দক্ষিণ এশিয়ায় ‘সেতুবন্ধন’ অর্থবহ করে তুলতে বিধি-নিষেধ শিথিল করে জনগণ ও শ্রমিকের অবাধ চলাচলের প্রস্তাব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, একই কৃষ্টি ও সংস্কৃতির ধারক এ অঞ্চলের দেশগুলো একে অন্যের পরিবারের মতো। তাই এখানে জনগণের অবাধ চলাচল প্রয়োজন।

পাশাপাশি, বিশ্বের অন্যতম শ্রমিক রপ্তানিকারক অঞ্চল হিসেবে শ্রমিকের স্বার্থ সুরক্ষায় সার্ক দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা গড়ে তোলার প্রস্তাব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

বৃহস্পতিবার ১৭তম সার্ক শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে বক্তৃতায় এসব প্রস্তাব দেন শেখ হাসিনা।

মালদ্বীপের আদ্দু দ্বীপপুঞ্জের রাজধানী হিথাধুর ইকুয়েটোরিয়াল কনভেনশন সেন্টারের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য দেন।

শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে, যোগাযোগব্যবস্থা সম্প্রসারণ, বাণিজ্য বাড়াতে এক দেশের জন্য অন্য দেশের বাজার সম্প্রসারণ, পর্যটনের বিকাশ, সন্ত্রাসবাদ দমন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং খাদ্যনিরাপত্তার প্রসঙ্গে সহযোগিতা বাড়ানোর কথা বলেন।

তিনি বলেন, এ অঞ্চলের মানুষের চলাচল বর্তমানে বাণিজ্য, চিকিত্সা আর শিক্ষার কারণেই ঘটছে। পারস্পরিক আস্থা, শ্রদ্ধা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ওপর ভিত্তি করেই এ অঞ্চলের জনগণের অবাধ চলাচল নিশ্চিত করতে এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাতায়াতের ওপর বিধি-নিষেধ শিথিল করা উচিত।

পানিসম্পদ খাতে সহযোগিতা প্রসঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘হিমালয়ের পূর্বাঞ্চলে যেসব অভিন্ন নদী আছে, তার পানিসম্পদ নিয়ে আমাদের মাঝে সহযোগিতা গড়ে তোলাটা জরুরি। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় উদ্যোগ নিলেও আমরা গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র নদী অববাহিকায় প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতার প্রস্তাব করছি। আমাদের বিশ্বাস, এর ফলে আমরা এ অঞ্চলের ১০০ কোটিরও বেশি মানুষের কল্যাণে প্রতিটি নদী অববাহিকায় সমন্বিত উন্নয়ন ও পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনার সুযোগ পাব।’

শেখ হাসিনা এ অঞ্চলের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে যোগাযোগব্যবস্থা সম্প্রসারণের গুরুত্ব অপরিসীম বলে মন্তব্য করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এ উদ্যোগের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে গত সার্ক শীর্ষ সম্মেলন থেকেই আমরা সার্ক আঞ্চলিক রেল চুক্তি বাস্তবায়ন চূড়ান্ত করার বিষয়ে অগ্রগতি হয়েছে এমনটা দেখার প্রত্যাশায় করেছিলাম। এরই প্রাথমিক অংশ হিসেবে বাংলাদেশ বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চট্টগ্রাম থেকে নেপাল পর্যন্ত পণ্যবাহী ট্রেন চলাচলের সুযোগ করে দিয়েছে।’

জলবায়ু পরিবর্তনে এ অঞ্চলের দেশগুলো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের দরুন দারিদ্র্য বিমোচনে অগ্রগতি, সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য (এমডিজি) ও সার্ক উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জন ব্যাহত হচ্ছে।

তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় মৌসুমি বায়ু, পর্বত, সামুদ্রিক ও উপকূলীয় অঞ্চল-বিষয়ক কনভেনশনগুলো খুব দ্রুত বাস্তবায়নের তাগিদ দেন।

শেখ হাসিনা কৃষিকে এখনো এ অঞ্চলের মূল চালিকা শক্তি হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, গত সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশ বীজ ভান্ডার গড়ার যে প্রস্তাব রেখেছে, সে অনুযায়ী এবার সার্ক বীজ ভান্ডারের চুক্তি সই হতে যাচ্ছে বলে সন্তোষ প্রকাশ করেন।

খাদ্যনিরাপত্তা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্বল্প মেয়াদে এ অঞ্চলের দেশগুলোর খাদ্যসংকট দূর করতে এটি যে একটি অনন্য উদ্যোগ, তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। এটি চালু হলেও এখনো তা পুরোপুরি কার্যকর হয়নি। এটি কার্যকর করতে যেসব বাধা আছে দ্রুত দূর করতে হবে, যাতে করে সদস্য দেশগুলো তাদের মজুদ কাজে লাগানো শুরু করতে পারে।’

দারিদ্র্য ও সন্ত্রাস মোকাবেলায় সার্ক দেশগুলোর একসাথে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, দারিদ্র্য ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে একই সঙ্গে লড়াই করার ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে সার্ক। আমাদের সামাজিক বিন্যাস আর উন্নয়ন বারবার এসব চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করছে। আমরা এ অঞ্চল থেকে দারিদ্র্য দূর করতে বদ্ধপরিকর। পাশাপাশি সন্ত্রাসবাদকে পরাজিত করতে আমাদের দ্বিগুণ প্রয়াস চালাতে হবে।

ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/ডেস্ক রিপোর্ট

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here