আ হ ম ফয়সল, ঢাকা
জরিপের ফলাফল থেকে দেখাগেছে, সরকারী হাসপাতালে শতকরা ৭১ ভাগ ক্ষেত্রে ডাক্তারা সময় মত কর্মক্ষেত্রে উপস্থিত হয় না। এ ছাড়া শতকরা ৬৯ ভাগ শিশু স্বাস্থ্য্যসেবা কেন্দ্রে প্রবেশ করতে গিয়ে কোন না কোন সমস্যার সম্মুখীন হয়। স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের অভ্যন-রে কোথায় কোন বিভাগ, কখন কোন সেবা পাওয়া যাবে তার নির্দিষ্ট তালিকা খুঁজে পাওয়া যায় না।
স্বাস্থ্যসেবা ও সুশাসন’ বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের জন্য শিশু সংগঠন চাইল্ড পার্লামেন্টের সদস্যরা গত নভেম্বর (২০১১) মাসে সারা দেশে ২৪০টি পর্যবেক্ষণ চেকলিস্ট পূরণ ও ০৯টি এফজিডি এবং ৪৬৬টি সাধারণ জরিপ থেকে এ তথ্য পাওয়ায়।
এ জরিপ থেকে আরও যেসব তথ্যগলো উঠে এসেছে তা হচ্ছে- শতকরা ৭৫ জন শিশু জানিয়েছে, তাদেরকে লাইনে দাড়িয়ে টিকেট সংগ্রহ করতে হয়। এক্ষেত্রে তাদেরকে ১৫ মিনিট বা তারও অধিক সময় লাইনে দাড়িয়ে থাকতে হয় শুধুমাত্র টিকেটের জন্য। জরিপে শতকরা ৬৯ ভাগ উত্তরদাতা জানিয়েছে, শিশুদের জন্য কোন আলাদা লাইনের ব্যবস্থা নেই। যার ফলে তাদেরকে অনেক সমস্যায় পড়তে হয়। বিশেষ করে মেয়েদের ইভটিজিং এর শিকার হতে হয়। যদিও শতকরা ৭২ ভাগ শিশু জানিয়েছে, তাদেরকে টিকেট কাটতে যে খরচ হয় তা ১০ টাকার কম কিন’ বিশেষ অঞ্চলের দরিদ্র মানুষের জন্য এটাও কষ্টকর। একদিকে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা যেমন কষ্টকর, অন্যদিকে দালালরা অনবরত বিরক্ত করতে থাকে। এই পরিপ্রেক্ষিতে গবেষণায় অংশগ্রহণকারী শিশুদের মাঝে শতকরা ৮১ ভাগ মনে করে তাদের জন্য আলাদা লাইনের ব্যবস্থা থাকা দরকার।
স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোর মাঝে শতকরা ৩ ভাগই অবস্থিত ব্যস্ত রাস্তার পাশে, ১৬ ভাগ অবসি’ত জেলা সদরে, ১০ ভাগ উপজেলা সদরে, ৯ ভাগ পৌরসভা বা সিটি কর্পোরেশনে। মাত্র ১৮ ভাগ অবসি’ত ইউনিয়ন পরিষদ বা কমিউনিটিতে। সুতরাং এ চিত্র থেকে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে যে অধিকাংশ স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রসমূহের অবস্থান এমন জায়গায় যা শিশুদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। সঠিক নির্দেশনা না থাকার কারণেও শিশুরা বুঝতে পারে না কোন রোগ হলে কার কাছে কখন যেতে হবে।
জরিপে শতকরা ২৩ ভাগ উত্তরদাতার মতে কিশোর-কিশোরীদের জন্য বিশেষ স্বাস্থ্যসেবা পেয়ে থাকলেও ৪৫ ভাগ উত্তরদাতা জানিয়েছে তারা আসলে জানেনা এ ধরনের কোন স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হয় কিনা। এ জরিপে শতকরা মাত্র ১৯ ভাগ শিশুর কাছে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে অবস্থিত টয়লেটসমূহ ব্যবহার উপযোগী মনে হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের টয়লেট ব্যবহারের অযোগ্যতার কারণ হিসেবে দেখা যায় যে, অধিকাংশ সময়ই তা খুব নোংরা থাকে, টয়লেটের দরজা লাগানোর মত কোন ছিটকানি থাকে না, দরজা ভাঙ্গা থাকে, পানি থাকে না, বদনা বা অন্য কোন ব্যবস্থাো থাকে না।
ধুমপানকে আইন করে নিষিদ্ধ করা হলেও এখনো মানুষ যেখানে সেখানে অহরহ ধুমপান করে। এমনকি স্বাস্থ্য কেন্দ্রেও তা হচ্ছে। তাই গবেষণায় দেখা যায় রোগীর সাথে আসা লোকজন, স্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং ডাক্তারসহ সবাই রোগীদের সামনে ধুমপান করছে। মাঠ পর্যায় থেকে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে উঠে আসা তথ্য থেকে দেখা যায়, শিশু ওয়ার্ডে কর্মরত সেবা প্রদানকারী ব্যক্তিদের মাঝে শতকরা ৩১ ভাগ ব্যক্তির আচরণ শিশু বান্ধব নয়।
শতকরা মাত্র ২০ ভাগ জানিয়েছে যে তারা যে সেবা পায় তাতে তারা সন’ষ্ট। শতকরা ৬৬ ভাগ শিশু অভিমত দিয়েছে, সেবা মোটামুটি মানের অর্থাৎ তারা পুরোপুরি সন’ষ্ট নয়। তাদের মাঝে শতকরা ১২ ভাগ শিশু দৃঢ়তার সাথে জানিয়েছে যে তারা যে সেবা পায় তাতে তারা মোটেও সন’ষ্ট নয়। সেবা নিতে গিয়ে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে শিশুরা যেহেতু অনেকটা সময় ব্যয় করে, তাই এই সময়ে তাদের তৃষ্ণা মেটানোর জন্য নিরাপদ পানির প্রয়োজন হয়। জরিপ থেকে দেখা যায় যে, শতকরা ৩৫ ভাগ শিশু নিরাপদ পানীয় জলের ব্যবস্থা না থাকার কথা উল্লেখ করেছে। স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তিদের আচরণ তাদের কাছে মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়।