সিঙ্গাপুরে জঙ্গি সন্দেহে গ্রেপ্তার ২৭ বাংলাদেশিডেস্ক নিউজ :: জঙ্গি কর্মকান্ডে জড়িত সন্দেহে সিঙ্গাপুরে কর্মরত ২৭ বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করেছে সেদেশের নিরাপত্তা বাহিনী। তাদের মধ্যে ২৬ জনকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। বুধবার দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এ তথ্য প্রকাশ করে। খবর এএফপির।
বিবৃতিতে বলা হয়, গত বছরের ১৬ নভেম্বর থেকে ১ ডিসেম্বরের মধ্যে ওই ২৭ বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করা হয়। এদের মধ্যে ইতোমধ্যে ২৬ জনকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। অন্যজন বর্তমানে সিঙ্গাপুরের কারাগারে রয়েছেন। জঙ্গিসংশ্লিষ্টতার অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হবে, জানতে পেরে ওই ব্যক্তি সিঙ্গাপুর থেকে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন। তাই তাকে সাজা দিয়ে কারাগারে রাখা হয়েছে। সাজার মেয়াদ শেষ হলে তাকেও বাংলাদেশে পাঠানো হবে।

বিবৃতিতে বলা হয়, আটক বাংলাদেশিরা সিঙ্গাপুরে নির্মাণশ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। তারা আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদা ও ইরাক-সিরিয়ায় সক্রিয় জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) মতাদর্শকে সমর্থন করে সপ্তাহে একবার বৈঠকে মিলিত হতেন। বৈঠকে তারা সশস্ত্র জিহাদ নিয়ে আলোচনা করতেন। দেশে ফিরে কীভাবে সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধ করা যায়, তা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা করতেন তারা। বৈঠক ছাড়াও বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট লোকজনের কাছে অর্থ পাঠিয়েছেন তারা।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, অবশ্য আটক ব্যক্তিরা সিঙ্গাপুরে কোনো হামলার পরিকল্পনা করেননি। তবে সন্ত্রাসের সমর্থনে যে কোনো ধ্বংসাত্মক কাজের বিরুদ্ধে সিঙ্গাপুর সরকার খুব তৎপর। সিঙ্গাপুরে অন্য দেশের নাগরিকরা হচ্ছেন অতিথি। সিঙ্গাপুরে থেকে নিজের দেশের কোনো রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করা তাদের উচিত নয়।
এদিকে ২১ ডিসেম্বর রাজধানীর উত্তরার এক বাসা থেকে ওই ২৬ জনকে হেফাজতে নিয়ে উত্তরা পূর্ব থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা করে ১৪ জনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে বাংলাদেশের পুলিশ।
হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের পর তাদের কারাগারে পাঠানোর জন্য আদালতে তোলা হলে ২৭ ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো বিষয়টি বাংলাদেশের গণমাধ্যমে আসে। তবে ঠিক কী কারণে কবে তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে তা বুধবার সিঙ্গাপুর সরকারের বিবৃতি পাওয়ার আগ পর্যন্ত স্পষ্ট ছিল না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) মারুফ হোসেন সরদার বুধবার বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদের পর ১৪ জনকে কারাগারে রাখা হয়েছে। তাদের বিষয়ে আরো তদন্ত চলছে।’ বাকিদের ক্ষেত্রে অভিযোগের তেমন কোনো তথ্য পাওয়া না গেলেও তাদের নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে।
ওই ১৪ জনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, সিঙ্গাপুরের মোস্তফা নামে একটি মার্কেটের কাছে এক মসজিদে প্রতি সপ্তাহে একদিন তারা একত্রিত হতেন এবং বাংলাদেশে জঙ্গি কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়ে আলোচনা করতেন। সেখানে জিহাদি বক্তব্য প্রচার করে এবং ভিডিও দেখিয়ে অন্যদের জঙ্গি কার্যক্রমে উদ্বুদ্ধ করতেন তারা।
এদের মধ্যে কয়েকজন জিজ্ঞাসাবাদে ধর্মের নামে সশস্ত্র জিহাদ সমর্থন করার কথা স্বীকার করেছেন। কয়েকজন বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যে গিয়ে জিহাদে যোগ দেয়ার কথাও তারা ভাবছেন। আর কয়েকজন বলেছেন, বিভিন্ন স্থানে শিয়া মতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে নৃশংস হামলার ঘটনা তারা সমর্থন করেন, কারণ শিয়ারা ভিন্ন মতাবলম্বী।
এ ছাড়া কীভাবে নিঃশব্দে হত্যা করতে হয় তার নির্দেশনা দিয়ে হাতে অাঁকা ছবিও তাদের কাছে পাওয়া গেছে। এসব ছবি ও ভিডিও সিঙ্গাপুরের গণমাধ্যমগুলো বুধবার প্রকাশও করেছে।
এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বিবিসিকে জানান, এদের মধ্যে ১৭ জনের বিরুদ্ধে সিঙ্গাপুর সরকারের আনা অভিযোগ পুলিশ এখন তদন্ত করে দেখছে। বাদবাকি নয়জনের ভাগ্য সম্পর্কে এখনই কোনো তথ্য জানা সম্ভব হয়নি।
সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মাহবুব-উজ-জামান বিবিসি বাংলাকে বলেন বহিষ্কৃতরা বেশ কিছুদিন ধরে সিঙ্গাপুরের নিরাপত্তা বাহিনীর নজরদারিতে ছিলেন। এদের আটক করার পর বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর প্রশ্নে সিঙ্গাপুর সরকার তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। দেশে ফেরার পর এদের একাংশকে সন্ত্রাস দমন আইনে গ্রেপ্তার করা হয় বলে তিনি জানান।
Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here