আকাশ পথের যাত্রীদের কারো কারো নিকট থেকে চোরাচালানের বিপুল স্বর্ণ আটক করার খবর প্রায় প্রতিনিয়তই মিডিয়ায় প্রকাশ পাচ্ছে। প্রকাশিত খবর মতে গত ২ মাসে প্রায় অর্ধ শতকোটি টাকার চোরাই স্বর্ণ দেশের বিমান বন্দর গুলিতে ধরা পড়েছে।
তার অর্থ এই নয় যে, চোরাচালানের সাকূল্যই আটক হয়েছে। সাধারণ দৃষ্টিতে আটককৃত স্বর্ণের পরিমাণ চোখ ধাঁধানো হলেও চোরাচালানের মোট পরিমাণের তুলনায় তা অতি নস্যি এবং চোরাচালানীরা ‘টেষ্ট কেইস’ হিসেবে এ স্বর্ণ ব্যবহার করে থাকে।
আটক স্বর্ণের তুলনায় শত সহস্র গুণ বেশী স্বর্ণ চোরাচালানীরা নিরাপদে অহরহ আনা নেয়া করে। স্বর্ণ আটকের খবরহীন দিনগুলিতে যে চোরাচালান হয়না তাও ঠিক নহে বরং ‘দফারফা’র মাধ্যমে কথিত ‘সেফ ট্যুর’হিসেবে দিনগুলি নির্ধারিত থাকে চোরাচালানীদের জন্য।
কোটি কোটি টাকার স্বর্ণ আটক হলেই এমনটি মনে করার কারণ নেই যে, চোরেরা নি:স্ব হয়ে গেল। বরং বিষয়টি ঠিক তার উল্টো।
চোরাচালানীরা কোন একটি চালান নিজেরাই ধরিয়ে দিয়ে বিশেষ শাখার দৃষ্টি অন্যত্র নিবদ্ধ করে আড়ালে বহু গুণ স্বর্ণ পাচার করে দেয়। এ কাজে যারা ব্যবহৃত হয় তারা শুল্ক বিভাগের নিকট এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, বিমান বন্দরের অভ্যন্তরে যাত্রী আসা যাওয়ার পথটুকু ‘স্কট’ করার আদলে বহুসম্মানে তাদের আগলে দিয়ে থাকে।
শুধু আকাশ পথেই নহে, স্থল ও নৌপথেও স্বর্ণ চোরচালান হয়। তবে এ পথ গুলিতে মাদকের যাতায়াত বেশী।
স্বর্ণ চোরাচালানীদের রয়েছে অতি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক। মাফিয়াচক্র থেকে শুরু করে চরমপন্থী ও উগ্র মৌলবাদী রাজনৈতিক গোষ্ঠি তাদের অর্থের আদান প্রদানের অতি সহজ মাধ্যম হিসেবে স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সাথে যোগসাজশ করে চোরাচালান পদ্ধতি ব্যবহার করে। কারণ এসব বিষয়ে বৈধ ভাবে অর্থ লেনদেনের কোন সুযোগ নেই। স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের অনেকেই চোরাচালানের সহিত জড়িত এবং বানিজ্যে হঠাৎ কোটিপতি হওয়ার বিশেষ ও সহজ পথ এটি।
শুল্ক ও বিমানের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী নেপথ্যে স্বর্ণ ব্যবসার সাথে জড়িত থাকে। এ সব বিভাগের কোন কোন চাকুরিজীবীর স্ত্রী-সন্তানের গহনার ফিরিস্থি দেখলে রীতিমত পিলে চমকে যাওয়ার অবস্থা হয়। (চলবে)
লেখক: নাসির উদ্দিন আহম্মেদ, নির্বাহী সম্পাদক, দৈনিক আজকের বাংলাদেশ, ৩৩ ছোট বাজার, ময়মনসিংহ মোবাইল-০১৭৪০৯১৪০৬৯