্পদ নেই, তবে প্রাইভেটকার ১টি, ইলেকট্রনিক সামগ্রী ও আসবাবপত্র রয়েছে। প্রাইভেটকার ক্রয়ে তার ব্যক্তিগত ব্যাংক ঋণের পরিমাণ ১৭ লাখ টাকা। তিনি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের সাবেক ভিপি, তরুণ আওয়ামী লীগ নেতা ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী।
মোঃ আনিসুর রহমান মিঠু : শিক্ষাগত যোগ্যতা বিএ, এলএলবি। নগরীর দক্ষিণ ঠাকুরপাড়ার বাসিন্দা মিঠুর জন্ম ১৯৭২ সালের ১ নভেম্বর। ব্যবসায়ী মিঠু ৭টি ফৌজদারি মামলায় জড়িত ছিলেন। অভিযোগে মামলা হয় ৭টি । ৩টিতে অব্যাহতি ও ৪টিতে খালাস দেওয়া হয়। আনিসুর রহমান মিঠু নিজেকে একজন ব্যবসায়ী বলে উল্লেখ করেছেন। তার ব্যবসায় বাৎসরিক আয় ৩ লাখ ২৮ হাজার ৪৮০ টাকা। তার নিজ নামে নগদ ১ লাখ টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ৬ লাখ টাকা, ৯ তোলা স্বর্ণ, ব্যবসার পুঁজি ৫ লাখ ২৮ হাজার ৪৮০ টাকা ও ১ লাখ টাকার আসবাবপত্র ও স্থাবর সম্পদের মধ্যে নিজ নামে রয়েছে একটি ফ্ল্যাট। তার কোন দায়দেনা নেই। তিনি কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী।
চঞ্চল কুমার ঘোষ : শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি। মহানগরীর শ্রীভল্লবপুর গ্রামের বাসিন্দা চঞ্চলের জন্ম ১৯৬৮ সালের ১০ নভেম্বর। তার বিরুদ্ধে কোন মামলা নেই। পেশায় ব্যবসায়ী। এ প্রার্থীর বাৎসরিক আয় ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা, অস্থাবর সম্পদ রয়েছে নগদ ৫০ হাজার টাকা, জমাকৃত অর্থ ২ লাখ টাকা, ইলেকট্রনিক সামগ্রী ও আসবাবপত্র এবং স্থাবর সম্পদ রয়েছে নিজ নামে ৩৪ শতক কৃষি জমি। তার কোন দায়দেনা নেই।
শিরিন আক্তার : একমাত্র মহিলা মেয়র প্রার্থী শিরিনের শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি। মহানগরীর দক্ষিণ চর্থার বাসিন্দা শিরিনের জন্ম ১৯৭৯ সালের ৫ জানুয়ারি। তার বিরুদ্ধে কোন মামলা নেই। নির্দলীয় এ প্রার্থীর পেশা, আয়ের উৎস, স্থাবর সম্পদ ও দায়দেনা প্রযোজ্য নয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অস্থাবর সম্পদ নগদ ২ লাখ টাকা, জমাকৃত অর্থ ২০ হাজার, বিয়ের উপহার ১০ ভরি স্বর্ণ, ইলেকট্রনিক সামগ্রী ও আসবাবপত্র।
মোঃ হাসানুল আলম : শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক (সম্পূরক)। নগরীর দক্ষিণ চর্থা এলাকার বাসিন্দা হাসানুলের জন্ম ১৯৫৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর। পেশায় সাংবাদিক ও নির্দলীয় এ প্রার্থীর বিরুদ্ধে কোন মামলা নেই। তার নামে অস্থাবর সম্পদ ও জমাকৃত অর্থ ৫৭০ টাকা। তার স্থাবর সম্পদ রয়েছে ৩.১৬ শতক অকৃষি জমি। তার কোন দায়দেনা নেই।
মোঃ সালমান সাঈদ : শিক্ষাগত যোগ্যতা বিবিএ। মহানগরীর ২য় মুরাদপুরের বাসিন্দা সাঈদের জন্ম ১৯৮২ সালের ১ জানুয়ারি। তার বিরুদ্ধে কোন মামলা নেই। নির্দলীয় প্রার্থী ও মৎস্য খামারি সাঈদের বাৎসরিক আয় ২ লাখ টাকা। তার নিজ নামে স্থাবর সম্পদ না থাকলেও অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে নগদ ৩ লাখ ৪৫ হাজার টাকা, ইলেকট্রনিক সামগ্রী ও আসবাবপত্র।
মোঃ মামুনুর রশীদ : শিক্ষাগত যোগ্যতা এমবিএ। মহানগরীর বিষুপুর এলাকার বাসিন্দা ও অবসরপ্রাপ্ত মেজর রশীদের জন্ম ১৯৬২ সালের ২০ আগস্ট। তার বিরুদ্ধে কোন মামলা নেই। তার বাৎসরিক আয় ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা, অস্থাবর সম্পদ রয়েছে নগদ ১০ হাজার টাকা, জমাকৃত অর্থ ১০ লাখ ও ওয়েজ আর্নার ৮ লাখ টাকা, ইলেকট্রনিক সামগ্রী ও আসবাবপত্র ৭ লাখ ৬ হাজার টাকা এবং স্থাবর সম্পদ রয়েছে নিজ নামে ১১ শতক কৃষি জমি ও অকৃষি জমি রয়েছে ৫৯ শতক।
এদিকে মেয়র প্রার্থী ১০ জনের মধ্যে ৬ জনের পছন্দের প্রতীক দোয়াত কলম। তারা হলেন- মনিরুল হক সাক্কু, এয়ার আহমেদ সেলিম, নুর উর রহমান মাহমুদ তানিম, আনিসুর রহমান মিঠু, মোঃ সালমান সাঈদ ও চঞ্চল কুমার। অপর ৩ জনের মধ্যে এডভেকেট আফজল খান আনারস, শিরিন আক্তার তালা এবং হাসানুল আলম বই প্রতীক চেয়েছেন। মেজর অব. মামুনুর রশিদ এখনও কোনো প্রতীক চাননি। মেয় পদে নির্বাচন করতে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন এবং জমাও দিয়েছেন। মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার সময় প্রয়োজনীয় কাদজপত্র জমা দিলেও এর সাথে জমা দিতে পারেননি জামায়াতের ২০ হাজার টাকা ব্যাংকার ড্রাফট।
ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/নেকবর হোসেন/কুমিল্লা