ডেস্ক রিপোর্ট:: কিশোরগঞ্জের ভৈরবে পরকীয়ার জেরে রেলওয়ে কর্মচারী স্বামী মাহবুবুর রহমানকে হত্যার দায়ে স্ত্রী মোছা. রোকসানা আক্তার (৩৪) ও তার প্রেমিক আসিফ আহম্মেদকে (২৬) মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কিশোরগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-২ আদালতের বিচারক শাম্মী হাসিনা পারভীন আসামিদের উপস্থিতিতে এ রায় দেন। একইসঙ্গে প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ৬ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এপিপি অ্যাডভোকেট রাখাল চন্দ্র দাস ও মামলার বাদী নিহতের বড় ভাই মো. হাবিবুর রহমান।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রোকসানা আক্তার ভৈরব উপজেলার চন্ডিবের উত্তরপাড়া গ্রামের মো. শহিদ মিয়ার মেয়ে ও তার প্রেমিক আসিফ আহম্মেদ একই এলাকার বাবুল আহম্মেদের ছেলে।

মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা গেছে, মাহবুবুর রহমান রেলওয়ে বিভাগে ঢাকার কমলাপুরে চাকরি করতেন। চাকরির সুবাদে ঢাকায় থাকতেন মাহবুবুর রহমান। স্ত্রী ও তিন সন্তান ভৈরবে চন্ডিবের উত্তরপাড়া তার বড় ভাইয়ের বাসায় থাকতেন। মাহবুবুর রহমান প্রতি সপ্তাহে স্ত্রী ও সন্তানের কাছে আসতেন। ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর দুই দিনের ছুটি নিয়ে রাত ৮টায় বাড়ি আসেন মাহবুবুর রহমান। রাতে খাওয়া দাওয়া শেষে ঘুমিয়ে পড়েন। পরের দিন ভোরে বাসার ভেতর থেকে তার রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এটিকে ডাকাতির ঘটনা বলে প্রচার করেন তার স্ত্রী।

হত্যাকাণ্ডের পর দিন মাহবুবের বড় ভাই বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের আসামি করে ভৈরব থানায় হত্যা মামলা করেন। থানার তৎকালীন ওসি মো. শাহিন ঘটনাস্থলে এসে ডাকাতির ঘটনায় সন্দেহ পোষণ করে স্ত্রীকে হাসপাতাল থেকে আটক করেন। পরে জিজ্ঞাসাবাদে রোখসানা আক্তার পুলিশের কাছে স্বীকার করেন বাসার কাছে প্রতিবেশী কলেজছাত্র আসিফের সঙ্গে তার প্রেম ছিল। মাহবুবুর ঢাকায় থাকলে রাতে প্রেমিকের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে জড়ান রোখসানা। পরে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার দিন রাতে মাহবুবুরকে হত্যার উদ্দেশ্যে তার স্ত্রী রোকসানা আক্তার পায়েসের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাওয়ান। ওইদিন রাতে রোকসানা ও তার প্রেমিক আসিফ আহম্মেদ মাহবুবুর রহমানকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে বুকে আঘাত করে হত্যা করেন।

তদন্ত শেষে ২০২০ সালের ৩০ জুন ভৈরব থানার তৎকালীন তদন্তকারী কর্মকর্তা বাহালুল খান আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামিকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেন। রোকসানা গ্রেপ্তারের পর আসিফ আহম্মেদের সঙ্গে তার পরকীয়ার সম্পর্ক ও হত্যায় জড়িত বলে কিশোরগঞ্জ আদালতে খুনের কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দেন তারা। অবশেষে দীর্ঘ ৫ বছর পর বৃহস্পতিবার দুপুরে তাদের ফাঁসির আদেশ দেন আদালত।

মামলার বাদী ও নিহতের বড় ভাই মো. হাবিবুর রহমান বলেন, আমরা আদালতে ন্যায়বিচার পেয়েছি। আমরা আশা করি এই রায় অতিদ্রুত কার্যকর হবে।

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here