ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের দ্বিতীয় রাজধানী বলে যে শহরের এক সময়ে পরিচিতি ছিল পৃথিবীব্যাপী, সেই কলকাতার সব থেকে পরিচিত ল্যান্ডমার্ক হাওড়া ব্রিজের ইস্পাতের স্তম্ভে ক্ষয় ধরেছে শহরবাসীরই বদভ্যাসের কারণে।
হাওড়া ব্রিজ যার আনুষ্ঠানিক নাম রবীন্দ্র সেতু এখন পরিণত হয়েছে এক বিশাল পিকদানিতে৻
কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষের হিসাব অনুযায়ী প্রায় পাঁচলক্ষ মানুষ প্রতিদিন হেঁটে হাওড়া ব্রিজ পার হন এবং তারা বলছেন এধরনের হাজার হাজার মানুষ পারাপারের সময়ে পান বা গুটখার পিক ফেলে নষ্ট করে দিচ্ছে সেতুর ইস্পাতের স্তম্ভগুলো৻
সেতুর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব যাঁদের, সেই কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষ চিন্তাভাবনা করে বার করেছে পানের পিক থেকে হাওড়া ব্রিজকে বাঁচানোর এক উপায়৻
সেতুর দেখভাল করেন যে ইঞ্জিনিয়ার, সেই অমিতাভ চ্যাটার্জী বলছেন কীভাবে স্তম্ভগুলোর গোড়া ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে।
“দেখুন এই স্তম্ভের গোড়াটা কতটা ফাঁক হয়ে গেছে৻ ছয় মিলিমিটার মোটা ছিল, এখন সেটা অর্ধেক হয়ে গেছে৻”
উত্তর বন্দর থানার এক কনস্টেবল পার্বতী চৌধুরীর কথায় লাখ লাখ মানুষের মধ্যে কে যে পিক ফেলছেন, সেটা ধরা অসম্ভব৻
“আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে থাকি, সেখানে হয়তো কেউ পিক ফেলছেন না৻ কিন্তু অন্যদিকে ফেলছেন৻ ধরতে পারলেই আমরা থানায় নিয়ে যাই বা জরিমানা করি৻”
কলকাতা আর গঙ্গার উল্টোদিকের যমজ শহর হাওড়া এই দুইকে জুড়তে ১৯৩৭ সালে তৈরি হয়েছিল এই হাওড়া ব্রিজ৻ একটাও স্ক্রু ব্যবহার না করে ২৬৫০০ টন ইস্পাতের এই বিশাল সেতুকে ধরে রেখেছে ৭৮টা স্তম্ভ৻
বন্দর আর পুলিশ কর্তারা বলছেন, নজরদারি বাড়িয়ে বা সচেতনতা বাড়ানোর জন্য প্রচার চালিয়ে বিশেষ লাভ হয় নি৻ তাই স্তম্ভগুলো রক্ষা করার ব্যবস্থা নিজেদেরই করতে হচ্ছে৻
রাসায়নিকের আস্তরন দিয়ে স্তম্ভগুলোকে রঙ করা হয়েছিল, কিন্তু, তাতে খুব একটা কাজ হয় নি৻ বন্দরের চেয়ারম্যান এম এল মীনা বলছিলেন তাই ৭৮ টা স্তম্ভকেই এবার ফাইবার গ্লাস দিয়ে ঢেকে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ৻
“আমরা মাঝে মাঝেই ইস্পাতের পাতগুলো পাল্টাই৻ কিন্তু এবার পরিকল্পনা নিয়েছি স্তম্ভগুলো ফাইবার গ্লাস দিয়ে ঢেকে দেওয়ার৻ কিছুদিন পরে সেগুলো খুলে পরিষ্কার করে আবারও লাগিয়ে দেওয়া যাবে,” মন্তব্য বন্দর চেয়ারম্যানের।
তবে স্তম্ভগুলো শুধু ফাইবার গ্লাস দিয়ে ঢেকে দিলেই যে পথচারীরা পান-গুটখার পিক ফেলা বন্ধ করবেন, সেই ভরসা নেই কর্তৃপক্ষের৻ তাই বিভিন্ন ঠাকুর-দেবতার ছবিও লাগানো হতে পারে, যাতে ধর্মভীরু মানুষ পাপের ভয়ে স্তম্ভের গায়ে পিক ফেলা থেকে বিরত থাকেন।
ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/আন্তর্জাতিক ডেস্ক