পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক আন্তর্জাতিক কমিশন (সিএইচটি কমিশন) এর পার্বত্য এলাকায় সফরকে ঘিরে পাহাড়ে ক্ষোভ অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। উস্কানিমূলক ও সাম্প্রদায়িক কর্মকান্ড পরিচালনা এবং পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করার অপচেষ্টার অভিযোগ এনে পার্বত্য এলাকার বাঙালিদের অধিকার আদায়ে আন্দোলনরত বিভিন্ন সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রামে সিএইচটি কমিশনের সফরের প্রতিবাদ জানিয়েছে। এ সফরের প্রতিবাদে তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে। পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদ আগামী ২৪ নভেম্বর রাঙামাটির বাঘাইছড়ি, নানিয়ারচর ও খাগড়াছড়ির মহালছড়িতে সড়ক অবরোধের ডাক দিয়েছে।

আজ মঙ্গলবার থেকে শনিবার পর্যন্ত সিইচটি কমিশনের সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল তিন পার্বত্য জেলায় বিভিন্ন এলাকা সফর করার কথা রয়েছে। এবারের প্রতিনিধি দলে কমিশনের কো-চেয়ার এডভোকেট সুলতানা কামাল, এলনা স্টামাটুপুলো, সদস্য ব্যারিস্টার সারা হোসেন, ড.স্বপন আদনান, ড.মেঘনা গুহ ঠাকুরতা, উপদেষ্টা জেনেকি আরেন্স এবং সমন্বয়ক হানা শামস আহম্মেদ থাকবেন বলে কমিশনসূত্রে জানা গেছে।

গতকাল সোমবার পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদের রাঙামাটি জেলা কমিটির দপ্তর সম্পাদক মোঃ সোহেল স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে অবরোধের ঘোষণা দেয়া হয়। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিতর্কিত সিএইচটি কমিশনকে পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রতিরোধের ঘোষণা দেয়া হয়।

গতকাল সকালে পার্বত্য চট্টগ্রাম সম-অধিকার আন্দোলন ও গত ১৯ নভেম্বর পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদ রাঙামাটি জেলা শাখার নেতৃবৃন্দ সিইচটি কমিশনের প্রবেশ নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে রাঙামাটি জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি দেয়।গত ১৮ নভেম্বর খাগড়াছড়ি ও ২০নভেম্বর বান্দরবানের পার্বত্য বাঙালি ছাত্রপরিষদ এ সফরের প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে।

এক প্রতিক্রিয়ায় সম-অধিকর আন্দোলনের রাঙামাটি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আবছার আলী বলেন, সিএইচটি কমিশন মূলত পার্বত্য এলাকা তথা দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তিনি আশঙ্কা করে বলেন, এ কমিশন যতবার পার্বত্য এলাকায় সফর করেছে ততবার এখানে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটেছে। কমিশন পার্বত্য এলাকার সন্ত্রাসীদের উস্কানি দিচ্ছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।

তবে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিষয়টির প্রতি কড়া নজর রেখেছেন। এখনো আইনশৃঙ্খলা নিয়ে কোন প্রকার আশঙ্কা করছেন না প্রশাসন। রাঙামাটি জেলা প্রশাসক সৌরেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী এ ব্যাপারে প্রতিবেদককে বলেন সিএইচটি কমিশিন সরকারের অনুমতি নিয়ে পার্বত্য এলাকায় সফর করছেন, তারা এখানে তাদের মতো বিভিন্ন মতবিনিময় ও এলাকা পরিদর্শন করবেন। কিছু সংগঠন কমিশনের সফরের লিখিতভাবে প্রতিবাদ জানিয়েছেন, আমরা তা সরকারের উচ্চ মহলে পাঠিয়েছি। কমিশনের সফরের পরবর্তিতে অবস্থা জানা যাবে।

রাঙামাটি পুলিশ সুপার মাসুদ-উল হাসান জানান, সিএইচটি কমিশন সরকারকে অবগত করে সফর করছে, আইনশৃঙ্খলা নিয়ে কোনো প্রকার সমস্যা নেই বলে তিনি দাবি করেন।

এদিকে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপার সিএইচটি কমিশনের সফর সম্পর্কে অবগত নন বলে এ প্রতিবেদককে জানান। এ ব্যাপারে সিএইচটি কমিশনের বাংলাদেশ সেক্রটারিয়েট এর সম্বয়কারী হানা সামস আহমেদের সাথে যোগাযোগ করা হলে বলেন, আমরা মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট সকলকে অবগত করেছি। সফর নিয়ে কারো কারো প্রতিবাদের কথা আমরা শুনেছি। তিনি এ ব্যাপারে আর কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।

পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশন ১৯৯০ সালে বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত একটি সংস্থা, যারা নিয়মিতভাবে পার্বত্য পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে থাকেন। কয়েকজন বিদেশি এবং দেশি বুদ্ধিজীবি এই সংস্থার  সাথে জড়িত আছেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম ইস্যুতে বিভিন্নসময় এই প্রতিষ্ঠানের পর্যবেক্ষণ এবং প্রতিবেদন বিভিন্নমহল থেকে আলোচিত এবং সমালোচিত হয়েছে। পাহাড়ি অধিকারভিত্তিক সংগঠনগুলো এই কমিশনের কার্যক্রমকে সহযোগিতা করলেও বিদেশি সহায়তায় পরিচালিত এই সংস্থাটির কার্যক্রম বরাবরেই সন্দেহের চোখে দেখে আসছে পাহাড়ের বাঙালি ভিত্তিক সংগঠনগুলো।

এবারে পার্বত্য এলাকায় এ কমিশনের ৬ষ্ঠ সফর। এর আগে বিভিন্ন সময়ে সিএইচটি কমিশনের সফরকে ঘিরে পার্বত্য এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। ২০০৮ সালে রাঙামাটির বাঘাইহাটে এ কমিশন সফর করে যাবার একদিন পর পাহাড়ি-বাঙালির দাঙ্গায় একজন নিহত হয়। এর পর ২০১০ সালে ১৭ ফেব্র“য়ারি আবারো বাঘাইহাটে কমিশনের সফরের পর ঐ এলাকায় পাহাড়ি-বাঙালীর মাঝে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়ে পাল্টা-পাল্টি অগ্নি সংযোগের ঘটনা ঘটে। কয়েক দিনের সংঘর্ষে ঐ সময় কয়েকজন নিহত হয়।

ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/আলমগীর মানিক/রাঙ্গামাটি

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here