ডেস্ক রিপোর্ট::  চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার পারিবারিক কলহের জেরে স্বামীর রডের আঘাতে নয়নতারা (৩৫) নামের এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। এসময় মেয়ে টুনি খাতুনও (১৫) ওই রডের আঘাতে গুরুতর আহত হয়। তাকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।

সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে সুমিরদিয়া গ্রামের কলোনীপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পরই অভিযুক্ত স্বামী আনোয়ার হোসেন পলাতক রয়েছেন। ইতোমধ্যে পুলিশের একাধিক টিম অভিযুক্ত আনোয়ারকে ধরতে মাঠে নেমেছে।

নিহত নয়নতারা সুমিরদিয়া গ্রামের কলোনিপাড়ার লন্ডি ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী। তার দুই সন্তানের মধ্যে মেয়ে টুনি খাতুন চুয়াডাঙ্গা আদর্শ বালিকা বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী। ছেলের আদিল মাদরাসায় পড়াশোনা করে।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন যাবত পারিবারিক কলহের জেরে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সমস্যা চলে আসছিল। এ কারণে প্রায় সময় নয়নতারা বাপের বাড়ি মেহেরপুরের পিরোজপুরে থাকতেন। ১০/১২ দিন পর গতকাল রাতে সন্তানদের নিয়ে বাপের বাড়ি থেকে সুমিরদিয়ায় স্বামীর বাড়ি আসেন।

আহত মেয়ে টুনি খাতুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার বাবা আমাদের দেখাশোনা করত না। সংসারের কোনো খরচও দিত না। এ নিয়ে বাবা-মায়ের সঙ্গে গণ্ডগোল হতো। বাধ্য হয়ে আমরা নানি বাড়ি চলে যাই। প্রায় ১০/১২ দিন নানি বাড়ি থাকার পর গতকাল রাতে বাড়িতে আসি। রাতের খাবার খেয়ে আমি ও আমার মা ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। এসময় আমার বাবা এসে মাকে বলে ‘তুই এ বাড়িতে কেন এসেছিস? এরপর তর্কবিতর্ক হলে বাবা লোহার রড দিয়ে মায়ের মাথায় আঘাত করে মা। বাবাকে ঠেকাতে গেলে আমার মাথায়ও আঘাত করে। ঘটনাস্থলেই মা মারা যায়।

টুনি আরও বলেন, আবার মাকে প্রায় সময় মারধর করতো বাবা। আমার সঙ্গেও খারাপ আচরণ করতো। আমার পড়াশোনার জন্য জোরাজোরি করার কারণে আজকে বাসায় আসে মা। যদি না আসতাম তাহলে মা বেঁচে থাকতো বলে কান্নায় ভেঙে পড়ে টুনি।

নয়নতারার মরদেহ পুলিশ সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করে সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে। অভিযুক্ত আনোয়ারের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করেন স্বজনেরা।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. সোহরাব হোসেন বলেন, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, টুনির মাথায় লোহার রড দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। সেখানে বেশ কিছু সেলাই দেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ভর্তি করা হয়েছে। তবে সে শঙ্কামুক্ত নয়।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আনিসুজ্জামান লালন বলেন, দীর্ঘদিন যাবত স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পারিবারিক কলহ বিরাজ করছিল। এরই জের ধরে স্ত্রীকে মাথায় লোহার রড দিয়ে আঘাত করে আনোয়ার। ঘটনাস্থলেই স্ত্রী মারা যায়। সেই রডে মেয়ে টুনিও আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। এঘটনার পরই অভিযুক্ত স্বামী আনোয়ার পালিয়ে যায়। পুলিশ অভিযুক্তকে ধরতে অভিযান চালাচ্ছে। এ ঘটনায় আইনগত বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here