ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফের প্রধান বলেছেন, বাংলাদেশ সীমান্তে গুলি চালানো পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব নয়, কারণ সীমান্তে অপরাধীদের থামাতে তাদের ব্যবস্থা নিতেই হবে৻
আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থায় দেওয়া এক একান্ত সাক্ষাতকারে বিএসএফের মহানির্দেশক ইউ কে বনশল বলেন, “গুলি চালনা পুরোপুরি বন্ধ করা কখনোই সম্ভব না – যতক্ষণ ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে অপরাধমূলক কাজ হতে থাকবে, ততক্ষণ সেই অপরাধ আটকাতেই হবে বিএসএফকে৻ সেটাই বাহিনীর দায়িত্ব৻”
মিস্টার বনশল এই মন্তব্য করলেন এমন এক সময় যখন সীমান্তে ভারতীয় বাহিনীর হাতে বাংলাদেশীদের ওপর হত্যা-নির্যাতনের ঘটনা বাড়ছে বলে মানবাধিকার সংস্থাগুলো অভিযোগ করছে৻
তবে বিএসএফ প্রধান অভিযোগ করছেন, সীমান্তে যখন কোন অপরাধ সংঘটিত হয় তখন তাদের ব্যবস্থা নিতেই হয়৻
বিএসএফের ওপর হামলা
মঙ্গলবার এরকম এক ঘটনায় পাচারকারীদের হামলায় আহত ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর এক সদস্য মারা গেছেন৻
বিএসএফ বলছে চার তারিখ রাতে পশ্চিমবঙ্গের স্বরূপনগর এলাকায় সীমান্ত পাহারা দেওয়ার সময়ে প্রায় ১০০ জন গরু পাচারকারীর দল বিএসএফ সদস্যদের ওপর হামলা চালায়৻
নিহত বিএসএফ কনস্টেবল সরতাজ সিংয়ের মাথায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয় বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন৻ আরও একজন সীমান্তরক্ষীরও কাঁধে চোট লাগে৻
বিএসএফের দক্ষিন বঙ্গ সীমান্তের ইন্সপেক্টর জেনারেল রভি পোনোঠ বিবিসিকে বলেন, “আক্রমনের পরে বেশীরভাগ পাচারকারীই বাংলাদেশে পালিয়ে গেছেন৻ তবে তিনজন বাংলাদেশী নাগরিককে আমরা আটক করতে পেরেছি, যারা এখন পুলিশী হেফাজতে আছে৻”
বিএসএফ দাবী করছে যে গত একবছরে গরু পাচারকারী সহ বিভিন্ন অবৈধ কারবারীরা দক্ষিন বঙ্গ সীমান্ত এলাকাতেই বিএসএফের ওপরে ৫২ বার আক্রমণ চালিয়েছে৻
মি. রভি পোনোঠ বলছিলেন যে তাঁদের বাহিনী কিছুদিন ধরেই এমন বন্দুক ব্যবহার করছে – যার গুলি দূর থেকে লাগলে মৃত্যু হবে না৻
“আর এই সুযোগটাই নিচ্ছেন পাচারকারী বা সীমান্তের দুষ্কৃতিরা৻ তাঁরা ভাবছেন বিএসএফ এখন আর গুলি চালাতে পারবে না – তাই তাদের আক্রমণ করা সহজ,” জানান রভি পোনোঠ৻
মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগ
সাম্প্রতিক ঘটনায় এক বিএসএফ সদস্যের মৃত্যু হলেও বলপ্রয়োগ আর গুলি চালিয়ে বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা করার অনেক অভিযোগ আছে বি এস এফের বিরুদ্ধেও৻ হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতো আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলি বিএসএফ-কে ট্রিগার হ্যাপি ফোর্স বলে আখ্যা দিয়েছে৻
মানবাধিকার কর্মীরা বলে থাকেন যে চোরাচালান এমন অপরাধ নয়, যার শাস্তি মৃত্যুদন্ড হতে পারে, আর বি এস এফের বিচার করার ক্ষমতাও নেই৻
দুষ্কৃতিরা ছাড়াও চোদ্দো বছরের এক বাংলাদেশী কিশোরী – ফালানি – বিএসএফের গুলিতে নিহত হয় গতবছর৻
অন্যদিকে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বলে যে শুধুমাত্র আত্মরক্ষার্থেই গুলি চালানো হয়ে থাকে৻ আর এখন তো মারণ অস্ত্রের ব্যবহার কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে, যাতে বিএসএফের গুলিতে প্রাণহানির ঘটনা কম হয়৻
বিএসএফের দাবী, সেই লক্ষ্যে তারা অনেকটাই সফল, কিন্তু গুলিচালনা একেবারে বন্ধ কখনোই সম্ভব নয়৻
বিএসএফ মহানির্দেশক আরও বলেন যে চোরাচালান সহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজ বন্ধের জন্য বি এস এফ বারবার বাংলাদেশী সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর সাহায্য চেয়ে আসছে৻
“বাংলাদেশী বাহিনী যদি তাদের নিজেদের দিকে পাহারা কড়া করে, বিশেষত রাতে সীমান্তে চলাচলের ওপরে নিষেধাজ্ঞার বলবত করতে পারে, তাহলে অপরাধীরা আর ভারতের দিকে আসতেই পারবে না আর বি এস এফকেও গুলি চালাতে হবে না,” বলছিলেন ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর মহানির্দেশক ইউ কে বনশল৻
উল্লেখ্য, বিএসএফের দক্ষিন বঙ্গ সীমান্ত অঞ্চলের আট জন সদস্য এক বাংলাদেশী গরু পাচারকারীকে নগ্ন করে অমানুষিক অত্যাচার করছে – এরকম একটি ভিডিও সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে৻ ওই ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে৻ আর তার মধ্যেই ওই একই অঞ্চলে সন্দেহভাজন পাচারকারীদের আক্রমণে এক বি এস এফ সদস্য নিহত হলেন৻
ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/নিউজ ডেস্ক