বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) জাতীয় সমাবেশ থেকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারকে জঙ্গি-সাম্প্রদায়িক শক্তি সম্পর্কে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেছেন, জঙ্গি-সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থানে দেশের সামনে মহাবিপদের আশঙ্কা রয়েছে। এই মহাবিপদ ঠেকাতেই হবে। জামায়াত- শিবিরসহ জঙ্গি সাম্প্রদায়িক শক্তিকে এই মহাবিপদ আখ্যায়িত করে সিপিবি নেতৃবৃন্দ বলেন, মার্কিন-সৌদি টাকায় এই শক্তি ষড়যন্ত্রের ছোবল হানতে উদ্যত। শুক্রবার দুপুরে মৎস্য ভবনের সমানের সড়কে সিপিবি জাতীয় সমাবেশে নেতৃবৃন্দ এ সব কথা বলেন।
সমাবেশ থেকে সিপিবি নেতৃব্ন্দৃ মহাজোট সরকারের ব্যর্থতার দিকগুলো তুলে ধরে কড়া সমালোচনা করেন। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মেরুকরণের বাইরে বাম-গণতান্ত্রিক বিকল্প শক্তির সমাবেশ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
নেতৃবৃন্দ আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্য করে বলেন, বিএনপির বিরুদ্ধে আপনাদের গদির লড়াই থাকলেও স্বাধীনতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধী উগ্রসাম্প্রদায়িক শক্তির মহাবিপদকে প্রধান টার্গেট করে রাজনৈতিক কৌশল নিতে হবে।
সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে সিপিবির সভাপতি মনজুরুল আহসান খান বলেন, ‘দেশ আজ তিন শত্রুর কবলে। এই তিন শত্রু হচ্ছে-সাম্রাজ্যবাদ, মৌলবাদ ও লুটপাটতন্ত্র। গরিব-মেহনতি মানুষের জোটই পারে এই তিন শত্রুকে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দিতে।
তিনি বলেন, ‘দেশ আজ খাই খাই, লুটপাট, দুর্নীতি দখলের কবলে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের কাছে জনগণের যে প্রত্যাশা ছিল, তা ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। লুটপাট, দুর্নীতি, দুঃসশাসন ও জনজীবনের সঙ্কট দূর করতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে।
সিপিবি সভাপতি আরো বলেন, ‘বিরোধী দল বিএনপির ঘাড়ে জামায়াতের ভূত। জামায়াত জঙ্গিদের নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। গণতান্ত্রিক ধারা নস্যাৎ করতে তারা নানামুখী ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তে লিপ্ত। এই অবস্থায় দেশে একটি বামবিকল্পের বিকল্প নেই। সঙ্কটের মৌলিক সমাধানের জন্য সকল বাম ও গণতান্ত্রিক শক্তি ঐক্যবদ্ধ হোন। সেই সঙ্গে স্বাধীনতা বিরোধী সাম্প্রদায়িক যুদ্ধাপরাধী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যার যার অবস্থাএন থেকে ঐক্যবদ্ধ গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলন।
সম্প্রতি সেনা বাহিনীতে অভ্যুত্থান চেষ্টা প্রসঙ্গে মনজুর বলেন, ‘অতীতে সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করে রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করা হয়েছে। দু’জন রাষ্ট্রপতি, জাতীয় নেতৃবৃন্দসহ অনেককে নিমর্মভাবে হত্যা করা হয়েছে। একের পর এক ক্যু পাল্টা ক্যুর ফলে বহু সেনা সদস্য অকালে জীবন হারিয়েছেন, চাকরি হারিয়েছেন। দেশের মানুষ আর এসব দেখতে চায় না। দেশের মানুষ চায় মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা সেনাবাহিনী দেশের প্রতিরক্ষার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করুক।
তিনি বলেন, ‘ভারত আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাশে ছিল। প্রতিবেশী সকল দেশের সাথে, সার্কভূক্ত দেশগুলির সাথে আমরা বন্ধুত চাই। তবে কাটাতারের বেড়ার বন্ধুত্ব নয়। সীমান্তে অব্যাহত হত্যাকাণ্ড নয়। তিস্তা ফারাক্কা, টিপাই মুখ বা অন্যান্য স্থানে অভিন্ন নদীর উপর একতরফা নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা নয়।’
দুপুর পৌনে তিনটায় এ সমাবেশ শুরু হয়। সমাবেশে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে সিপিবির হাজার হাজার নেতাকর্মী অংশ নেন। সমাজতন্ত্রের সংগ্রাম চলছে, চলবে, দুনিয়ার মজদুর এক হও-স্লোগান দিয়ে কাস্তে-হাতুড়ি খচিত লাল পতাকা উপড়িয়ে কর্মীরা সমাবেশ স্থলে সমবেত হয়।
সিপিবির সভাপতি মনজুরুল আহসান খানের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সিপিবির বর্ষিয়ান নেতা জসীম উদ্দিন মণ্ডল, সহ-সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবু জাফর আহমদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রখ্যাত শ্রমিক নেতা সহিদুল্লাহ চৌধুরী, হায়দার আকবর খান রণো, শাসছুজ্জামান সেলিম, সাজ্জাদ জহির চন্দন, লক্ষ্মী চক্রবর্তী, অ্যাডভোকেট মণ্টু ঘোষ, আহসান হাবিব লাভলু, যুব ইউনিয়নের সভাপতি কাফি রতন, ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি ফেরদৌস আহমদ উজ্জ্বল প্রমুখ।
সমাবেশ পরিচালনা করেন সভা পরিচালনা করেন কেন্দ্রিয় কমিটির সদস্য রুহিন হোসেন প্রিন্স।
সমাবেশ শেষে একটি বিশাল লাল পতাকা মিছিল রাজধানীর শাহাবাগ, সাইন্সল্যাব, নিউ মার্কেট, টিএসসি হয়ে শহীদ মিনারে শেষ হয়।
সমাবেশে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘আওয়ামী-বিএনপি ও মৌলবাদী শক্তি এবং ওয়ান ইলাভেনের শক্তির কাছ থেকে দেশকে মুক্ত করতে হবে। তবে প্রথম কাজ হলো ‘মহাবিপদকে’ ঠেকাতে হবে। সাথে সাথে আপদ, বিপদ ও ওয়ান-ইলেভেনের ফরর্মুলায় যে শক্তি এই তিন শক্তির বলয় থেকে দেশকে উদ্ধার করতে হবে। সে কাজটি করতে হবে দেশের বামপন্থী-গণতান্ত্রিক শক্তিকেই। এ ধরনের বাম-গণতান্ত্রিক বিকল্প রাজনৈতিক বলয় গড়ে তোলাটা হলো পরিত্রাণের একমাত্র উপায়।’
মহাজোট সরকারের ৩ বছরের শাসনকালের বিভিন্ন দিক উল্লেখ করে সেলিম বলেন, ‘তপ্ত কড়াইয়ের অসহনীয় উত্তাপে জীবন আজ অসহনীয়! ফুটন্ত কড়াইয়ের উত্তাপ থেকে তারা আজ পরিত্রাণ চায়। বিএনপি-জামাত উদ্ধার কর্তার মুখোশ পরে হাজির হয়েছে। মহাজোট যদি ফুটন্ত কড়াই হয় তাহলে বিএনপি-জামাত জ্বলন্ত চুলা। বিএনপি-জামাতের দুশাসনের কথা দেশবাসী ভুলে যায়নি।’
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতার কথা তুলে ধরে বলেন, ‘দ্রব্যমূল্য বেড়েছে, মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমেছে। ডাবল ডিজিটের ঘরে মুল্যস্ফীতি, অথচ মানুষের আয় এক জায়গায় স্থির হয়ে আছে। এই সমস্যা সমাধান করা সম্ভব।
তিনি বামপন্থীদের ঐক্যের ডাক দিয়ে বলেন, ‘আমাদের আহ্বান ঘরে ঘরে বিকল্প শক্তির দুর্গ গড়ে তুলুন।
ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/স্টাফ রিপোর্টার