স্টাফ রিপোর্টার :: চলতি বছর সরকারি ব্যবস্থাপনায় তিনটি প্যাকেজের মাধ্যমে হজ পালনের সুযোগ রেখে ‘হজ প্যাকেজ, ১৪৪১ হিজরি/২০২০ খ্রিষ্টাব্দ’-এর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এবার হজ পালনে প্যাকেজ-১-এ চার লাখ ২৫ হাজার টাকা এবং প্যাকেজ-২-এ তিন লাখ ৬০ হাজার টাকা খরচ করতে হবে। এ ছাড়া এবার প্রথমবারের মতো প্যাকেজে-৩-এ ব্যয় ধরা হয়েছে তিন লাখ ১৫ হাজার টাকা। গত বছরের তুলনায় হজ প্যাকেজ-১-এ খরচ বেড়েছে ছয় হাজার ৫০০ টাকা ও প্যাকেজ-২-এ বেড়েছে ১৬ হাজার টাকা।
সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে তার কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এসব হজ প্যাকেজ অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আগে দুটি প্যাকেজের মাধ্যমে হজে যাওয়া যেত। সরকারি ব্যবস্থাপনার জন্য ২০২০ সালে প্রথমবারের মতো তিন লাখ ১৫ হাজার টাকার নতুন প্যাকেজ-৩ প্রস্তাব করা হয়েছে। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে চলতি বছরের ৩১ জুলাই (৯ জিলহজ) পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। সৌদি আরবের সঙ্গে হজচুক্তি অনুযায়ী, চলতি বছর সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এক লাখ ৩৭ হাজার ১৯৮ জন হজ করার সুযোগ পাবেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৭ হাজার ১৯৮ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এক লাখ ২০ হাজার জন হজ করতে পারবেন।
খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, এ তিনটি প্যাকেজ অনুসরণ করে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায়ও হজ এজেন্সিগুলোকে যাত্রী পরিবহন করতে হবে। দূরত্বের ওপর ভিত্তি করে এসব প্যাকেজ নির্ধারণ করা হয়েছে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্যাকেজ-১-এর হজযাত্রীরা পবিত্র মসজিদুল হারাম চত্বরের সীমানা থেকে সর্বোচ্চ ৭০০ মিটারের মধ্যে, প্যাকেজ-২-এর হজযাত্রীরা সর্বোচ্চ এক হাজার ৫০০ মিটারের মধ্যে এবং প্যাকেজ-৩-এর হজযাত্রীরা এক হাজার ৫০০ মিটারে অধিক দূরত্বে অবস্থান করবেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, এ বছর হজযাত্রীদের কাছ থেকে বিমানের টিকিট বাবদ নেওয়া অর্থ হজ এজেন্সি ব্যাংক থেকে তুলতে পারবে না। হজযাত্রীর সংখ্যা অনুযায়ী সরাসরি পে-অর্ডারের মাধ্যমে এয়ারলাইন্সকে পরিশোধ করতে হবে। সৌদি আরবের বিভিন্ন সার্ভিস চার্জ ও পরিবহন বাবদ নেওয়া অর্থ ইন্টারন্যাশনাল ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বরের (আইবিএএন) মাধ্যমে সৌদি আরবে পাঠানো ছাড়া এজেন্সি উত্তোলন করতে পারবে না। হজযাত্রীদের থাকা-খাওয়া, বিমানভাড়াসহ আনুষঙ্গিক সব খরচ ধরেই হজ প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সরকারি ব্যবস্থাপনার প্যাকেজ তিনটির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে হজ এজেন্সিগুলো একাধিক প্যাকেজ ঘোষণা করতে পারবে। এবার শতভাগ হজযাত্রীর সৌদি আরবের প্রি-অ্যারাইভাল ইমিগ্রেশন ঢাকায় সম্পন্ন করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি হজ এজেন্সি কমপক্ষে ১০০ জন এবং সর্বোচ্চ ৩০০ জন পাঠাতে পারবে। প্রতি ৪৪ জনের জন্য একজন করে গাইড নিয়োগ করতে হবে। কোনো হজ এজেন্সিকে কোনো অবস্থাতেই ৩০০-এর অধিক টিকিট দেওয়া যাবে না।
তিনি বলেন, কোরবানির অর্থ ইসলামী ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করতে সৌদি সরকার পরামর্শ দিয়েছে। এ জন্য প্যাকেজ মূল্যের অতিরিক্ত ৫২৫ সৌদি রিয়ালের সমপরিমাণ, অর্থাৎ ১২ হাজার ৭৫ টাকা সঙ্গে নিতে হবে। বিমান বাংলাদেশ ও সৌদিয়া এয়ারলাইন্সের পাশাপাশি নাস এয়ারলাইন্সের মাধ্যমে এবার হজযাত্রী পরিবহন করা নিয়ে আলোচনা চলছে। বিমান ভাড়া এক লাখ ৩৮ হাজার টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। গতবার একটা বিশেষ ছাড়ে ১০ হাজার টাকা কমানো হয়েছিল।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এ বছরও রুট টু ইনভাইটেশনের অধীনে শতভাগ হজযাত্রীর সৌদি আরবের প্রি-অ্যারাইভাল ইমিগ্রেশন ঢাকায় সম্পন্ন করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। হজযাত্রীদের পাসপোর্টের মেয়াদ ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত থাকতে হবে। এবার সব হজ ফ্লাইট ডেডিকেটেড (শুধুই হজযাত্রী পরিবহনের ফ্লাইট) করতে আলোচনা চলছে বলেও জানান তিনি।
এ ছাড়া মন্ত্রিসভা ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০২০’-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন এবং ‘জাতীয় ডিজিটাল কমার্স (সংশোধিত) নীতিমালা, ২০২০’-এর খসড়ার অনুমোদন দিয়েছে।
গত ৪ থেকে ৭ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইতালি সফর, গত বছরের ৯ থেকে ১২ অক্টোবর বাণিজ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের লন্ডনে অনুষ্ঠিত বাণিজ্যমন্ত্রীদের সম্মেলনে যোগদান, গত বছরের ২২-২৩ অক্টোবর আসামের গুয়াহাটিতে অনুষ্ঠিত ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ স্টেকহোল্ডার মিট শীর্ষক সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রীর যোগদান এবং গত ৭-৮ জানুয়ারি থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-থাইল্যান্ড জয়েন্ট ট্রেড কমিটির বৈঠকে বাণিজ্যমন্ত্রীর যোগদানের বিষয়ে মন্ত্রিসভাকে অবহিত করা হয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বইয়ের মোড়ক উন্মোচন :প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন সম্পাদিত ‘ভাষণসমগ্র, শেখ মুজিবুর রহমান’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেছেন। গতকাল দুপুরে মন্ত্রিপরিষদ বৈঠক শেষে তার কার্যালয়ে তিনি বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন। বইটিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া ১৯৫৫ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত ১১৮টি ভাষণ লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। বইটির ভূমিকা লিখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চারুলিপি প্রকাশন থেকে বইটি প্রকাশিত হয়েছে।
বিদ্যুৎ খাতে আরও জাপানি বিনিয়োগের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর :বাসস জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে বিদ্যুতের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে আরও জাপানি বিনিয়োগ প্রত্যাশা করেছেন। তিনি বলেন, দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং উন্নয়নমূলক কাজের সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুতের চাহিদাও দ্রুত বাড়ছে। কাজেই চাহিদা পূরণের জন্য আমাদের খাতটিতে আরও বিনিয়োগের প্রয়োজন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গতকাল অপরাহেপ্ত তার কার্যালয়ে (পিএমও) জাপানের সর্ববৃহৎ বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রতিষ্ঠান জিরা (জেইআরএ) কোম্পানির প্রেসিডেন্ট সাতোশি ওনদা সৌজন্য সাক্ষাৎকালে একথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে বিভিন্ন জাপানি কোম্পানির বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বৈঠকে দেশের বিদ্যুৎ খাতের সম্প্রসারণে তার সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপেরও উল্লেখ করেন।
সাতোশি ওনদা প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন, তাদের কোম্পানি জাপানে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে, যা দেশের মোট চাহিদার ৫০ শতাংশ। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে রিলায়েন্স বাংলাদেশ পাওয়ার এবং এলএনজি কোম্পানির যৌথ প্রকল্প সম্পর্কেও প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন। যেটি দেশের মেঘনা ঘাটে একটি ৭১৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে। এই বিদ্যুৎকেন্দ্রে ২০২২ সাল নাগাদ উৎপাদন শুরু হবে।
প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি এবং খনিজসম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, বিদ্যুৎ, জ্বালানি এবং খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, পিএমও সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি এবং সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান মুহম্মদ আজিজ খান এ সময় উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।