বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ বনাঞ্চল সুন্দরবনের কাছে কয়লাভিত্তিক একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের বিষয়ে রোববার ভারতের রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ উৎপাদন সংস্থার সাথে বাংলাদেশের একটি চুক্তি স্বাক্ষরের কথা রয়েছে।
পরিবেশবাদীরা বলছেন, সুন্দরবনের খুব কাছেই এই বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হলে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে৻ তবে বাংলাদেশের কর্মকর্তারা দাবী করছেন, পরিবেশগত ক্ষতির বিষয়টি বিবেচনা করেই তারা এ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি স্থাপন করছেন।
সুন্দরবনের কাছেই বাগেরহাটের রামপাল উপজেলায় এই কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের বিষয়ে পরিবেশবাদী সংগঠনসহ অনেকেই বিরোধিতা করে আসছিল।
রবিবার এবিষয়ে ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ব বিদ্যুৎ উৎপাদক সংস্থা ন্যাশনাল থারমাল পাওয়ার কোম্পানি বা এনটিপিসি এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ব সংস্থা পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড বা পিডিবির মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরের কথা রয়েছে।
এই চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়টি সামনে রেখে শুক্রবার বাংলাদেশের ১২ জন বিশিষ্ট নাগরিক একটি লিখিত বিবৃতিতে তাদের উদ্বেগের কথা প্রকাশ করেন।
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী পরিবেশবাদী সংগঠন বেলার নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, যেকোন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিবেশের ক্ষতি করে। তবে এই কেন্দ্রটি সুন্দরবনের খুব কাছাকাছি হওয়ার কারণে সুন্দরবন এলাকায় মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে তৈরি ছাইভষ্ম বাতাসের মাধ্যমে সুন্দরবনে ছড়িয়ে পড়বে। এছাড়া কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য পশুর নদী থেকে প্রচুর পরিমান পানির প্রয়োজন হবে। আর এ পানির উপরেই সুন্দরবনের জীববৈচিত্রের বেঁচে থাকা নির্ভরশীল।‘
সুন্দরবনের খুব কাছেই এ বিদ্যুকেন্দ্র স্থাপন নিয়ে আপত্তি এই প্রথম নয়। এর আগে গত বছরের জুলাইতে এই বিদ্যুৎ বিষয়টি নিয়ে হাইকোর্টের একটি রুলও রয়েছে যা এখনো নিষ্পত্তি হয়নি।
তবে এখন আইনগতভাবে চুক্তি স্বাক্ষরে কোন বাধা নেই। পিডিবির চেয়ারম্যান এ এস এম আলমগীর কবির বলছিলেন, তারা পরিবেশগত হুমকির কথা বিচার-বিবেচনা করেই বিদ্যুত কেন্দ্রটি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং নিয়ম মেনেই তারা বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি করছেন বলে তিনি দাবী করেন।
মি. কবির বলেন, ‘সবধরনের পরিবেশগত বিষয় বিচার-বিবেচনা করেই এ বিদ্যুতকেন্দ্রটি করা হবে। যে আশংকাগুলো করা হচ্ছে, সেগুলো হ্রাস করার জন্য সবগুলো ব্যবস্থাই আমরা নেবো।‘
তবে এই প্রকল্পটি এখনো চুড়ান্ত পরিবেশগত ছাড়পত্র পায়নি বলে জানান পিডিবি চেয়ারম্যান।
পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো বলছে তারা বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের বিপক্ষে নয়। তারা চাইছেন এই কেন্দ্রটি যেন অন্য কোথাও স্থাপন করা হয়।
বাংলাদেশে বর্তমানে একটিমাত্র কয়লাভিত্তিক বিদ্যুকেন্দ্র রয়েছে যেটি দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়াতে অবস্থিত। তবে সেই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি দেশে উপাদিত কয়লা দিয়ে পরিচালিত হলেও রামপালে প্রস্তাবিত এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পরিচালিত হবে আমদানিকৃত কয়লা দিয়ে।
এ কারণে মংলা বন্দরকে ব্যবহার করার জন্যই তারা সুন্দরবনের কাছে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি স্থাপন করা হচ্ছে বলে পিডিবি দাবী করছে।
তবে রিজওয়ানা হাসান বলছেন, আমদানিকৃত কয়লা পরিবহনের ব্যবস্থা করে অন্য কোথাও বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা সম্ভব।
তিনি বলেন, ‘কিছু খরচ বাঁচাতে গিয়ে বিশ্ব ঐতিহ্য ধ্বংস করার চাইতে একটি রেললাইন বানানো অনেক সহজ। একটি রেললাইন হয়তো বানানো যাবে, কিন্তু সুন্দরবন কিন্তু আর বানানো যাবে না।‘
জাতিসংঘের সংস্কৃতি ও বিজ্ঞান বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো ১৯৯৭ সালে সুন্দরবনকে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে ঘোষণা করে।
বিশ্বের বৃহত্তম এই ম্যানগ্রোভ বন শুধুমাত্র যে এর অনন্য জীববৈচিত্রের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ তা নয়, সুন্দরবনের আশেপাশের এলাকায় বসবাসরত লাখ লাখ মানুষকে বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবল থেকে রক্ষা করার ক্ষেত্রেও সুন্দরবন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/স্টাফ রিপোর্টার