সজল দেব,মৌলভীবাজার
বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে শনিবার মৌলভীবাজার জেলার ৫ টি উপজেলার ১৩৯টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা ’স্টুডেন্ট কাউন্সিল নির্বাচনে’র মাধ্যমে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করেছে। তবে জেলার বড়লেখা ও কমলগঞ্জ উপজেলার ৪০ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কোন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি।
শনিবার নির্বাচনের দিন কয়েকটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘুরে দেখা গেল, বিদ্যালয়ের ৩য় থেকে ৫ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীগন সুশৃংখলভাবে লাইনে দাড়িয়ে নির্বাচনী ব্যুথের সামনে ভোটদানের জন্য অপেক্ষা করছে। ভোটাররা ক্ষুদে হলেও কোথাও কোন বিশৃঙ্খলা দেখা যায়নি। সবচাইতে আকর্ষনীয় বিষয় ছিলো- ভোট কেন্দ্র ব্যবস’াপনা, ব্যালট পেপার ইস্যু, ভোট গণনা ইত্যাদি সকল দায়িত্বে ছিলো ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা। বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাগণ কেবল তদারকি ও সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পালন করেছেন।
সকাল ১০টায় শহরের বড় কাপন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেলো ভোট প্রদানের জন্য ক্ষুদে ভোটারদের দীর্ঘ লাইন। ’কাব্স’ এর শিশুরা শৃংখলা রক্ষার দায়িত্ব পালনে ব্যস্ত। ভিতরে, নির্বাচনী ব্যুথে দেখা গেলো- ক্ষুদে প্রিসাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসারগণ ব্যালট পেপার ইস্যু করছে। তাদের দায়িত্ব পালন অপেক্ষা আনন্দের উচ্ছাস বেশী । বুথে আবার পুলিং এজেন্টরাও রয়েছে ভোটার সনাক্ত করার কাজে। তারা মূলত প্রিসাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসারগণকে সংশ্লিষ্ট ভোটার কোন ক্লাসের ও কত রোল নাম্বার বলে দিচ্ছে।
পরে শহরের আরেকটি স্কুলে গিয়ে দেখা যায় সেখানেও শান্তি-শৃংখলাভাবে নির্বাচন চলছে ।হাফিজা খাতুন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ’স্টুডেন্ট কাউন্সিল নির্বাচনে’ নিয়োজিত নির্বাচন কমিশনার ৫ম শ্রেনীর ছাত্র নিজামুর রহমান মুক্তা জানায়- তাদের স্কুলের নির্বাচনে মোট ভোটার ১২০ জন। ৭টি পদের বিপরীতে প্রার্থী সংখ্যা ১২ জন। প্রিসাইডিং অফিসার ৫ম শ্রেণীর ছাত্রী ফা্ইজা খান জানায়, কোন কোন ভোটার একটু বেশী দুস্টামী করলেও অসুবিধা হচ্ছেনা, বরং মজা লাগছে।
প্রধান শিক্ষক নাসীম আরা বেগম বলেন, শিশুদের মধ্যে নেতৃত্বের বিকাশ, শিশু কাল থেকে গনতান্ত্রিক চর্চার অভ্যাস, এবং স্কুলের উন্নয়ন কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহনের সুযোগ দেয়ার লক্ষ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রনালয়ের নির্দেশে গতবছর সারাদেশে পরীক্ষামূলক অল্প কয়েকটি স্কুলে এ নির্বাচনের আয়োজন করা হয়েছিলো। এ বৎসর নির্বাচনের জন্য সারাদেশে স্কুলের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে, যার আওতায় এ বছর মৌলভীবাজার সদরে ২৩টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
মৌলভীবাজারের জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ছুটিতে থাকায় সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বায়োজিদ খান জানালেন, আজকে জেলার মোট ১৭৯ টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ’স্টুডেন্ট কাউন্সিল নির্বাচন’ হয়েছে। এর মধ্যে শ্রীমঙ্গল উপজেলার ৫৬টি বিদ্যালয়ে, সদর উপজেলার ২৩ টি এবং কুলাউড়া, রাজনগর, জুড়ী, বড়লেখা ও কমলগঞ্জ উপজেলার প্রত্যেকটিতে ২০ টি করে স্কুলে নির্বাচন হচ্ছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, বড়লেখা ও কমলগঞ্জ উপজেলার ৪০ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নির্বাচন বন্ধ থাকার বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার কোন সিদ্ধান- দিয়েছেন কিনা তাও তার জানা নেই। এই ব্যাপারে কমলগঞ্জ উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট জনৈক কর্মকর্তা জানান, চীফ হুইফ সাহেবের প্রোগ্রাম এবং জেলা প্রশাসক সাহেবের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তারা ব্যস- থাকায় জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের নিকট থেকে অনুমতি নিয়ে স্টুডেন্ট কাউন্সিল নির্বাচন পেছানো হয়েছে। তবে ১০ থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এই নির্বাচন হবার কথা। বড়লেখা উপজেলার ভারপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো:জামাল উদ্দিন জানান, স্টুডেন্ট কাউন্সিল এর জন্য নির্বাচিত ২০টি স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষয়ীত্রীরা বৈঠক করে আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি স্টুডেন্ট কাউন্সিল নির্বাচন করার সিদ্ধান- নিয়েছেন। এই বিষয়ে শিক্ষক-শিক্ষয়ীত্রীরা তাকে কিছু জানাননি।