পার্বত্যাঞ্চলের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের শীর্ষ ধর্মীয় গুরু মহা পরিনির্বাণ লাভ প্রাপ্ত শ্রাবকবুদ্ধ শ্রীমৎ সাধনানন্দ মহাস্থবিরকে (বনভান্তে); রাঙামাটির রাজবন বিহারে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে হাজারো মানুষের ঢল নেমেছে।
এক নজরে ভান্তেকে দেখতে এবং শেষ শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য বিভিন্ন অঞ্চল থেকে হাজারো মানুষ এখানে ভিড় জমিয়েছে পুরো রাঙামাটি শহরে। বিরামহীনভাবে চলছে বনভান্তেকে শ্রদ্ধা নিবেদন। চলবে আরো ছয় দিন। আজ সকালে বনভান্তের মরদেহ বনবিহার মাঠে রাখার পর বিকালে মুল বিহারের দেশনালয়ে আনা হয়। এখানেও চলছে বিরামহীন শ্রদ্ধা নিবেদন। আজ আবার একই সময়ে বন বিহার মাঠে রাখা হবে। এখানে সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা নিবেদনের সুযোগ পাবেন। বুধবার সকালে বনভন্তের মরদেহ রাজবন বিহার উত্তর মাঠে নিয়ে আসা হলে তিন পার্বত্য জেলার বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ভক্ত ও অনুরাগীরা একে একে বনভন্তেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। একটি ফ্রিজেন এম্বুলেন্স ভ্যানে করে বনভন্তের শবদেহ পুর্ণার্থীদের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য মাঠে উন্মুক্ত করে রাখা হয়। বনভন্তেকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে মঙ্গলবার রাত থেকে রাজবন বিহারে হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে। বনভন্তকে শেষবারের মতো শ্রদ্ধা জানাতে এসে ভক্ত ও অনুরাগীরা সারিবদ্ধভাবে একে একে ভন্তের মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় এবং কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এসময় সা…ধু, সা…..ধু ধ্বনিতে পুরো বিহার প্রাঙ্গনে এক অন্যরকম পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
অন্যদিকে বনভান্তের মরদেহ মমি করে সংরক্ষণ করা হবে, নাকি দাহ করা হবে এই ব্যপারে সকাল ১১ টায় বনবিহারে ভান্তের শিষ্যমন্ডলী, বিহার পরিচালনা কমিটি পার্বত্য এরাকার বয়োজ্যেষ্ঠরা এক বৈঠকে বসেন। তবে তারা সুনিদ্ষ্িট কোন সিদ্ধাত নিতে পারেনি। ভান্তের শিষ্যমন্ডলী ভান্তে মমি করে সংরক্ষণের প্রস্তাব দিয়েছেন। অন্য দিকে ভান্তের মরদেহ মমি করে রাখা সম্ভব হবে কিনা এই নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে দ্বিমত থাকায় শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে যতদিন সম্ভব ভান্তেকে সংরক্ষণের চেষ্টা করা হবে।
এর ভিতরে ভান্তের জন্য প্রতিদিন ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী নানান অনুষ্ঠান পালন করা হবে। এছাড়া বনভান্তের খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, রাঙামাটি জেলার যেসব স্থানে জীবিত থাকা অবস্থায় দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করেছিলেন সেসব স্থানে বনভান্তের মরদেহ নেওয়া হবে।
রাজবনবিহার পরিচালনা কমিটির প্রধান উপদেষ্টা চাকমা সার্কেল চিফ ব্যারিস্টার রাজা দেবাশীষ রায় জানান, ভিক্ষুসংঘের সঙ্গে আলোচনা করে ধর্মীয় বিধান এবং বিজ্ঞানসম্মতভাবে যতোদিন বনভন্তের দেহ সংরক্ষণ করে রাখা সম্ভব হয় তাই করা হবে। তবে শনিবার বনভন্তের সংঘদান অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান তিনি।
বনবিহার সূত্রে জানা গেছে, যতোদিন পুন্যার্থীদের ভীড় থাকবে ততদিনই বনভন্তেকে দেখার সুযোগ রাখা হবে। জেলা আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জনসংহতি সমিতি, এলডিপিসহ জেলার বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন বনভন্তের মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছে। এর আগে এ ধর্মীয় গুরুর মরদেহ মঙ্গলবার রাত ১টায় রাঙামাটি রাজবন বিহারে আনা হয়। এ সময় রাস্তার দুই ধারে দাঁড়ানো হাজার হাজার বৌদ্ধ নরনারী কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং ফুল দিয়ে প্রয়াত ধর্মগুরুর প্রতি শ্রদ্ধা জানান। রাতে রাজবন বিহারের মাঠে হাজার হাজার ভক্ত ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে যোগ দেন। ধর্মীয় প্রার্থনা পরিচালনা করেন বনভন্তের শিষ্য প্রজ্ঞালঙ্কর মহাস্থবির ও নন্দপাল মহাস্থবির। এ সময় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার, চাকমা সার্কেল চিফ রাজা দেবাশীষ রায়, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা, রাঙামাটি ব্রিগেড কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামসুজ্জামান পিএসসি, খাগড়াছড়ি মং সার্কেল চিফসহ পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, গত সোমবার বিকেলে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বন ভান্তে মহাপরি নির্বাণ লাভ (দেহত্যাগ) করেন। গত ২৭ জানুয়ারি এ আর্যশ্রাবক বুদ্ধ বনভন্তেকে রাঙামাটি থেকে মুমূর্ষু অবস্থায় হেলিকপ্টারযোগে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত ৮ জানুয়ারি ৯৩তম জন্মদিন পালন করা এ মহান স্বাধক আর্যপুরুষ বার্ধক্যজনিত রোগ ছাড়াও উচ্চ রক্তচাপ, ঠাণ্ডাজনিত সমস্যা এবং ফুসফুসের সমস্যায় ভুগছিলেন।
ইউনাইটে নিউজ ২৪ ডট কম/আলমগীর মানিক/রাঙ্গামাটি