মোঃ সফিকুল আলম দোলন, জেলা প্রতিনিধি, পঞ্চগড় ::
বাঙ্গালী ঐতিহ্যের সাথে মিশে আছে পান-সুপারী বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের প্রায় প্রতিটি বাড়িতে প্রাথমিক অতিথি আপ্যায়নের অনুষঙ্গ হিসেবে থাকে পান- সুপারী । বাড়িতে মেহমান এলে কাঁসার তৈরী পানের বাটায় পান,সুপারী,তামাক জর্দা,চুন সাজিয়ে দেয়া হয় মেহমানের সামনে । পান খেতে খেতে চলে খোশ গল্প । পান রশিকদের জন্য রাজশাহীর পান আর পঞ্চগড়ের সুপারীর কদর রয়েছে আলাদা ভাবে । পঞ্চগড়ের মানুষের আদি ঐতিহ্য সুপারীর বাগান ।
অনেক সুপারী বাগান মালিক আবার সুপারীর গাছে পান চাষ করেন । এতে তাদের বাড়তি আয় হয় । জমির ধান দিয়ে সারা বছরের খাবার আর সুপারির টাকা দিয়ে চলে সাংসারিক সব খরচ । সাধারণত এপ্রিল মাস থেকে সুপারী বাজারে উঠে । এই সময়টাতে দেশের অন্য কোথাও সুপারী হয় না । তাই সুপারী ব্যবসায়ীদের নজর এখন পঞ্চগড়ের দিকে । ইতোমধ্যে বাজারে
বেচাকেনা শুরু হয়েছে পঞ্চগড়ের সুপারী । পুরোদমে সুপারী বাজারে উঠায় ব্যবসায়ীদের আনাগোনা বেড়ে গেছে ।বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরা এসে পঞ্চগড় থেকে ট্রাকে সুপারী কিনে নিয়ে যাচ্ছে ।
পঞ্চগড়ে চলতি মৌসুমে প্রতি পন(৮০টি) সুপারী ২৮০ টাকা থেকে ৩০০ টাক দরে বিত্রিু হচ্ছে । জানা গেছে,পঞ্চগড়ের মাটি অপেক্ষাকৃত উচুঁ এবং বেলে দোআঁশ হওয়ায় বংশ পরস্পরায় সুপারী চাষ করে আসছে এখানকার মানুষেরা । এক সময় বাড়িতে বাড়িতে ছিল সুপারীর গাছ । বাগান আকারের ছাড়াও বাড়ির পাশে উচু জমিতে সুপারীর বাগান করে । সুপারী বাগানে আলাদা
করে পরিচর্যা করতে হয় না । মাঝখানে মড়ক লেগে শত শত এর সুপারী বাগান ধ্বংস হলেও পঞ্চগড় জেলায় সবত্র এখনও সুপারীর বাগান চোখে পড়ে । বাগান না হলেও সুপারীর গাছ আছে । লাভজনক হওয়ায় অনেকে সুপারীর বাগান করছে। বিশেষ করে সদর উপজেলার এলাকার টুনির হাট ,কামাত কাজলদীঘি,চাকলাহাট,হাড়িভাসা ও বোদা উপজেলার বোদা ,সাকোয়া ও
মাড়েয়া, ময়দানদীঘি সুপারির জন্য বিখ্যাত ।
সাকোয়া নয়াদীঘি এলাকার একরামুল বলেন,তিনি গত কয়েক বছর ধরে তিনি ভালো ফল পাচ্ছেন । সুপারীর দামও ভালো পেয়েছেন । পাকা সুপারী মাটিতে পুতে রাখেন মজা করানোর জন্য । স্থানীয়ভাবে এই সুপারীর চাহিদাও খুবই বেশী । এই এলাকার অনেক কৃষকের প্রধান উৎস সুপারীর বাগান । এই এলাকায় বর্ষার পানি জমে থাকে না বলে অনেকেই সুপারীর বাগান করেছে সেই সাথে বাগানে রয়েছে পান গাছ ।অন্যান্য আবাদের চেয়ে সুপারী চাষে খরচ একেবারে নেই বললেই চলে ।
এব্যাপারে পঞ্চগড় জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক শাহ আলম মিয়া জানানন,পঞ্চগড়ের মাটি উঁচু এবং আবহাওয়া সুপারী চাষের জন্য অনুকুল । ৬৫০ হেক্টর জমিতে সুপারী আবাদ হচ্ছে ।বছরে এ জেলায় প্রায় ৩০ কোটি টাকার উপরে সুপারী বেচাকেনা হচ্ছে । সুপারী চাষ লাভজনক হওয়ায় পঞ্চগড়ের অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখছে সুপারী চাষ ।