ডেস্ক নিউজ :: দেশে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত আরও দু’জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের একজন আগে থেকেই রাজধানীর একটি হাসপাতালে কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন। অন্যজন বিদেশফেরত একজনের সংস্পর্শে থেকে আক্রান্ত হয়েছেন। একের পর এক বিদেশফেরতরা আক্রান্ত হচ্ছেন এবং তাদের মাধ্যমে পরিবারের সদস্য ও অন্যরাও আক্রান্ত হওয়ায় করোনা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। বিদেশফেরতদের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশনা দিলেও তা অনেকেই মানছেন না। এ বিষয়ে জেল-জরিমানার বিধান উল্লেখ করে সরকার গণবিজ্ঞপ্তিও জারি করেছে। তবুও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। কোয়ারেন্টাইনের শর্ত না মানায় দেশের বিভিন্ন স্থানে কয়েকজনকে জরিমানা করা হয়েছে। এই ভাইরাস মোকাবিলায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সম্মিলিত প্রচেষ্টার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন।

এদিকে মঙ্গলবার দুই বিদেশি নাগরিককে বিমানবন্দর থেকেই ফেরত পাঠানো হয়েছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে যুক্তরাজ্য ছাড়া ইউরোপের সব দেশে থেকে নাগরিকদের বাংলাদেশে আসার বিষয়ে গত সোমবার থেকে সরকার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করায় ওই দুই বিদেশি নাগরিককে ফিরতি ফ্লাইটেই ফেরত পাঠানোর কথা জানিয়েছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। আতঙ্কের মধ্যেই সৌদি আরব থেকে বিকেলে ৪১৭ জন বাংলাদেশি ফিরেছেন। তাদের ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) দেশে নতুন করে আরও দু’জন করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হওয়ার কথা জানায়। আইইডিসিআর কার্যালয়ে নিয়মিত ব্রিফিংয়ে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা এ তথ্য জানিয়ে বলেন, নতুন করে আক্রান্ত দু’জনের একজন ইতালিফেরত। তিনি সরকারি হাসপাতালে কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন। আক্রান্ত অপর ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্রফেরত এক প্রবাসীর সংস্পর্শে ছিলেন। তিনি অন্য একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। যুক্তরাষ্ট্রফেরত ওই করোনা আক্রান্ত প্রবাসী সম্প্রতি সে দেশে ফিরে গেছেন। তার সংস্পর্শে আসা সবাইকে খুঁজে বের করে পর্যবেক্ষণে আনার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। আক্রান্ত ওই রোগীর বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ দূতাবাসে জানানো হয়েছে।

বর্তমানে করোনা আক্রান্ত সাতজন হাসপাতালে ভর্তি আছেন উল্লেখ করে ডা. ফ্লোরা বলেন, প্রথম দফায় আক্রান্ত তিন ব্যক্তি সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। তাদের মধ্যে দুই জন ছিলেন ইতালিফেরত। তাদের একজনের সংস্পর্শে থেকে পরিবারের অপর এক সদস্য আক্রান্ত হয়েছিলেন। দ্বিতীয় দফায় যে দুই ব্যক্তি আক্রান্ত হয়েছিলেন, তাদের মধ্যে একজন ইতালি এবং অপরজন জার্মানি থেকে এসেছিলেন। ইতালিফেরত ওই ব্যক্তির মাধ্যমে সংক্রমিত হয়ে তার স্ত্রী ও দুই শিশুসন্তান আক্রান্ত হন। গত সোমবার তাদের শনাক্ত করা হয়। তারাও হাসপাতালে ভর্তি আছেন। এ পর্যন্ত দেশে মোট ১০ জন করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হলেন।

প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তিদের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করে তিনি বলেন, বর্তমানে দেশের সরকারি হাসপাতালে সন্দেহভাজন ১৬ জন আইসোলেশনে আছেন। এছাড়া ৪৩ জনকে সরকারি ব্যবস্থাপনায় কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।

হোম কোয়ারেন্টাইনের শর্ত সবাইকে পালন করার আহ্বান জানিয়ে ডা. ফ্লোরা বলেন, পারিবারিকভাবে সেলফ কোয়ারেন্টাইনের বিষয়টি খুব শক্তভাবে পালন করার জন্য আমরা বার বার বলে আসছি। এখন পর্যন্ত রোগটি কমিউনিটি পর্যায়ে ছড়ায়নি। কিন্তু বিদেশফেরত আক্রান্ত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সংক্রমণ দেখা যাচ্ছে। এটি অত্যন্ত উদ্বেগের। তাই সবাইকে আহ্বান করব, আপনারা হোম কোয়ারেন্টাইনের শর্ত শতভাগ মেনে চলুন।

পরিচালক বলেন, বিদেশফেরতদের কারও জ্বর, গলা ব্যথা অথবা অন্য কোনো উপসর্গ দেখা দিলে কিংবা বিদেশ থেকে আসা কারও সংস্পর্শে থাকা ব্যক্তির এমন উপসর্গ দেখা দিলে সরাসরি কোনো হাসপাতালে না গিয়ে আইইডিসিআরের হটলাইনে (০১৯৪৪৩৩৩২২২) ফোন করুন। এক্ষেত্রে আপনারা গণপরিবহনও ব্যবহার করবেন না। প্রয়োজনে অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে আপনাদের নিয়ে আসা হবে। হটলাইনে ফোন কলে আইইডিসিআরের টিম গিয়ে বাড়ি থেকে আপনার নমুনা সংগ্রহ করবে।

তবে হাঁচি, কাশি, সর্দি হলেই করোনাভাইরাস ধরে নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে ডা. ফ্লোরা বলেন, দেশে এখন পর্যন্ত কমিউনিটি ট্রান্সমিশন নেই। অর্থাৎ রোগটি সামাজিকভাবে ছড়িয়ে পড়েনি। এ কারণে হাঁচি, কাশি, সর্দি, গলাব্যথা এসব দেখা দিলেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ভেবে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হবেন না।

জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের ১৬১টি দেশে ১ লাখ ৮০ হাজারের বেশি মানুষ এই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এখন পর্যন্ত এতে ৭ হাজার ১০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here