আরিফ চৌধুরী শুভ :: স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী কিভাবে সার্বজনীন হবে বলেন? এটা চাইলেওতো করা যাবে না। কোন সরকারই করতে পারবে না। পৃথিবীর কোন রাষ্ট্রেই এমন আয়োজন কখনো সার্বজনীন হয়েছে বলে আমার জানা নেই। এবার নিশ্চয় আপনি গুগলে সার্চ দিয়ে আমাকে মিথ্যে প্রমাণ করার চেষ্টা করবেন।
আচ্ছা, আমরা কি আমাদের ৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধটা সার্বজনীন করতে পেরেছি? কোটি কোটি নারী-পুরুষ নিজেকে বাঁচাতে, সম্ভ্রম রক্ষা করতে পাড়ি দিয়েছেন প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতে। একটা অংশ দেশ মাতৃকাকে রক্ষা করতে যুদ্ধ চালিয়ে গেছেন, আরেকটা অংশ দেশ ও দেশের বাহিরে যেভাবেই পেরেছেন দেশ স্বাধীনের পক্ষে কাজ করে গেছেন নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে, কিন্তু এটাওতো দিবালোকের মতো সত্য, একটা বিরাট অংশ পাকিস্তানীদের দোসর হয়ে স্বাধীনতার বিপক্ষে লড়েছেন ৭১ সালে। যারা সেদিনের মতো এখনো নিজেদেরকে বাংলাদেশের বিপক্ষে রেখেছেন, তারা কিভাবে স্বাধীনতা দিবসের সুবর্ণ জয়ন্তীতে অংশ নিয়ে সেটিকে সার্বজনীন আয়োজন ভাববেন। কোনদিনও তারা সেটি করবেন না। কিন্তু তারপরেও এই আয়োজন সবার জন্য উন্মুক্ত ও সার্বজনীন।
একটা পরিবারের অনেকগুলো সন্তানের মধ্যে একটা সন্তান যদি বখে যায়, তবুও বাবা-মা তাকে সন্তান হিসেবেই পরিচয় দিতে হয়। অত্যন্ত দু:খজনক হলেও সত্য, এই বাংলাদেশ ৭১ এ বখে যাওয়া তার সন্তানদের এখনো নাগরিক হিসেবেই পরিচয় দিচ্ছে। নতুবা বাংলাদেশেই তারা হতো বাঙ্গালী রোহিঙ্গা! বাংলাদেশ যে তাদের নাগরিক হিসেবে স্বীকার করছে, আমি মনে করি এটাই তাদের স্বাধীনতা। অন্তত এই কৃতজ্ঞতাবোধ থাকলেও তারা স্বাধীনতা দিবসের সার্বজনীন আয়োজন নিয়ে হট্টগোল না করে, এটাকে অর্থবহ করে তুলতো। আমি জানি তারা কোনদিনও করবেন না। বিরোধীতা করাই তাদের জীবনের একটা বড় ফ্যাশন। এটা তাদেরকে বাঁচিয়ে রাখে সব সরকারের আমলে। তাই আমরাও তাদের মেনে নিয়েছি আমাদের উচ্ছিষ্ট অংশ হিসেবে।
রাষ্ট্রের যেকোন কাজের সর্বপ্রথম বিরোধীতা করতে দেখি বাম সংগঠনগুলোকে।ধন্যবাদ শব্দটা তাদের ডায়েরিতে সম্ভবত নেই। আপনার বাড়িতে যদি তারা নারায়ন হয়ে আসেন আর আপনি যদি তাদের খালি মুখে ফিরিয়ে দেন, তাহলেও তারা আপনার সমালোচনা করবে আপনার সামর্থ না দেখেই। আবার আপনি যদি তাদের এককাপ দুধ খেতে দেন, তাহলে দুধের রং সাদা কেন সেটি নিয়েই তাদের অতি পান্ডিত্বের সমালোচনা শুরু হবে।
জি এটাই হলো আমাদের ‘প্রগতিশীল বাম’ সংগঠনগুলোর বৈশিষ্ট। তবে ভিন্নমত থাকবে এটাই স্বাভাবিক, কিন্তু যেভাবে মৌদি বিরোধী আন্দোলনে টিএসসিতে তাদের পিটিয়ে রক্তাক্ত করা হয়েছে সেটি খুবই ন্যাক্কারজনক। জানি বিচার হবে না। চাপোষা মানুষগুলোকেও কেন এমনভাবে পিটাতে হবে সরকারি গুন্ডাপান্ডা দিয়ে।
রাজপথে পুলিশের যে মারমুখি আচরণ, মনে রাখবেন এটাই ক্ষমতায় বসে থাকা চেয়ারের চরিত্র। যে পাত্রের আকার যেমন, পুলিশ সে পাত্রের আকার ধারণ করে মাত্র। সরকার যে সবকিছু ভালো করে তা নয়, কিন্তু মোদ্দা কথা হলো এর বাইরে সরকারের আর কি করার আছে আপনারাই বলুন। যখন যে ক্ষমতায় আসে সে তার অনুসারীদের পুলিশে নিয়োগ দেন পদ পদবীর সুবিধে দেন। সুতরাং মালিকের হুকুম মানতে গোলাম বাধ্য।
সুতরাং সমালোচনা করুন, কিন্তু তার আগে নিজে বাংলাদেশপন্থি হোন। যতদিন আপনি আওয়ামী, বিএনপি, জামায়াত কিংবা বামপন্থি হিসেবেই বেঁচে থাকবেন, ততদিন আপনি বাংলাদেশপন্থি হতে পারবেন না। ততদিন আপনি হয় সুবিধাভোগী না হয় লাঞ্চিত হবেন। ততদিন ই আপনি স্বাধীন হতে পারবেন না।
অসাম্প্রদায়িক চেতনায় এগিয়ো যাক বাংলাদেশ। সবাইকে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর শুভেচ্ছা।
লেখক: শিক্ষার্থী (মার্স্টাস) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি
জাতীয় পাঠাগার আন্দোলন (জাপাআ)