মালিক উজ জামান, যশোর প্রতিনিধি ::

যশোরের চৌগাছা পৌর এলাকার এক কৃষক স্যোসাল মিডিয়া ইউটুবে আঙ্গুর চাষ দেখে নিজেই শুরু করেছেন আঙ্গুর চাষ। প্রায় দুই বছর আগে রোপন করা গাছ এখন আঙ্গুরে ভরে উঠেছে। চলতি মৌসুমে তিনি দশ কাটা জমি হতে প্রায় চল্লিশ মন আঙ্গুর বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করছেন। চৌগাছা পৌর এলাকার বেলেমাঠ গ্রামের মঈনুদ্দিনের ছেলে কৃষক রুহুল আমিন (২৮)।

কৃষি কাজ করেই চলে জীবন জীবিকা। সারা দিন মাঠে হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে রাতে নিজ বাড়ি বা বাড়ির পাশে চায়ের দোকানে বসে তিনি স্যোসাল মিডিয়া ফেসবুক, ইউটুব দেখেন। প্রায় দুই বছর আগে ইউটুবে আঙ্গুর চাষ দেখে মনস্থির করেন তিনি আঙ্গুর চাষ করবেন। স্বপ্নের সেই ইচ্ছাকে সে আজ বাস্তবে রুপ দিয়েছে। পাশ্ববর্তী মহেশপুর উপজেলা হতে ৩৬টি আঙ্গুরর চারা ৫০০ টাকা পিচ দরে ক্রয় করেন এবং নিকট এক আত্মীয়র মাধ্যমে ভারত হতে আরও দুইটি চারা ক্রয় করে ১০ কাটা জমিতে বপন করেন। বর্তমানে তার প্রতিটি গাছে বাদুরের মত ঝুলছে আঙ্গুর। কোন প্রাকৃতিক দূর্যোগ না হলে ৩৮টি গাছ হতে এবছর তিনি ৪০ মন আঙ্গুর বিক্রি করবেন বলে আশা করছেন।

আঙ্গুর ক্ষেতে গিয়ে দেখা যায় ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষক রুহুল আমিন। এসময় কথা হলে তিনি জানান, ধান, পাট, শাক-সবজি চাষে কৃষক লাভবান খুবই কম হয়ে থাকেন। তাই ভিন্ন কিছু চাষাবাদ করার ইচ্ছা পোষণ হতেই আজকের সাফল্য। তিনি বলেন, নিজের কোন জায়গা জমি নেই, পরের নিকট হতে লিজ নিয়ে চাষাবাদ করে স্বাবলম্বি হওয়ার চেষ্টা। প্রায় তিন বছর আগে আড়াই বিঘা জমিতে ড্রাগন চাষ করে প্রথম ফলনে ১৪ লাখ টাকার ড্রাগন বিক্রি করেছি, ওই টাকায় কিছু জমি কিনেছি। এবছর আরও আড়াই বিঘা জমিতে ড্রাগনের চাষ করেছি।

ড্রাগন আছে ৫ বিঘা, কুল চাষ করেছি ১ বিঘা জমিতে আর সম্পূর্ণ নতুন চাষ হচ্ছে আঙ্গুর, ১০ কাটা জমিতে আঙ্গুর চাষ
করেছি। টক বা মিষ্টি এমনটি ভাবছি না তবে জৈষ্ঠ্যমাসে আঙ্গুর পাকা শুরু হবে তখন প্রতিটি আঙ্গুরই মিষ্টি হবে বলে তিনি মনে করছেন। ফল চাষে সফল এই দরিদ্র কৃষক বলেন, সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা বিশেষ করে সরকারী ব্যাংক হতে সহজ শর্তে লোন পেলে আমাদের মত দরিদ্র কৃষক কৃষিতে অভাবনীয় সাফল্য আনতে পারবে, এতে করে কৃষক নিজে লাভবান হবেন আর আর্থিক ভাবে দেশও এগিয়ে যাবে।

কৃষক রুহুল আমিন আরও বলেন, আঙ্গুর ফল যেহেতু আমদানি নির্ভর একটি ফল, তাই বছরের বার মাসই আমাদের আমদানিতে নির্ভর থাকতে হয়ে। দেশে আঙ্গুর চাষ হলে আমদানি কমবে লাভবান হবেন কৃষক। এরজেন্য কৃষি অফিসকে ব্যাপক ভূমিকা পালন করতে হবে। আমি ১০ কাটা জমিতে আঙ্গুর চাষ করেছি সম্পূর্ণ ইউটুব দেখে। প্রতিটি গাছ বপনের আগে অন্তত ৩ ফুট গভীর গর্ত করেছি, এরপর ওই গর্তে পাথর কুচি, বালি, ইটের গুড়া, জৈব সারসহ বেশ কিছু উপাদন দিয়ে চারা বপনের উপযোগী করে চারা লাগানো হয়। এর কারনে আমার চাষ করা আঙ্গুুর অপেক্ষাকৃত মিষ্টি হবে বলে মনে করা হচ্ছে। তিনি অসংখ্য আঙ্গুরের চারা তৈরী শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে দুই হাজার চারা ৩৫০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন। বেশ কিছু চারার অগ্রীম অর্ডার আছে সব কিছু মিলিয়ে এই কৃষক ফল চাষে একজন সফল চাষি বলে মন্তব্য করেছেন এলাকার মানুষ।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুশাব্বির হোসাইন বলেন, চৌগাছা এলাকায় শখের বশত অনেকেই আঙ্গুর লাগান তবে সম্প্রতি সময়ে বেশ কয়েকজন কৃষক বানিজ্যক ভাবে এর চাষ শুরু করেছেন। আমরা সর্বদা খোজ খবর রাখছি এবং কোন সমস্যা সৃষ্টি হলে কৃষককে তাৎক্ষনিক পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here