বদলী আসামী দিয়ে কোর্টে হাজিরা দিয়েও শেষ রক্ষা হলো না এক উপসহকারী কর কমিশনারের। প্রায় ১ যুগ আগে নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলার খুনাই নদী খননের ১১৫ মেট্রিক টন চাল আত্মসাতের ঘটনায় দুদকের দায়ের করা মামলায় ৩ বছরের সাজাঁ প্রাপ্ত ওই উপসহকারী কর কমিশনার ছলচাতুরির আশ্রয় নিয়ে নিজেকে রাখতে চেয়েছিলেন ধরাছোয়ার বাইরে। সাজাঁপ্রাপ্ত আসামী হয়ে বহাল তবিয়তে দীর্ঘসময় সরকারী চাকুরি করে অবশেষে ওই উপসহকারী কর কমিশনার বুধবার দুপুরে রংপুর ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন। গ্রেফতার হওয়া ওই উপ সহকারী কর কমিশনারের নাম হচ্ছে আব্দুর রহমান এবং তিনি বুধবার অবদি সিলেটে কর্মরত ছিলেন।
বুধবার বেলা পৌনে দু’টায় রংপুর আদালতে আত্মসমর্পন করতে আসে দুদকের দায়ের করা চাল আত্মসাতের মামলার প্রধান আসামী আব্দুর রহমান। এসময়েই আদালত এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে রংপুরের ডিবি পুলিশ। দুর্নীতি মামলার সাজা প্রাপ্ত আসামি হওয়ার পরও তিনি নিজেকে আত্মগোপন করে সরকারি চাকুরি করেছেন। তিন বছরে ১৫ লাখ টাকা এবং হাউজিং স্টেট-এ চাকুরি দেয়ার নাম করে আব্দুর রউফ(৫৫) নামের এক ব্যক্তিকে আব্দুর রহমান বানিয়ে জেলে পাঠিয়ে দিয়েছেন। এ ঘটনাটি ৭ জানুয়ারী একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশ হয় অবশেষে আদালতে হাজিরা দিতে এসে ওই প্রতারক আব্দুর রহমান ডিবির হাতে গ্রেফতার হন।
পুলিশ সুত্রে জানা গেছে, নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলার পশ্চিম খকা খড়িবাড়ি এলাকার মৃত হাজী শায়েব আলীর পুত্র আব্দুর রহমান। তিনি ওই এলাকার ইউপি চেয়ারম্যান থাকার সময় ১৯৮৯ সালের ১০ মে খুনাই নদী খনন কাজে ২৪০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ পায়। কিন্তু আব্দুর রহমান ওই খনন কাজে অনিয়ম করে ১১৫ মেট্রিক টন চাল আত্মসাত করেন। ওই ঘটনায় ১৯৯৩ সালের ১৮ আগষ্ট তার নামে দূর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) মামলা হয়। মামলায় ২০০৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর রংপুরের স্পেশাল জজ জিএম সালাউদ্দিন তাকে ৩ বছরের সশ্রম কারাদন্ড ও ৬ লাখ ৬৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন। অনাদায়ে আরো ৬ মাসের কারাদন্ডের আদেশ দেন। আদালতে সাজা হলেও তিনি গ্রেফতার হননি। গ্রেফতার না হওয়ায় দুদুকের পিপি অ্যাডভোকেট শামিমা অক্তার শিরিন রংপুর স্পেশাল জজ আদালতে আবেদন করেন। আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত গত বছরের ১৭ আগষ্ট ওই আব্দুর রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।
পিপি শামিমা আক্তার শিরিন জানান, আব্দুর রহমান সিলেটের সহকারি উপ-কর কমিশনারের চাকরি করছেন। তিনি সিলেট সদর উপজেলার আব্দুর রউফ (৫৫) নামের এক ব্যক্তিকে বছরে ৫ লাখ টাকা এবং তার বড় ছেলেকে হাউজিং স্টেটে চাকরি দেয়ার কথা বলেন। শর্ত ছিল অব্দুর রউফ নামের ব্যক্তিকে আব্দুর রহমান সাজিয়ে আদালতে হাজির করা হবে। কথা অনুযায়ী আব্দুর রউফ আদালতে হাজির হলে তাকে জেলে প্রেরণ করা হয়। বিষয়টি পিপি শামিমা আক্তার শিরিনের সন্দেহ হয়। তিনি খোঁজ খবর নিয়ে প্রকৃত আব্দুর রহমানকে খুঁজে বের করার জন্য স্পেশাল জজ অদালতে গত ৬ ফেব্রুয়ারী আবেদন করেন। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত আগামী ২০ ফেব্রুয়ারী তাকে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন। এর আগেই বিষয়টি ফাসঁ হয়ে গেলে প্রকৃত আব্দুর রহমান বুধবার রংপুর স্পেশাল জজ আদালতে হাজিরা দিতে এলে রংপুর ডিবি পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।
রংপুর ডিবির ভারপ্রাপ্ত ওসি মোস্তাফিজুর রহমান ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম-কে জানান, নিজেকে আড়াল রাখতে আব্দুর রউফকে আব্দুর রহমান সাজিয়ে আদালতে হাজিরা দেয়ার অপরাধে ওই দু’জনই সমান দোষি। তাদের বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা করা হবে।
ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/জহুরুল ইসলাম জহির, রংপুর ॥ ০১৯২৫-৮৫৯৮৫৬