নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য অনুসন্ধান কমিটির (সার্চ কমিটি) কাছে ৫ জনের নাম জমা দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
এছাড়া জাসদ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় পার্টি (জেপি), গণতন্ত্রী পার্টি ও বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন অনুসন্ধান কমিটির কাছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দিতে পৃথকভাবে নাম পাঠিয়েছে।
এ নিয়ে বৃহস্পতিবার বিকালে অনুসন্ধান কমিটির সভা হয়। সভা শেষে কমিটির সাচিবিক দায়িত্ব পালনকারী মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইয়া বলেন, সভায় নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য প্রাথমিকভাবে নামের একটি তালিকা করা হয়। তালিকাটি আগামী সোমবার কমিটির পরবর্তী সভায় তা চূড়ান্ত করে সুপারিশ করা হতে পারে।
সরকারের উচ্চপর্যায়ের এক সূত্র জানায়, অনুসন্ধান কমিটি ৭ ফেব্রুয়ারি সিইসি ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য প্রতিটি পদের জন্য ২ জনের নাম সুপারিশ করে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাবে।
রাষ্ট্রপতির সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম জানান, অনুসন্ধান কমিটির সুপারিশ পাওয়ার পর রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন। এতে খুব বেশি সময় নেয়া হবে না।
এর আগে অনুসন্ধান কমিটি সিইসিসহ নির্বাচন কমিশনারের প্রতিটি পদে দুটি করে নাম পাঠানোর জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে অনুরোধ করেছিল।
নাম প্রস্তাব করেনি বেশিরভাগ দল :
নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে ২৩টি রাজনৈতিক দল অংশ নিয়েছিল। এর মধ্যে প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ ১৭টি দলই নতুন কমিশন গঠনের জন্য কোনো নামের প্রস্তাব পাঠায়নি। এমনকি মহাজোট সরকারের শরিক জাতীয় পার্টিও (জাপা) নাম পাঠায়নি।
জানতে চাইলে জাপার চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ বলেন, আমাদের দেয়া নাম হয়তো গ্রহণযোগ্য নাও হতে পারে, তাই পাঠাইনি। তার মতে, নির্বাচন কমিশন গঠনে বিতর্কের ঊর্ধ্বে ওঠা কঠিন। ধারণা করি, এবারো সমস্যা হতে পারে। তবে আমরা মেনে নেব।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মনজুরুল আহসান খান বলেন, সব রাজনৈতিক দল এ ক্ষেত্রে আন্তরিকতা না দেখানোয় সিপিবি কারো নাম প্রস্তাব করেনি।
এর আগে বিএনপি রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে অংশ নিলেও নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে কোনো কথা বলেনি। দলটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে সৃষ্ট সমস্যা আগে সমাধানের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে দাবি জানায়।
অনুসন্ধান কমিটির সদস্যরা আওয়ামী ঘরানার মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার বলেন, সরকার নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে ছলচাতুরীর আশ্রয় নিয়েছে। তার মতে, দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচন হলে নির্বাচন কমিশন শতভাগ নিরপেক্ষ হয়েও অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবে না। তাই তত্ত্বাবধায়ক সরকার সম্পর্কে আগে সিদ্ধান্ত না নিয়ে নির্বাচন কমিশনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া যথাযথ হবে না।
আওয়ামী লীগ প্রস্তাবিত ৫টি নাম :
দলীয় সূত্র জানায়, গত ৩১ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের স্বাক্ষর করা এক চিঠিতে নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য ৫ জনের নাম অনুসন্ধান কমিটিতে পাঠানো হয়। এ তালিকায় বর্তমান সিইসি এ টি এম শামসুল হুদার নামও আছে। বাকি ৪ জনের মধ্যে একজন নারী ও ৩ জন সাবেক আমলা বলে জানা গেছে।
কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী এবং প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রশাসন বিষয়ক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম ৫ জনের নামের তালিকা পাঠানোর কথা স্বীকার করেন।
এছাড়া জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) প্রস্তাবে একজন সাবেক সচিব, একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা ও একজন নারীর নাম রয়েছে বলেও একটি সূত্র জানিয়েছে।
একাংশের মত নিয়ে ইসি গঠন হলে বিতর্ক থেকে যাবে :
এদিকে রাজনৈতিক দলগুলোর একাংশের মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন হলে তা নিয়ে আবারো বিতর্ক উঠবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। তারা মনে করেন, ৬টি দলের প্রস্তাবের বাইরেও নতুন কারো নাম রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাতে পারে অনুসন্ধান কমিটি। তাই কমিটি গ্রহণযোগ্য কারো নাম প্রস্তাব করে পাঠায় কি না, তা দেখার অপেক্ষায় আছেন পর্যবেক্ষকরা।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আকবর আলি খান বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠন একদিকে সহজ, অন্যদিকে কঠিন। সরকার চাইলে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করতে পারে। যদি সেটা করে, তাহলে কোনো বিতর্ক হবে না। তিনি বলেন, অনুসন্ধান কমিটি কাজটা যথাযথ করতে পারবে কি না, জানি না। আমরা দেখতে চাই, তারা কি করেন।
এদিকে আগামী রোববার বর্তমান সিইসি এ টি এম শামসুল হুদা ও নির্বাচন কমিশনার ছহুল হোসাইনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। ১৪ ফেব্রুয়ারি অন্য নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেনের মেয়াদ শেষ হবে।
ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/স্টাফ রিপোর্টার