বাংলাদেশে আলোচিত, সমালোচিত ধর্মীয় বক্তা কুয়াকাটার হাফিজুর রহমান সিদ্দিকীর আলোচনা নিয়ে মন্তব্য করা লক্ষ্মীপুরের তরুণ সাংবাদিক জুনাইদ আল হাবিবের স্ট্যাটাস ভাইরাল হয়। বুধবার (১৯ফেব্রুয়ারি) রাতে জুনাইদ আল হাবিব তার ব্যক্তিগত ফেসবুক ওয়ালে হাফিজুর রহমান সিদ্দিকীর ওয়াজ নিয়ে একটি মন্তব্য করেন। যা মুহুর্তেই ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তার এ মন্তব্যের সাথে একমত পোষণ করে একের পর কমেন্ট করতে থাকেন নেটিজেনরা।
তরুণ সাংবাদিক জুনাইদ আল হাবিবের ওই পোস্টে এখন পর্যন্ত ২০০জন নেটিজেন হাফিজুর রহমান সিদ্দিকী সম্পর্কে তাদের ব্যক্তিগত অভিমত দিয়েছেন। আর ৫৫জন শেয়ার করেছেন। অনেকেই সে স্ট্যাটাস কপি করে ব্যক্তিগত ওয়ালে পোস্ট করছেন। অধিকাংশ নেটিজেনের বক্তব্যে সমর্থন মিলে তার স্ট্যাটাসের প্রতি।
নিচে হুবহু স্ট্যাটাসটি তুলে ধরা হলো, “আমি যখন ক্লাস টেনে। তখন এ হুজুরের ওয়াজ শুনতাম। ওনার ওয়াজ শুনে শুনে আমার অনেক সময় কেটেছে। কিন্তু দিন যত যায়, এ হুজুরের প্রতি আমার শ্রদ্ধাবোধ কমে যাচ্ছে। আজ আমার এলাকা লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের মুন্সিগঞ্জে এ বক্তা আলোচনা রাখছিলেন। কিন্তু দূরে থাকার কারণে যাওয়া হয়নি। তারপরেও ভাবলাম, একটু ইউটিউব চ্যানেলে আজকের ওয়াজটা শুনি। শুনতে থাকলাম। তার ওয়াজের কিছুক্ষণ পর পর দলের দালালি কেন করো? দলের দালালি কেন করো? ওরে যুবক, আকামটা কেন করছো? পড়া লেখা করো, আমাগো বিরুদ্ধে লিখলে আল্লাহ বেজার হবে, তুমি ধ্বংস হয়ে যাবা! তোমার লেখাতে আমাদের বিন্দুমাত্র ক্ষতি হবে না। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, ওনার আলোচনার বেশির অংশজুড়েই ছিল, গীবতে ভরা। আর গজব দেয়া। বলেন, একজন আলেম, একজন নামকরা বক্তার আলোচনা কি এসব হতে পারে? এর আগেও এ বক্তা এক মাহফিলে ওরে বাটপার বলে আলোচিত, সমালোচিত হয়েছেন। বাংলাদেশে তাহেরী ভন্ড যখন বলছিলো, ঢেলে দেই? তখন তার এ কথার এ শব্দগুলো ট্রল করে টি-শার্ট বানানো শুরু হয়, তারপর এখন ওরে বাটপার। এ বক্তার উচিত ছিল, কারো সমালোচনা না করে, কোরআন-হাদিস অনুযায়ী মানুষের নিকট ইসলামের সঠিক বার্তাটা পৌঁছে দেয়া। আমি তার একজন বক্ত ছিলাম। এখন তার প্রতি আমার ন্যূনতম শ্রদ্ধাবোধ নেই৷ বলেন, আজ সমাজে এত অশান্তি কেন?
এসব আলেমরাইতো এর গোড়া। হেলিকপ্টার দিয়ে আসবে, আর এক ঘন্টা ওয়াজ করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিবে। অথচ, বাড়ির কাছের মসজিদের ইমাম বছরে ৫০হাজার টাকা আয় করতে পারেন না। তার জন্য ধরা চাঁদা আটকে থাকে মাসের পর মাস। ইসলাম শান্তির ধর্ম, আসুন, এ সব অশান্তির আলেমদের বর্জন করে সমাজে শান্তি ফিরিয়ে আনি।”
বেল্লাল হোসেন নামের একজন লিখেছেন, “মনের মত কথা বলছেন। ছোটবেলা থেকে ভালো জানতেন এখন আপনার বুদ্ধি হয়েছে আপনি এখন ভালো-খারাপ বুঝতে শিখেছেন। এখন আপনি সঠিক টা খুঁজে নিয়েছেন এর জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। কিন্তু কিছু মানুষ তা পারে না। হাফিজুর রহমানের ওয়াজে গীবতের কারণে মুসলমানদের নিয়ে অন্য ধর্মের মানুষ হাসাহাসি করে যা একজন মুসলমানের কাছে লজ্জাজনক। আজ ওয়াজের মাঠে ময়দানে এক হুজুর অন্য হুজুরের সমালোচনা করে গালিগালাজ করে। এটা শুরু করেছিলেন হাফিজুর রহমান। তার হিংসা কিচ্ছা কাহিনীর জন্য আজ ওয়াজ মাহফিল মানুষের কাছে তামাশার পত্র।”
তার পোস্টে মাছুম জুলকারনাইন নামে একজন মন্তব্য করেন, “এরা ভণ্ডের দল। কাউমী মাদ্রাসা গুলো ওহাবী আন্দোলনের ফল। ভারতের দেওবন্দ মাদ্রাসা কাশেম নানুতুবি নামে ওহাবী আন্দোলনের এক মাওলানা প্রতিষ্ঠা করেছিলো। সারা ভারতীয় উপমহাদেশে যত কাওমী মাদ্রাসা আছে সবাই এই দেওবন্দ মাদ্রাসার সিলেবাস অনুসরণ করে। যার কারণে সমাজে ফেতনা ফ্যাসাদ সৃষ্টি হয়। তাই আসুন এইসব কাউমী (ওহাবী সাম্প্রদায়িক) মাদ্রাসাগুলো বর্জন করি।”
জহিরুল শামীম নামে একজন বললেন, “তার ওয়াজ শুনেছি। যতটুকু বুঝলাম এই ওয়াজে তার আমল থাকলে তার এই অধঃপতন হতো না। দালালি ছাড়ার কথা বলছে অথচ সে নিজেই করতেছে। আবার ছাত্রদের কোন দল করতে নিষেধ করছে অথচ তার ওয়াজ উপলক্ষে আশে পাশের সব কওমি মাদ্রাসা বন্ধ দিয়ে সব কচিকাঁচা পোলাপানকে নিয়ে আসছে। সমালোচনা করতে নিষেধ করেছে সে সমালোচনা দিয়ে শুরু ও শেষ করেছে।”
এস এম শরীফ উদ্দিন নামে একজন লিখলেন, “আজ দুপরে হোটেলে খেতে গেলাম এক কাস্টমার দোকানদারকে বলছে এবার চরমোনাই মাহফিলে যাবেন না?দোকানদার বললো যাবো,আপনি যাবেন না?কাস্টমার বললো ভাবছিলাম যাবো তবে ইদানিং চরমোনাইর কান্ড দেখে যাওয়ার ইচ্ছে হারিয়ে গেছে।”
রাসেল মাহমুদ নয়ন নামের একজন লিখলেন, “আমিও ওনারে খুব ভালোবাসতাম..কিন্তু এখন দেখি ওনার আলোচনায় গিবতে ভরা..তাই এখন ঘৃনা ছাড়া আর কিছুই নাই ওনার প্রতি।”
এভাবেই অগণিত নেটিজেন তার পোস্টে মন্তব্য করছেন। যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।