গোলাম মোস্তাফিজার রহমান মিলন, হিলি প্রতিনিধি ::
দিনাজপুরের সীমান্তবর্তী হাকিমপুর হিলি উপজেলায় কয়েক হাজার মানুষের জন্য ৫০ শয্যার একমাত্র হাসপাতাল। তীব্র গরম ও তাপদহের কারণে হাকিমপুর হিলি হাসপাতালে হঠাৎ করে ডায়রিয়া, পেটের ব্যাথা, জ্বর সর্দিসহ নানা রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। চিকিৎসকরা বলছেন, তীব্র গরম ও তাপদহের কারণে এমন সমস্যা হচ্ছে।
প্রতিদিন গড়ে ২৫-৩০ জন রোগী ভর্তি থাকছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে। ডায়রিয়া, পেটের ব্যাথা, জ্বর সর্দি রোগে আক্রান্ত রোগীদের স্যালাইন, সঠিক চিকিৎসা ও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসকসহ নার্সরা।
শুক্রবার (২৮ জুলাই) দুপুর ২ টায় সরজমিনে উপজেলা হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ডায়রিয়া ওয়ার্ডসহ পুরুষ ও মহিলা ওয়ার্ডে সব বেডে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীরা ভর্তি হয়ে আছে।
হাসপাতালের রেকর্ড অনুসারে, বুধবার ২৬ জুলাই ১১ জন রোগী ভর্তি হয়। পরের দিন বৃহস্পতিবার ২৭ জুলাই আরও ১২ জন নতুন রোগী ভর্তি হলে বেড সংকট হওয়ায় একজন মহিলা রোগীকে হাসপাতালের মেঝেতে চিকিৎসা দেওয়া হয়। আজ শুক্রবার দুপুর ২ টা পর্যন্ত হাসপাতালে নতুন করে ১১ জন ভর্তিসহ ৫৭ জন ভর্তি আছেন। আরো ৫ জনকে ছুটি দেওয়াসহ এদিন হাসপাতাল ছেড়েছেন ১০ জন। আগের দিন মঙ্গলবার হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ২৫ জন। তার আগের দিন সোমবার ভর্তি ছিলেন ২৭ জন। এছাড়াও বহিঃ বিভাগে প্রতি দিন প্রায় তিন শতাধিক রোগী চিকিৎসা সেবা ও পরামর্শ নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
হাসপাতালের সিনিয়র নার্স মাহফুজা খাতুন জানান, স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে গত কয়েক দিন থেকে ডায়রিয়া, পেটের ব্যাথা, জ্বর সর্দি রোগে আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি বেড়েছে। প্রতিদিন গড়ে ১০-১৫ জন নতুন করে রোগী ভর্তি নিতে হচ্ছে। তবে এদের মধ্যে পেটের ব্যাথা, জ্বর সর্দি রোগীর সংখ্যা বেশি। পুরুষ রোগীর চেয়ে নারী রোগীর সংখ্যা বেশি। আর ডায়রিয়া আক্রান্তদের মধ্যে শিশু ও বয়স্করা রয়েছেন। হঠাৎ করে বৈরী আবহাওয়া তীব্র গরম ও প্রচন্ড তাপমাত্রায় খাবারে অনিয়ম, বিভিন্ন কারণে এসব সমস্যা হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।
হাসপাতালে ভর্তি হয়ে থাকা পার্শ্ববর্তী বোয়ালদাড় গ্রামের গৃহবধূ উম্মে সালমা বলেন, গত বুধবার আমার মেয়ে হঠাৎ পেটের ব্যাথা, জ্বর সর্দি রোগে আক্রান্ত হয়। ওই দিন সন্ধ্যায় হাসপাতালে ভর্তি করায়। চিকিৎসক সঙ্গে সঙ্গে স্যালাইন ও প্রয়োজনীয় ঔষধ দিয়েছে। এখন বর্তমানে অনেকটা সুস্থ।
হাসপাতালের মহিলা ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা উপজেলার বড়চড়া গ্রামের মিনারা খাতুন বলেন, আমার ছোট শিশু বাচ্চা আয়েশা সিদ্দিক দুই তিন দিন আগে হঠাৎ জ্বরে আক্রান্ত হয়। পরে রক্ত পরীক্ষায় জানতে পারি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। এরপর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ডাক্তারের পরামর্শ ও নার্সদের চিকিৎসা সেবায় বর্তমানে অনেক সুস্থ।
ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা রোগী জানান, প্রচন্ড গরমে তিন দিন আগে হাঠাৎ আমার পেটের ব্যাথা ও পাতলা পায়খানা শুরু হয়। বাড়িতে স্যালাইন ও ঔষধ খেয়ে কাজ না হওয়ায় বৃহস্পতিবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। এখন বর্তমানে অনেকটা সুস্থ।
শুক্রবার হাসপাতালে বাবাকে ভর্তি করাতে নিয়ে আসা আবু তালেব মিয়া বলেন, গতকাল রাত থেকে আমার বাবার হঠাৎ করে পেটের ব্যাথা ও পাতলা পায়খানা শুরু হয়েছে। বাড়িতে খাবার স্যালাইন পল্লী চিকিৎসক এর পরামর্শে ঔষধ খাওয়ার পরেও কোন কাজ না হওয়ায় আজ হাসপাতালে ভর্তি করে দেয়। ভর্তি করার পরে ডাক্তার সঙ্গে সঙ্গে স্যালাইন দিয়েছে বাবা এখন ঘুমাচ্ছে।
হাকিমপুর হিলি সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিকেল অফিসার সুলতান মাহমুদ হাসান বলেন, হাসপাতালে বেশ কয়েক দিন থেকে ডায়রিয়া, পেটের ব্যাথা, জ্বর সর্দি রোগে আক্রান্ত রোগী ভর্তির সংখ্যা বেড়েছে। তীব্র গরম ও খরতাপদহ, খাবারে অনিয়ম এসব কারণে পুরুষ, মহিলা, শিশু ও বয়স্করা ডায়রিয়া, পেটের ব্যাথা, জ্বর সর্দি রোগে ভুগছে বলে মনে করছি। তবে আমাদের হাসপাতালে প্রয়োজনীয় স্যালাইন পর্যাপ্ত থাকায় এখন পর্যন্ত কোন সমস্যা হচ্ছে না। অনেক রোগী চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে ফিরে যাচ্ছে। আমাদের পরামর্শ হচ্ছে, ভাজা পোড়া খাবার কম খেতে হবে, খাবারের আগে সাবান দিয়ে হাত ভালো ভাবে ধৌত করতে হবে এবং অবশিষ্ট খাবার ভালো ভাবে ঢেকে রাখতে হবে। ডায়রিয়াসহ যে কোন রোগে আক্রান্ত হলে সঙ্গে সঙ্গে নিকটবর্তী হাসপাতালে এসে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা নিতে হবে।