পৌষের দিন যতই যাচ্ছে ততই শীত ও ঘন কুয়াশা জেঁকে বসছে। কনকনে শীত ও হিমেল হাওয়ায় স’বির হয়ে পড়েছে পাঁচবিবি উপজেলার দরিদ্র পীড়িত শ্রমজীবি মানুষের দিন যাপন। টানা ৭দিন ধরে সূর্য্যের মুখ সকাল থেকে দেখা না গেলেও গত ২দিন যাবৎ দুপুরে কিছুক্ষণের জন্য সূর্যের মুখ দেখা যায়। আবার বিকাল হতেই শুরু হচ্ছে ঘনকুয়াশা ও বইছে ঝিঁরি ঝিরি হিমেল হাওয়া। ফলে শীতবস্ত্রহীন দরিদ্র মানুষের দূর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। ঠান্ডা জণীত কারণে রোগ ব্যাধি বৃদ্ধি পাচ্ছে। জয়পুরহাটে শৈত্য প্রবাহে স’বির হয়ে পড়েছে জনজীবন। নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষের দুর্ভোগ আরও বেড়ে গেছে। সেই সাথে পড়ছে ঘন কুয়াশা। সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ছে আশংকাজনক ভাবে। তীব্র ঘন কুয়াশায় রোপা আমন ফসলের বীজতলা সহ ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
দরিদ্র শ্রমজীবি দিনমজুর ও বিভিন্ন পেশার শ্রমিকরা বাইরে কাজে যেতে না পারায় ঘরে খাবার নেই। ফলে না খেয়ে দিনতিপাত করছে অনেকেই। গত এক সপ্তাহ ধরে তীব্র শৈত প্রবাহ চলছে জয়পুরহাটের ৫টি উপজেলায়। প্রতিদিনই বেড়েই চলেছে শীতের তীব্রতা। সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে হাট-বাজারের দোকানপাট। প্রচন্ড ঠান্ডা ও ঘন কুয়াশার কারণে দিনের বেলাতেও হেড লাইট জ্বালিয়ে সড়ক মহাসড়ক গুলোতে ঝুঁকি নিয়ে চলছে যাত্রীবাহী বাস,ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন। ঠান্ডা জনীত রোগে প্রতিদিন জেলা আধুনিক হাসপাতালে আক্রান্ত রুগী-বিশেষ করে শিশুদের ভীড় বাড়ছে বেশী। রোদ অভাবে জেলার মিল চাতালে উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া সরিষা, মসূর, শাক-সবজিসহ বিভিন্ন সবজি ক্ষেতের ফসল নষ্ঠ হয়ে যাচ্ছে। কনকনে শীত.ঘন কুয়াশা ও হিমেল হাওয়ায় বিপর্যস্ত জয়পুরহাট জেলার দরিদ্র পীড়িত শ্রমজীবি মানুষরা সকাল দুপুর সন্ধ্যা রাতে এমনকি দিনের বেলাতেও বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা, হাট-বাজার-গ্রাম-গঞ্জে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করছে লক্ষ্য করা যায়। অপরদিকে জয়পুরহাটের নিউ মার্কেট, মৌসুমী মার্কেট, পৃথিবী কমপ্লেক্স, রেলষ্টেশন রেল লাইনের উপর ফুটপাতের পুরাতন কাপড়ের দোকানগুলোতে শীতবস্ত্র বিক্রির হিড়িক পড়ছে প্রতিদিন। শীত যতই ঘনিয়ে আসছে শীতবস্ত্র বিক্রি ততই বাড়ছে বলে জানালেন রেলষ্টেশন রেল লাইনের পুরাতন কাপড় ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন।
জানা গেছে, গত এক সপ্তাহ পুর্বে হঠাৎ করেই জয়পুরহাট ও পাশ্ববর্তী জেলার তাপমাত্রা আশংকাজনক ভাবে হ্্রাস পাওয়ায় তীব্র শীতের পাশাপাশি বইতে শুরু করে হিমেল বাতাস। যা এখনও অব্যাহত রয়েছে। গত এক সপ্তাহ ধরে সুর্যের মুখ দেখতে পারেনি জয়পুরহাট জেলার মানুষ। তীব্র শীত, হিমেল বাতাস আর ঘন কুয়াশায় জনজীবন স’বির হয়ে পড়েছে। অত্যন্ত নিম্নবিত্ত ও দরীদ্র মানুষজন শীতবস্ত্রের অভাবে খরকুটো, কাগজ ও পুরোনো টায়ার জালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। হাড় কাঁপানো শীত ও ঘন কুয়াশায় আকাশ সব সময় মেঘাচ্ছন্ন থাকায় নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষসহ শ্রমজীবিরা কাহিল হয়ে পড়েছে।
এদিকে প্রচন্ড শীতে ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতাল সহ জেলার বিভিন্ন উপজেলা স্বাস’্য কমপ্লেক্্ের রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। প্রতিদিন ভর্তি হচ্ছে প্রায় শতাধিক রোগী। স’ান সংকুলান না হওয়ায় বিভিন্ন হাসপাতালের ফ্লোরে গাদাগাদি করে রাখা হচ্ছে রোগী। প্রতিদিন দুই শতাধিক রোগী প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বাড়ী ফিড়ছে। ভর্তি রোগীদের মধ্যে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যাই বেশী। ঘন কুয়াশায় বীজতলা সহ সবজি ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। রোপা আমন ফসলের জন্য ইতিমধ্যেই জেলার বিভিন্ন স’ানে কৃষকরা বীজতলা তৈরী ও বীজের চারা রোপনের কাজ শুরু করেছে। তীব্র ও ঘন কুয়াশার কারনে বীজের চারা অজ্ঞাত রোগে শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। ফলে রোপা আমন মৌসুমে বীজ সংকট দেখা দিতে পারে। এ ছাড়া তীব্র শীত আর ঘন কুয়াশায় শাক সবজির ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ইতি মধ্যেই বিভিন্ন শাক সবজির ক্ষেতে দেখা দিয়েছে অজ্ঞাত রোগ। এই রোগে সবজির গাছ শুকিয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ।
ঘন কুয়াশা আর তীব্র শীতের কারনে নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষরা পড়েছে দারুন বিপাকে। সকাল ১০ টার পুর্বে মানুষজন বাসা থেকে বেড় না হওয়ায় এবং বিকেল ৫ টার মধ্যেই ঘরে ফেরায় রিকসা, ভ্যান, অটো রিকসা, সিএনজির চালকদের আয় কমে গেছে আশংকাজনক পর্যায়ে। ফলে এক বেলা খেয়ে কোন রকমে জীবন চালাচ্ছেন তারা। নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষদের ক্রয় ক্ষমতা নেমে এসেছে সর্বোচ্চ নীচে।
জয়পুরহাট সিভিল সার্জন ডা ঃ মোজাম্মেল হক জানায়, হঠাৎ করে শীতের তীব্রতা আশংকাজনক ভাবে বেড়ে যাওয়া এবং ঘন কুয়াশার কারনে ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগ অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে পানি বাহিত রোগবালাই বেড়েছে আশংকাজনক হারে। ডায়রিয়া রোগীদের স’ান সংকুলান হচ্ছে না জেলার কোন সরকারী হাসপাতালে। তবে চিকিৎসকদের অত্যন্ত সতর্কতার কারনে ঠান্ডাজনিত রোগে জেলার কোথাও কেউ মারা যায়নি বলেও তিনি দাবী করেন।
জেলা কৃষি সমপ্রসারন অধিদপ্তর জানায়, তীব্র ঘন কুয়াশার কারনে বীজতলা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তবে এ ঘন কুয়াশা দীর্ঘস’ায়ী না হলে মৌসুমী শাক সবজির তেমন ক্ষয়ক্ষতি হবে না বলেও জানান তারা। ঘন কুয়াশার কারনে শাক সবজির কিছুটা ক্ষতি হচ্ছে, প্রয়োজনীয় ঔষধ সেপ্র করলে এই রোগ দুর হবে। তবে ঘন কুয়াশার কারনে আগামী এক সপ্তাহ পর্যন্ত বীজচারা রোপন না করার জন্যও তারা কৃষকদের আহবান জানান। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং এই তাপমাত্রা কিছুটা বৃদ্ধি পাওয়ার পর বীজ চারা করার পরামর্শ দিয়েছেন জেলা কৃষি সমপ্রসারন কর্মকর্তা।
এস এম শফিকুল ইসলাম, জয়পুরহাট