সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার বালিয়াঘাট, চারাগাঁও, বাগলী, বড়ছড়া, চাঁনপুর ও লাউড়েরগড় সীমান্ত এখন চোরাচালানের নিরাপদ রোড। এসব সীমান্ত দিয়ে চোরাকারবারীরা প্রতিদিন ভারত থেকে মদ, গাঁজা, কাঠ, কয়লা, নাসির উদ্দিন বিড়ি, কমলা, হেরোইন অবাধে আনছে। এবং দেশীয় পন্য মাছ, শাক সবজি, হাস-মুরগির মাংস, ভোজ্য তেল, কেরোসিন, সিরামিকের তৈরী থালা-বাসন, মোবাইল কার্ড ও স্বর্নালঙ্কার সহ বিভিন্ন মালামাল ভারতে পাচার করছে। চোরাকারবারীরা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, মেম্বার, কিছু সংখ্যক হলুদ সাংবাদিক, এফ.এস ও বিজিবির দুর্নীতিবাজ সদস্য সহ এলাকার প্রভাবশালীদের নিয়ে প্রত্যেক এলাকায় গড়ে উঠেছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। কেউ তাদের বিরুদ্ধে কথা বললে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা সহ মারধোর করে। যার ফলে সীমান্তের লোকজন ভয়ে কেউ মুখ খুলতে চায়না। তথ্য নিয়ে জানা যায়, বড়ছড়া ও বালিয়াঘাট সীমান্তের ১১৯৮ পিলারের পূর্ব ও পশ্চিমে পাঁচটি, চারাগাঁও সীমান্তের ১১৯৬ পিলারের দুই দিকে ছয়টি, লাউড়েরগড় ও চাঁনপুর সীমান্তের ১২০৩ পিলারের পূর্ব ও পশ্চিমে ছয়টি সহ বাগলী সীমান্তে পাঁচটি চোরাই পথ রয়েছে। এসব পথ দিয়ে চারাগাঁও এলসি পয়েন্টের মাতাল জলিল মিয়া, কলাগাঁয়ের নজরুল মিয়া, লালঘাটের আব্দুল হাই, কালাম মিয়া, একদিল, জামাল মিয়া, সামছুল হক, রহিম উদ্দিন, কুদরত আলী, রহিছ আলী সহ ২০/৩০ জন। লাকমা গ্রামের মাদক ব্যবসায়ী শহিদ মিয়া, আব্দুল হাকিম ভান্ডারী, ইদ্রিছ আলী, আইয়ুব আলী ও সিরাজ মহলদারের নেতৃত্বে ২০/২৫ জন। বারেক টিলার নিজাম উদ্দিন, রাশিদ মিয়া, রফিকুল, লাল মিয়া, হেলিম মিয়া, বারহালের আওয়াল মিয়া, শিশুলতলার অজিত মিয়া, তুথলা জাহের, হারিছ মিয়া, ঘাগটিয়ার রেনু মিয়া, লাউড়েরগড়ের তছকির মিয়া, জাহাঙ্গীর, শাজাহান, কামরাবন্দের আঃ রাজ্জাক ও অহেদ কোমপানি সহ আরও ২০/৩০ জন চোরাকারবারী সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে বছরে কয়েকশ কোটি টাকার মালামাল অবৈধভাবে দুই দেশে আদান-প্রদান করে। এ জন্য চাঁনপুর ক্যামেপর নামে লাইনম্যান আওয়াল মিয়া, বড়ছড়া ক্যামেপর নামে শহীদ মিয়া,উত্তরশ্রীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের নামে সিরাজ মহলদার, বালিয়াঘাট ক্যামেপর নামে আব্দুল হাকিম ভান্ডারী, ইদ্রিছ আলী, দুধের আওটা গ্রামের মাতাল নুরজামাল, তার পুত্র জিয়াউর রহমান জিয়া, তার ভগ্নিপথি সেলিম মিয়া, তাদের সহকারী তাজু মিয়া, ইসলাম উদ্দিন, লালঘাটের কালাম মিয়া। চারাগাঁও ক্যামেপর নামে লালঘাটের আব্দুল হাই ও চারাগাঁও এলসি পয়েন্টের মাতাল জলিল মিয়া, বিজিবি ক্যামেপর সোর্স পরিচয় দিয়ে চোরাই পথে আসা প্রতি কয়লার বস্তা থেকে ৫০ টাকা, এফএস সদস্যদের নামে ১০ টাকা, সাংবাদিকদের নামে ৩০ টাকা, উত্তরশ্রীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের নামে ১০ টাকা, মেম্বারের নামে ৫ টাকা হারে প্রথম দফা চাঁদা উঠানো হয়। পরবর্তীতে ঐ সব চোরাই কয়লা পাটলাই নদীতে ষ্টিলের ইঞ্জিনের নৌকা ও কারগোতে বোঝাই করার পর প্রতি টনে ক্যামেপর নামে ২১০ টাকা, সাংবাদিকদের নামে ১০০ টাকা, চেয়ারম্যানের নামে ১৫০ টাকা সহ বিভিন্ন নামে আবার ২য় দফা চাঁদা আদায় করা হয়। এছাড়া প্রতি শুক্রবার ও সোমবার নতুনবাজার ও ডামেপর বাজারে ভারতীয় ফালীর (কাঠ) হাট বসে। প্রতি ফালী থেকে ৬০ টাকা করে বালিয়াঘাট ও চারাগাঁও ক্যামেপর নামে ১২০ টাকা, সাংবাদিকদের নামে ৩০ টাকা, চেয়ারম্যানের নামে ২০ টাকা চাঁদা আদায় করা হয়। এছাড়া ১ হাজার কমলার জন্য প্রত্যেক ক্যামেপর নামে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, সাংবাদিকদের নামে ৫০ টাকা চাঁদা উঠানো সহ প্রত্যেক মাদক ব্যবসায়ী ও চোরাকারবারীদের কাছ থেকে প্রতি ক্যামেপর নামে সপ্তাহে ২ হাজার, সাংবাদিকের নামে ৫শ্থ টাকা চাঁদা উত্তোলন করা হয়। এ ব্যাপারে সোর্স পরিচয়ধারী মাদক ব্যাবসায়ী শহীদ মিয়া ও আব্দুল হাকিম বলেন, আমাদের খুটির জোর খুবই শক্ত। আমরা যাই করিনা কেন, আমাদেরকে কেউ কিছু করতে পারবে না। আমাদের সাথে বড় সাংবাদিকরা আছে, পত্রিকায় লিখলে তারাই প্রতিবাদ দেবে, আমাদের হয়ে বিভিন্ন জায়গায় তদবির করবে। আওয়াল মিয়া বলেন, আমি ক্যামেপর লাইনম্যান না, কারো কাছ থেকে চাঁদা উঠাই না। বালিয়াঘাট ক্যামপ কমান্ডার এনামুল হক বলেন, আমার পক্ষ থেকে সব নিষেধ, সঠিক তথ্য পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। চারাগাঁও ক্যামপ কমান্ডার জাকির হোসেন বলেন, এ ব্যাপারে আমরা তদন্ত করে দেখব। চাঁনপুর ক্যামপ কমান্ডার জয়নাল বলেন, আগে লাইনম্যান ছিল, এখন নেই। আমাদের নামে কেউ চাঁদা নিলে তাঁকে ধরিয়ে দিন। বড়ছড়া কোমপানি কমান্ডার আওয়াল বলেন, চোরাচালান প্রতিরোধের জন্য কড়া নজরধারি চলছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চারাগাঁও ও বড়ছড়া কয়লা ব্যবসায়ীরা বলেন, চোরাচালান ও চোরদের কারনে ব্যবসায়ীদ দিক দিয়ে ক্ষতি হচ্ছে। আর চাঁদাবাজির যন্ত্রনায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছি। কিন্তু কে শুনবে আমাদের কথা। প্রশাসন তাদের পক্ষে থাকায় তাহিরপুর সীমান্তে এখন চোরাচালান ও চাঁদাবাজদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে।
ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/এম এ কাসেম/মুনামগঞ্জ