মোঃ আজিজুর রহমান ভূঁঞা বাবুল, ময়মনসিংহ ব্যুরো ::

ময়মনসিংহের সাদা মনের মানুষ কিংবদন্তি রাজনীতিক, সাবেক ধর্মমন্ত্রী, ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ মতিউর রহমান (৮১) আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। রোববার (২৭ আগস্ট) রাত ১১টার দিকে নগরীর ধোপাখোলা নেক্সাস কার্ডিয়াক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

এদিকে সাবেক ধর্মমন্ত্রীর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে হাজারো নেতাকর্মী, বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী ও সব শ্রেণিপেশার মানুষ হাসপাতালে ভিড় জমান। এ সময় সেখানে এক শোকাবহ পরিবেশের সৃষ্টি হয়। বর্ষীয়ান এ নেতার মৃত্যুর খবরে হাসপাতালে ছুটে এসেছেন ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ইকরামুল হক টিটু, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামুল আলম, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইউসুফ খান পাঠানসহ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতারা। প্রবীণ সমাজ সেবক ও রাজনীতিবিদ অধ্যক্ষ মতিউর রহমান ১৯৪২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহ সদরের আকুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম আবদুর রেজ্জাক এবং মায়ের নাম মেহেরুন্নেসা খাতুন।

বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অবিচল থেকে পথ চলতে অভ্যস্ত এ প্রবীণ রাজনীতিক আকুয়া মডেল প্রাইমারি স্কুল থেকে ১৯৫৩ সালে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেন। এসময় তিনি বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলায় প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় প্রথমস্থান অধিকার করেন। ১৯৫৪ সালে ময়মনসিংহ জেলা স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হন এবং সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত লেখা পড়া করেন। এরপর তিনি নকলা উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে নবম ও দশম শ্রেণি পর্যন্ত ময়মনসিংহের মৃত্যুঞ্জয় স্কুলে পড়াশুনা করেন এবং ১৯৫৮ সালে
মেট্রিকুলেশন পরীক্ষায় কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন। ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজ থেকে ১৯৬১ সালে বিজ্ঞান বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করেন।

এরপর ১৯৬৪ সালে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএসসি পাস করেন। এ সময় তিনি গফরগাঁও থানার পাঁচবাগ উচ্চ বিদ্যালয়ে এবং মনোহরদি হাতিরদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে বিএসসি শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ১৯৬৬ সালে তিনি ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাণিবিদ্যা বিভাগে ভর্তি হয়ে ১৯৬৭ সালে এমএসসি সম্পন্ন করেন। এমএসসি পাসের পর তিনি জামালপুর জেলার নান্দিনা কলেজ এবং ময়মনসিংহের নাসিরাবাদ কলেজে প্রাণিবিদ্যার শিক্ষক হিসেবে চাকরি করেন। তিনি স্বল্পকালীন ময়মনসিংহ কলেজেও শিক্ষকতা করেন।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সাবেক সদস্য, উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য অধ্যক্ষ মতিউর রহমান ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ছিলেন। তিনি ২০১৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছিলেন তিনি। মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের ঢালু যুব শিবিরের ইনচার্জ ছিলেন। ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর ময়মনসিংহ পাক-হানাদার মুক্ত হওয়ার দিনে শহরের সার্কিট হাউজ মাঠে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন অধ্যক্ষ মতিউর রহমান। অর্থাৎ তাঁর নেতৃত্বেই ১০ ডিসেম্বর ময়মনসিংহ হানাদারমুক্ত হয়। মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২২ সালে একুশে পদক পান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও সামরিক স্বৈরাচারবিরোধী সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অন্যতম এ নেতা।

ময়মনসিংহের মাটি ও মানুষের নেতা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিলেন অধ্যক্ষ মতিউর রহমান। তিনি ২০১৪ সালের নির্বাচনে মহাজোটের কাছে আসন ছাড়ার উপহার হিসেবে আওয়ামী লীগ সরকারের সে মেয়াদে ধর্মমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। এর আগে তিনি
ময়মনসিংহ সদর আসন থেকে ১৯৮৬ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
অধ্যক্ষ মতিউর রহমান ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত দুই মেয়াদে দীর্ঘ ২৩ মাস কারাবরণ করেন। তিনি ২০০২ সালে ময়মনসিংহের চারটি সিনেমা হলে বোমা হামলার মামলায় কারাবরণ করেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে অকৃত্রিম অবদানের জন্য অধ্যক্ষ মতিউর রহমান ‘মুজিব দর্শন বাস্তবায়ন পরিষদ’ কর্তৃক ২০০০ সালে ‘বঙ্গবন্ধু পদক’
লাভ করেন।

আজ সোমবার (২৮ আগষ্ট) আসর নামাজ বাদ ময়মনসিংহের আঞ্জুমান ঈদগাঁ মাঠে বর্ষিয়ান এ রাজনীতিবিদের জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here