ডেস্ক রিপোর্টঃঃ  নারায়ণগঞ্জের এসহাক মিঞা (৭০)। এক সময় রিকশা চালিয়ে চার সদস্যের পরিবারের খরচ চালাতেন। হঠাৎ সড়ক দুর্ঘটনায় একটি পা হারিয়ে অচল হয়ে পড়েন। ভিক্ষা করে সংসার চালাতে শুরু করেন। যা আয় হতো তা দিয়ে সংসার চালানোই তার জন্য কষ্টকর। বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে যেই স্বপ্ন তিনি কখনোই দেখেননি, সেই স্বপ্ন পূরণ করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসহাক মিঞা এখন প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহারের ঘরের মালিক।

বুধবার (২২ মার্চ) দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশক্রমে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ (চতুর্থ পর্যায়) এর আওতায় এসহাক মিঞাসহ মোট ২৫৫টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারে দুই শতক জমিসহ ঘর তুলে দেওয়া হয়।

ঘর পাওয়ার পর এসহাক মিঞার সঙ্গে কথা হলে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, জীবনের শেষ সময়ে চলে এসেছি। বয়স চলে ৭০ বছর। যখন গায়ে বল ছিল তখন রিকশা চালিয়েছি। হঠাৎ একদিন সড়ক দুর্ঘটনায় আমার ডান পা কাটা গেল। এরপর জীবনে যেন অন্ধকার নেমে এল। আমার স্ত্রী তখন মানুষের বাসা-বাড়িতে কাজ করতো। কোনো রকম ডাল ভাত খেয়ে বেঁচে ছিলাম। ঘর ভাড়া জমে গেল ৬-৭ মাসের। বাড়ির মালিক বাসা থেকে বের করে দিলেন। মাস তিনেক কখনো রাস্তায় কখনো রেল স্টেশনে কোনো রকম রাত কাটিয়েছি। পরে বাধ্য হয়ে পেটের দায়ে ভিক্ষা শুরু করলাম।

তিনি বলেন, ভিক্ষা করে কোনো রকম দিন চলে, সিদ্ধিরগঞ্জের কলাবাগ এলাকায় সিরাজ উদ্দিন আমাকে মায়া করে তার বাড়ির একটি ঘরে মাসিক দুই হাজার টাকা ভাড়ায় থাকতে দিলেন। যদিও তখন সেখানে ঘর ভাড়া আরও বেশি ছিল। এরই মধ্যে আমার স্ত্রীর হার্টে সমস্যা ধরা পড়লো, সঙ্গে ডায়াবেটিস তাকে পেয়ে বসলো। ভিক্ষার টাকায় যা রুজি হতো তা দিয়ে সংসারই চলতো না ঠিক মতো। এর সঙ্গে ওষুধ খরচ, বাসা ভাড়াতো আছেই। ছেলেটাকে স্কুলে দিয়েছিলাম, পয়সার অভাবে বেশি পড়াতে পারিনি। এক মেয়েকে স্থানীয়দের সহায়তায় বিয়ে দিয়েছি। বর্তমানে জিনিসপত্রের যে দাম, নুন আনতে পানতা ফুরায় অবস্থা। এভাবেই চলছিল আমাদের জীবন।

ঘর পেয়ে এসহাক বলেন, কখনো স্বপ্নেও ভাবি নাই যে নিজের ঘরবাড়ি হবে। যে মানুষ দুই বেলা খাবার জোটাতে পারে না, তার আবার ঘর বাড়ির স্বপ্ন। হঠাৎ একদিন খবর শুনলাম, শেখ হাসিনা আমার মত ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য দুই শতক জমি ও আধা পাকা ঘর দেবেন। আমিও আশা নিয়া আবেদন করলাম। ভাবি নাই আমার মতো গরিবের কথা কেউ ভাবে, ভাবি নাই আমার নিজের একটি ঘর হবে। আমার জন্য কোনো রকম খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকাটাই বড় যুদ্ধ ছিল। সেখানে নিজের ঘর নিয়া ভাবার সুযোগ কই? তবে যখন শুনলাম শেখ হাসিনার সরকার গরিব অসহায়দের ঘর দেবে, তখন বিষয়টা আমার কাছে স্বপ্নই মনে হয়েছে। শেখ মুজিব আমাদের স্বাধীনতা দিয়েছে, আর সেই শেখের বেটি হাসিনা আমাদের মাথা গোঁজার জায়গা দিল। আল্লাহ যেন তারে ভালো রাখে, সুস্থ রাখে।

শুধু এসহাক মিঞাই নয়, চোখের কোনে জমা আনন্দ-উচ্ছ্বাসের ছলছল জল নিয়ে হতদরিদ্র নাসির উদ্দিন, নাজমা বেগম, জমিলা খাতুনসহ অনেকেই এভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তার দীর্ঘয়ু কামনা করেন।

নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ ঘর প্রদানের আগে উপকারভোগীদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা এবার নিজের বাড়িতে ঈদ করবেন, এর চেয়ে আনন্দের আর কী হতে পারে? নিজের জায়গায় নতুন ঘরে আপনাদের ঈদ কাটবে, এই অনুভূতি সত্যিই অন্য রকম। নিজের বাড়িতে নিজের জায়গায় থাকা ও ঈদ করার শান্তিই আলাদা। এই স্বাধীনতার মাসে বঙ্গবন্ধুর জন্ম হয়েছিল, এই মাসে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছায় আপনাদেরকে নিজেদের ঘর বুঝিয়ে দিতে পেরে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন আনন্দিত ও গর্বিত।

তিনি আরও বলেন, আমরা ইতোমধ্যে গোটা নারায়ণগঞ্জে প্রায় দেড় হাজার ঘর প্রদান করেছি। আজকে মোট ২৫৫ পরিবারের মাঝে জমির দলিল ও ঘরের চাবি হস্তান্তর করা হয়েছে। আমরা নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলাকে আগামী জুলাই মাসের মধ্যে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করতে পারব।

প্রসঙ্গত, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষ্যে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে সারাদেশের ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জমি ও ঘর প্রদানের উদ্যোগ নেয় সরকার। নারায়ণগঞ্জে এখন পর্যন্ত ১৫০০ এর অধিক পরিবারে জমিসহ আধা-পাকা একক ঘর প্রদান করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এদিন নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলায় ৪২টি, বন্দর উপজেলায় ৩৩টি, নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলায় ৯৮টি, রূপগঞ্জ উপজেলায় ৪০টি ও সোনারগাঁ উপজেলায় ৪২টিসহ মোট ২৫৫ পরিবারের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর বুঝিয়ে দেওয়া হয়।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here